প্রাচীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সম্বত বা অব্দ

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষে একাধিক অব্দ/সম্বত/বর্ষপঞ্জী/ক্যালেন্ডার প্রচলিত ছিলো। সাধারনত কয়েকজন প্রখ্যাত রাজা তাদের সিংহাসন আরোহন বা বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখবার জন্য এই সম্বত বা অব্দ গুলির প্রচলন করেছিলেন। 

মূলত রাজস্ব আদায়প্রশাসনিক কাজকর্মের সুবিধার জন্যই এই অব্দ বা সম্বত গুলির প্রচলন করা হয়েছিলো। প্রাচীনকাল থেকে ভারতে প্রধান কিছু সম্বত ছাড়াও, আঞ্চলিক স্তরে আরোও নানা সম্বত প্রচলিত ছিলো। এর মধ্যে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সম্বতের পরিচয় নীচে তুলে ধরা হলো।

প্রাচীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সম্বত বা অব্দ
প্রাচীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ সম্বত বা অব্দ

 

(১.) বিক্রম সম্বত 

 কিংবদন্তি অনুসারে রাজা বিক্রমাদিত্যের নামে এই সম্বত চালু হয়। ৫৮ খ্রিঃ পূর্বাব্দ থেকে "বিক্রম সম্বত" চালু হয় বলে জানা যায়।

(২.) শকাব্দ

কুষান সম্রাট প্রথম কনিষ্ক এই সম্বত প্রচলন করেন। ৭৮ খ্রিঃ এই সম্বত প্রচলিত হয়েছিলো বলে মনে করা হয়। শক ক্ষত্রপগন দীর্ঘদিন ধরে এই সম্বত ব্যবহার করেছিলেন বলে এটি "শকাব্দ" নামে পরিচিত হয়। স্বাধীন ভারত সরকার এই সম্বত অনুযায়ী সরকারি তারিখ ধার্য করেন।

(৩.) কলচুরী অব্দ

মধ্যভারতের চেদি ও কলচুরীগন এই সম্বত ব্যবহার করতেন। এই অব্দ ২৪৮ খ্রিঃ থেকে প্রচলিত হয়েছিলো বলে মনে করা হয়ে থাকে।

(৪.) গুপ্তাব্দ

গুপ্তাব্দ হল গুপ্ত সম্রাটদের ব্যবহৃত সম্বত। সম্ভবত প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ৩১৯ - ৩২৩ খ্রিঃ এই সম্বত প্রবর্তন করেন। প্রাচীন ভারতে রাজবংশের তালিকা গুপ্ত সম্বতের ভিত্তিতে স্থির করা সম্ভব হয়েছে।

(৫.) হর্ষাব্দ

সম্রাট হর্ষবর্ধন তার সিংহাসন আরোহন কালকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৬০৬ খ্রিঃ থেকে এই অব্দ বা সম্বত প্রবর্তন করেন। তার মৃত্যুর পরেও বহুকাল এই অব্দ প্রচলিত ছিলো।

(৬.) লক্ষনাব্দ

অনেকের মতে রাজা লক্ষন সেনের নামে ১১১৯ খ্রিঃ থেকে এই অব্দটি প্রচলিত হয়েছিলো।

(৭.) চালুক্য বিক্রমাব্দ

চালুক্যরাজ ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য কর্তৃক ১০৭৫ খ্রিঃ এই সম্বত প্রচলিত হয়।

(৮.) কোল্লাম অব্দ

মালাবার অঞ্চলে ৮২৫ খ্রিঃ এই অব্দ প্রচলিত হয়েছিলো।

(৯.) হিজরী সন

৬২২ খ্রিঃ হজরত মহম্মদ মক্কা থেকে মদিনাতে চলে আসেন। এই ঘটনাকে ইতিহাসে "হিজরত" বলা হয়। হিজরতের ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ৬২২ খ্রিঃ থেকে হিজরি সন গগনার সূত্রপাত হয়। চন্দ্র মাসের হিসাবে এই পঞ্জিকা প্রবর্তিত করা হয়েছিলো।

(১০.) ইলাহি অব্দ

১৫৫৬ খ্রিঃ মুঘল সম্রাট আকবর এই অব্দ প্রচলন করেন। চন্দ্রমাস অনুযায়ী এখানে গননা করা হতো। 

(১১.) বৌদ্ধ সম্বত

আনুমানিক ৫৪৩ খ্রিঃ পূর্বাব্দে বুদ্ধদেবের মহাপরিনির্বানের দিনে এই সম্বত প্রচলিত হয়েছিলো বলে মনে করা হয়। বৈশাখ মাসের বুদ্ধ পূর্নিমার  বিশেষ দিনটিতে বুদ্ধদেব জন্মগ্রহণ করেন, বোধিলাভ করেন এবং মহাপরিনির্বান লাভ করেন। এইজন্য এই বিশেষ দিন থেকেই বুদ্ধাব্দের সূচনা হয়। 

(১২.) জৈন সম্বত

৫২৭ খ্রিঃ পূর্বাব্দে এই সম্বত প্রচলিত হয়।

(১৩.) বঙ্গাব্দ

বঙ্গাব্দ বাংলাদেশের প্রচলিত একটি সৌর বর্ষপঞ্জী। এই সম্বত অনুযায়ী বৈশাখ মাসের ১ তারিখ থেকে অব্দ বা বৎসরের সূচনা হয়। বঙ্গাব্দের প্রচলন সম্পর্কে দুটি মত রয়েছে। অনেকে মনে করেন গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক বঙ্গাব্দের প্রচলন করেন। আবার কারো মতে আকবর তার চন্দ্রমাসিকপঞ্জী হিজরি সনকে সৌরবর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করে বঙ্গাব্দের সূচনা করেন। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post