উনিশ শতকের প্রথমার্ধে সংঘঠিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আন্দোলন ছিলো - ফরাজি আন্দোলন ও ওয়াহাবি আন্দোলন। দুটি আন্দোলনের মধ্যে যেমন কিছু সাদৃশ্য দেখা যায়, তেমনি একাধিক বৈসাদৃশ্যও দেখা যায়।
ওয়াহাবি ও ফরাজি আন্দোলনের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য |
ফরাজি আন্দোলন শুরু হয়েছিলো ১৮১৮ খ্রিঃ। হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ ও তাঁর পুত্র মহম্মদ মহসিনের নেতৃত্বে বাংলাদেশে এই আন্দোলন সংগঠিত হয়। অন্যদিকে ফরাজি আন্দোলনের কিছু পরে ১৮২২ খ্রিঃ ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু হয়। ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতাদের মধ্যে ছিলেন - সৈয়দ আহমেদ ব্রেলভি ও তিতুমির।
অর্থাৎ ফরাজি আন্দোলন ওয়াহাবি আন্দোলন থেকে অনেক আগে শুরু হয়েছিলো এবং তা ওয়াহাবি আন্দোলনের থেকেও (১৮২২ - ১৮৮৫) অনেক বেশিদিন পর্যন্ত (১৮১৮ - ১৯০৬) চলেছিলো। ওয়াহাবি আন্দোলন চলেছিলো প্রায় ৬০ বছর। কিন্তু ফরাজি আন্দোলন চলে সুদীর্ঘ ৮০ বছর ধরে।
দুটি আন্দোলনই নিন্মবর্গের দরিদ্র মুসলিম কৃষক সম্প্রদায়কে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করেছিলো। তবে রক্ষনশীল মুসলিম সমাজের কেউ কেউ ওয়াহাবি ও ফরাজি দুটি আন্দোলনের কোনটিকেই সেভাবে সমর্থন করেন নি। এর দুটো কারন ছিলো - (১.) এইসব রক্ষনশীল মুসলিমদের অনেকেই হিন্দু মুসলিম সমন্বয়ী সংস্কৃতির সমর্থক ছিলেন। (২.) ওয়াহাবি ও ফরাজিদের ধর্মীয় জীবনধারা ও দর্শন রক্ষনশীল মুসলিম সমাজের জীবন ধারার পরিপন্থী ছিলো।
ওয়াহাবি ও ফরাজি আন্দোলন ইসলামের সংস্কারবাদী আন্দোলন হলেও, এই আন্দোলনের সমর্থক ও আন্দোলনকারীদের প্রায় সকলে কৃষক সম্প্রদায়ের হওয়ায় দুটি আন্দোলনই আসলে ছিলো ধর্মীয় ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত দুটি কৃষক আন্দোলন।
এছাড়াও এই দুই আন্দোলনের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে যেসব সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য দেখা যায়, তা হল -
ওয়াহাবি ও ফরাজি আন্দোলনের মধ্যে মিল
- ওয়াহাবি ও ফরাজি দুটিই ছিলো ইসলামের সংস্কারবাদী আন্দোলন।
- দুটি আন্দোলনেরই মূল উদ্দেশ্য ছিলো ইসলামের মধ্যে অমুসলিম প্রথা ও আচার অনুষ্ঠান গুলি দূর করে ইসলামকে বিশুদ্ধ ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা।
- দুটি আন্দোলন ছিলো জমিদার বিরোধী অর্থাৎ সামন্ততন্ত্রের বিরোধী।