শিল্পচর্চার একটি অন্যতম ভাগ হলো - নৃত্যকলা।
নৃত্যের ইতিহাস চর্চা |
নৃত্যের সংজ্ঞা
মানুষের মনের অনুভূতি বিভিন্ন দৈহিক ভঙ্গিতে বা মুদ্রায় উপস্থাপনের নামই হলো নৃত্য।
নৃত্যের বৈশিষ্ট্য
শিল্পকলা হিসাবে নৃত্যের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন -
- নৃত্য মানুষের একটি প্রাগৈতিহাসিক কলা।
- নৃত্য মানুষের নান্দনিকতা ও অনুভূতির প্রকাশ মাধ্যম।
- নৃত্য সমস্ত জনগোষ্ঠীর কাছেই সংস্কৃতি চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
- আদিমকাল থেকেই মানুষের আনন্দ প্রকাশ এবং বিনোদনের একটি প্রধান দিক ছিলো নৃত্য।
- পৃথিবীর সব জনগোষ্ঠীর নৃত্যের ভঙ্গিমার মধ্যেই একটি বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়।
- প্রতিটি জনগোষ্ঠীর নৃত্যকলার সাথেই যুক্ত থাকে একটি পৃথক ও স্বতন্ত্র সাজপোশাক।
- বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নৃত্যকে ৪ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
- ধ্রুপদী নৃত্য,
- আদিবাসী নৃত্য,
- লোক নৃত্য,
- আধুনিক নৃত্য।
নৃত্যের ইতিহাস চর্চার সঙ্গে যুক্ত ঐতিহাসিক
শিল্পচর্চার অন্যান্য ধারা গুলির মতো নৃত্যকলার ইতিহাস নিয়েও বহু গবেষক গবেষনা করে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে আছেন -
- জে অ্যাডশিড ল্যান্সডেল,
- ওয়াং কেফেন,
- শোভনা গুপ্ত,
- গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়,
- রাগিনী দেবী।
নৃত্যের ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব
সামাজিক ইতিহাস চর্চায় নৃত্যের ইতিহাসের একাধিক গুরুত্বের দিক রয়েছে । যেমন -
- নৃত্যের ইতিহাস চর্চা থেকে একটি জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দিকের পরিচয় এবং সামাজিক অনুভূতি প্রকাশের ধরন সম্পর্কে জানা যায়।
- ভারতের নৃত্যের ইতিহাস চর্চা থেকে "দেবদাসী" প্রথার কথা জানা যায়। প্রাচীনকালে অবিবাহিত নারীরা অনেক সময় দেবতাদের কাছে নিজেদের আত্মনিবেদন করতেন। দেবতাদের বিনোদনের জন্য নৃত্য,গীত সহ মন্দিরে নানা সেবামূলক কাজের সঙ্গে দেবদাসীরা যুক্ত থাকতেন।
- নৃত্য থেকে সামাজিক ইতিহাস চর্চার নানা উপাদানও পাওয়া যায়। উদাহরন হিসাবে আদিবাসী সমাজের নৃত্যের ধরনের কথা বলা যায়। আদিবাসী সমাজে কোন একক নৃত্য নেই। তারা যৌথ ভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন। এটি থেকে তাদের জোটবদ্ধ সমাজ জীবনের ঐতিহ্যের কথা জানা যায়।
- সবশেষে বলা যায়, নৃত্যের ইতিহাস চর্চা থেকে যে কোন নৃত্যের উদ্ভবের পশ্চাৎপটের ইতিহাস এবং নৃত্যকলার বিবর্তনের বিভিন্ন ধারা গুলি সম্পর্কে জানতে পারা যায়।
ভারতীয় নৃত্যকলার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
