অতীত পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অর্থাৎ হারিয়ে যাওয়া অতীতকে পুনরুদ্ধার করে সংগঠিত করবার ক্ষেত্রে "মিউজিয়াম" বা "জাদুঘর" খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এ ক্ষেত্রে মিউজিয়ামের ভূমিকার প্রধান দিক গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে তুলে ধরতে পারি -
ভারতের একটি মিউজিয়ামের ভিতরের চিত্র |
(১.) ইতিহাসের উপাদানকে রক্ষা করা
ইতিহাস লেখা হয় উপাদানের সাহায্যে। ইতিহাস রচনার সরকারি নথিপত্র গুলি যেমন মহাফেজখানাতে সংরক্ষিত হয়। তেমনই পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলি সংরক্ষিত হয় মিউজিয়াম বা জাদুঘরে।
দেশ বিদেশ থেকে পুরাতাত্ত্বিক বিভিন্ন নিদর্শন গুলি অনুসন্ধান ও সংগ্রহ করে এবং তার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মধ্য দিয়ে মিউজিয়াম ইতিহাসের উপাদান গুলিকে চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
এই ভাবে মিউজিয়াম ইতিহাসের উপাদান গুলিকে সংরক্ষণ করে। পরবর্তীকালে এই সব সংরক্ষিত উপাদান গুলি অতীত পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
(২.) পুরাবস্তুর ব্যাখ্যা ও গবেষনা
মিউজিয়াম শুধু পুরাবস্তু সংগ্রহ করে রাখে না। সেগুলির যথাযথ ব্যাখ্যা দিয়ে প্রদর্শনও করে থাকে। সেগুলি দর্শন করার মধ্য দিয়ে আমরা অতীতে ফিরে যেতে পারি।
এছাড়া, মিউজিয়ামে সংরক্ষিত পুরাবস্তু গুলি ঐতিহাসিকদের ইতিহাস গবেষনাতেও সাহায্য করে থাকে। অনেক সময় মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ নতুন কোন পুরাবস্তুর খোঁজ পেলে তার ঐতিহাসিক মূল্য নির্ধারণের জন্য নিজে উদ্যোগী হয়ে গবেষকদের নিয়োগ করেন। এর ফলে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে নতুন তথ্য উঠে আসে, যা অতীত রচনার ক্ষেত্রে এক নতুন সূত্রের সন্ধান দেয়।
(৩.) অতীত ও ঐতিহ্যের পুনর্গঠন
প্রতিটি সমাজই তার অতীত ও ঐতিহ্যকে জানতে চায়। কিন্তু অতীত সম্পর্কে অনেক বিষয়ে নীরবতা, বিচ্ছিন্নতা বা অনেক কিছুর অনুপস্থিতি মানুষকে অসুবিধায় ফেলে। এই অসুবিধা দূর করতে সাহায্য করে মিউজিয়াম।
মিউজিয়ামে সংরক্ষিত অতীতের নানা নিদর্শন গুলি থেকে মানুষ তার অতীত ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে পারে। পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন আর কল্পনাশক্তির সংমিশ্রনে মানুষ তার অতীতকে নতুন করে পুনর্গঠন করতে পারে।
(৪.) সংস্কৃতির সংরক্ষক
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সামাজিক অভ্যাস, রীতি নীতি ও সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে অতীতের সমাজ ও সংস্কৃতির অনেকটাই হারিয়ে যায় অথবা তাকে জানা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
মিউজিয়াম গুলি মানুষের সামাজিক অভ্যাস ও সংস্কৃতির ধারার সঙ্গে যুক্ত নিদর্শন গুলিকে সংরক্ষণ করে রাখে। অতীতের গৃহনির্মান, শিল্প স্থাপত্য, গান বাজনার নানা বাদ্যযন্ত্র, পাথর বা ধাতুর তৈরি গৃহস্থলির নানা বাসনপত্র, সাজ পোশাকের নানা উপকরন ইত্যাদির সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের মাধ্যমে মিউজিয়াম অতীতের সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করে থাকে।
মিউজিয়ামে সংগৃহীত এইসব সাংস্কৃতিক নিদর্শন গুলি থেকে যে কোন জাতির "সাংস্কৃতিক অতীত ও তার বিবর্তন" সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
(৫.) অতীতকে মূর্ত করে তোলা
সমাজবিজ্ঞানের বিষয় হিসাবে ইতিহাসের বিষয় বস্তুকে বাস্তব ও জীবন্ত করে তোলা খুবই কঠিন একটি কাজ। মিউজিয়াম এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক থেকে ইতিহাসকে "মূর্ত ও জীবন্ত" করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন -
- মিউজিয়ামে ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে বর্নীত ঐতিহাসিক ঘটনা গুলির বাস্তব নিদর্শন দেখে আমরা অতীতের সঙ্গে বাস্তবের সংযোগ স্থাপন করতে পারি। ফলে ইতিহাস আমাদের কাছে অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠে।
- ইতিহাস বিজড়িত স্থান বা মিউজিয়ামে পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে খুব সহজেই অতীতকে মূর্ত করে তোলা যায়, আবার
- অনেক সময় মিউজিয়ামের ভিতরে ইতিহাসের নানা ঘটনা বা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নকল মডেল তৈরি করেও অতীতকে মূর্ত করে তোলার চেষ্টা করা হয়।
(৬.) অতীত অনুসন্ধানে প্রেরনাদান
- মিউজিয়ামের পুরাবস্তু গুলির সংক্ষিপ্ত তথ্য ও বর্ননা দর্শকদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অতীত অনুসন্ধানে তাদের আরোও উৎসাহিত করে তোলে। এবং
- অতীত ও ঐতিহ্য সম্পর্কে তাদের সচেতনতাবোধের জাগরন ঘটায়।