ভারতে নৃত্যের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। বৈশিষ্ট্য অনুসারে ভারতীয় নৃত্যকলাকে ৩ টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -
- ধ্রুপদী বা ক্লাসিক নৃত্য,
- লোক নৃত্য,
- আদিবাসী নৃত্য।
(১.) ধ্রুপদী নৃত্য বা ক্লাসিক্যাল ডান্স
ধ্রুপদী নৃত্যকলা হলো ভারতের প্রাচীনতম নৃত্যকলা। এখানে নাচের মুদ্রা ও ব্যাকরন গুলি অত্যন্ত জটিল ও কঠিন।
ভারতীয় উপমহাদেশে ধ্রুপদী বা ক্লাসিক্যাল নৃত্যের ৮ টি ঘরানা লক্ষ্য করা যায় -
- ভরতনাট্যম - তামিলনাড়ু,
- কত্থক - উত্তর পশ্চিম ভারত,
- কথাকলি - কেরল,
- মনিপুরী - মনিপুরী,
- ওড়িশি - ঊড়িষ্যা,
- কুচিপুরি - অন্ধ্রপ্রদেশ,
- মোহিনীঅট্টম - কেরল,
- সত্রিয়া - আসাম।
ধ্রুপদি নৃত্য শিল্পী
ভারতে ধ্রুপদী নৃত্যকলার উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন -
- উদয়শঙ্কর,
- অমলাশঙ্কর,
- পন্ডিত বিরজু মহারাজ,
- শম্ভু মহারাজ,
- কেলুচরন মহাপাত্র,
- রুক্নিনী দেবী,
- মল্লিকা সারাভাই।
(২.) লোকনৃত্য
লোকনৃত্যে ধ্রুপদী নৃত্যের মতো কোন মুদ্রার ব্যবহার নেই। এটি ধ্রুপদী নৃত্য থেকে অনেকটাই সহজ ও সরল। লোকনৃত্যে অনেকে একসঙ্গে যৌথভাবে নৃত্য করে থাকেন।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের আলাদা আলাদা লোকনৃত্য আছে।
আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লোকনৃত্য হল -
- ছৌ নাচ - পুরুলিয়া,
- রাবনকাটা নাচ - বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া,
- ঝুমুর নাচ - বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া,
- রনপা নাচ,
- রায়বেঁশে নাচ।
(৩.) আদিবাসী নৃত্য
আদিবাসীদের সহজ সরল জীবনধারার মতো আদিবাসী নৃত্যের মুদ্রা গুলিও সহজ সরল। সাধারনত সমান্তরাল তালে আদিবাসী সমাজের নাচের মুদ্রা গুলি প্রদর্শিত হয়।
আদিবাসী সমাজে কোন একক নৃত্য নেই। পুরুষ ও মহিলা সকলে সমবেত ভাবে একসঙ্গে যৌথভাবে এখানে নৃত্য পরিবেশন করেন।
আদিবাসী নৃত্যের দুটি উদাহরন হলো - সাঁওতালি নৃত্য, এবং করম নাচ।
কিছু ভারতীয় নৃত্যকলার পরিচয়
- উত্তর ভারতের নৃত্যশৈলী - কত্থক, ওড়িশি।
- দক্ষিণ ভারতের নৃত্যশৈলী - কথাকলি, ভরতনাট্যম।
- পূর্ব ভারতের নৃত্যশৈলী - মনিপুরী, সত্রিয়া, ছৌ নাচ।
- দুটি আঞ্চলিক নৃত্যের নাম - রবীন্দ্রনৃত্য, ছৌ নাচ (বাংলা), ডান্ডিয়া (গুজরাত)।
- দুটি লোক নৃত্যের নাম - রনপা নাচ, ঝুমুর নাচ।
- দুটি আদিবাসী নৃত্যের নাম - সাঁওতালি নৃত্য, করম নাচ।
নৃত্যের ইতিহাস সম্পর্কিত গ্রন্থ
- ডান্স অব ইন্ডিয়া - শোভনা গুপ্ত।
- দ্য হিস্ট্রি অব চাইনিজ ডান্স - ওয়াং কেফেন।
- ডান্স হিস্ট্রি : অ্যান ইনট্রোডাকশন - জে অ্যাডশিড ল্যান্সডেল।
- ভারতের নৃত্যকলা - শোভনা গুপ্তা।