ইংরেজদের আগমনের কিছুকাল পরে ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তন হয়েছিলো। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণী ভারতের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যবস্থার নানা ত্রুটি বিচ্যুতি ও অসাড়তার দিক গুলিকে খুঁজে পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সেই ত্রুটি গুলোকে সংশোধন করবার জন্য তারা শুরু করেছিলেন "সংস্কার আন্দোলন"।
পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে আসবার পর ভারতের ভিতর যে বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক বিবর্তন দেখা গিয়েছিলো, চিনের ইতিহাসের ক্ষেত্রেও হুবহু একই ঘটনার প্রতিফলন দেখা যায়।
|
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষিত শ্রেনীর উদ্ভব |
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার সময়কাল ও সূচনা
ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে দেশী ও বিদেশীদের উদ্যোগে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ ঘটে।
১৮৬০ খ্রিঃ পিকিং এর সন্ধিতে খ্রিষ্টান মিশনারিদের চিনে জমি ক্রয় করার অধিকার দেওয়া হয়। এর ফলে মিশনারিদের পক্ষে চিনে চার্চ নির্মান, ও মিশনারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। এই মিশনারিদের উদ্যোগেই ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চিনে ধীরে ধীরে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটতে থাকে।
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রেক্ষাপট
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক পর্যন্ত চিন ছিলো অত্যন্ত রক্ষনশীল। সে আপন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও শিক্ষাতেই বিভোর ছিলো। পাশ্চাত্যের কোন কিছুকে সে গ্রহন করে নি। এমনকি চিনে ব্যবসা করতে আসা পাশ্চাত্যের বনিকদেরও চিন নিকৃষ্ট নজরে দেখতো। দেশের ভিতরে কিছুতেই সে তাদের ঢুকতে দিতো না।
কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চিত্রটা বদলাতে শুরু করে। ১৮৪২ খ্রিঃ আফিম যুদ্ধের পর একের পর এক বৈদেশিক চুক্তিতে চিন স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। এই সব অসম চুক্তি গুলোর ফলে চিনের দরজা পাশ্চাত্যের দেশ গুলির কাছে উন্মুক্ত হয়ে যায়। এই প্রেক্ষিতেই চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের ঐতিহাসিক পটভূমি রচিত হয়।
পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশের পিছনে ৩ টি উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো। যেমন -
- খ্রিষ্টান মিশনারিদের উদ্যোগ,
- প্রথম পর্যায়ের সরকারি উদ্যোগ
- দ্বিতীয় পর্যায়ের সরকারি উদ্যোগ,
(১.) মিশনারিদের উদ্যোগ
পৃথিবীতে ধর্ম, ব্যবসা ও সাম্রাজ্যবাদ হাত ধরাধরি করে এসেছিলো। চিনের ইতিহাসের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয় নি। চিনে পাশ্চাত্য দেশের বনিকরা যখন ব্যবসা করতে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গেই এসেছিলো খ্রিষ্টান মিশনারিরা। খ্রিষ্টান মিশনারিরা চিনে ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলেছিলেন। এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির হাত ধরেই চিনে প্রথম পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তিত হয়।
মিশনারিরা চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার আয়োজন করলে তা গ্রহণ করতে সবার আগে এগিয়ে এসেছিলো কম্প্রাদর শ্রেনী।চিনে উন্মুক্ত বন্দর গুলিতে বিদেশীদের নানা রকম সাহায্য করতেন একদল চিনা। ক্রমে বিদেশীদের সঙ্গে ব্যবসা বানিজ্যের নানা লেনদেন এবং বিদেশীদের বানিজ্য কুঠি গুলিতে চাকুরির সুবাদে এরা ধনী হয়ে ওঠে। এরাই ছিলো কম্প্রাদর শ্রেনী।
পাশ্চাত্যের বনিকদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা শেখাটা অত্যন্ত জরুরি ছিলো। ইংরেজি শেখার তাগিদেই মূলত কম্প্রাদর শ্রেনী ও অন্যান্য কিছু সাধারন শ্রেনী মিশনারিদের বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষা লাভ করতে আরম্ভ করেন। এই ভাবেই মিশনারিদের উদ্যোগে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রথম সূচনা ঘটে।
মিশনারিদের স্কুল গুলি থেকে চিনারা পাশ্চাত্যের -
- গনিত, জ্যোর্তিবিদ্যা, বীজগনিত, জ্যামিতি, ত্রিকোনমিতি সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে,
- আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যা সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করে। যার মধ্যে অন্যতম ছিলো - নির্ভুল ক্যালেন্ডার তৈরি, মানচিত্র তৈরি, ঢালাই করা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি ইত্যাদি।
মিশনারিরা ধীরে ধীরে স্কুল, লাইব্রেরি ও সংবাদপত্র প্রকাশ করে আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনাকে চিনে ছড়িয়ে দিতে থাকেন। এইসব মিশনারিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন -
ইয়ং জে অ্যালেন, এ পি মার্টিন, টি রিচার্ড, এ উইলিয়াম প্রমুখ।
মিশনারিদের ব্যর্থতা
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে মিশনারিরা শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেন নি। তাদের এই ব্যর্থতার পিছনে অনেক গুলি কারন ছিল। যেমন -
- মাঞ্চু শাসকদের নানা রকম প্রতিবন্ধকতার জন্য মিশনারিরা ঠিক ভাবে চিনে কাজ করতে পারেন নি,
- মিশনারিরা বলপূর্বক ভাবে ও নানা প্রলভনে চিনাদের ধর্মান্তরিত করতে আরম্ভ করলে চিনা সমাজে এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়,
- বহু জায়গায় চিনারা মিশনারিদের হত্যা করে এবং তাদের প্রতি ঘৃনা পোষন করে,
- এছাড়া, মিশনারিরা ধর্মীয় ব্যক্তি ছিলেন। বিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের জ্ঞান ছিলো সীমিত। ফলে প্রকৃত আধুনিক শিক্ষা দিতে মিশনারিরা ব্যর্থ হয়েছিলেন।
পাশ্চাত্য শিক্ষায় মিশনারিদের বৌদ্ধিক প্রভাব
চিনে মিশনারিরা যেটুকু পাশ্চাত্য শিক্ষা দিতে পেরেছিলেন, তার ফলে চিনা বুদ্ধিজীবী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর ফলে চিনে দুটি পরস্পর বিরোধী বৌদ্ধিক গোষ্ঠীর জন্ম হয়।
(১.) পাশ্চাত্য শিক্ষার সংস্পর্শে এসে একদল আধুনিক প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী শ্রেনীর জন্ম হয়। যারা তাওবাদ, কনফুসিয়বাদের সমালোচনা করেন। চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কারের কথা বলেন।
(২.) অন্যরা তখনও মনে করতেন পাশ্চাত্যের শিক্ষা থেকে চিনের সনাতন শিক্ষা পদ্ধতি অনেক উন্নত। বিদেশীদের কাছে চিনের তেমন কিছুই শেখার নেই।
(২.) প্রথম পর্বের সরকারি উদ্যোগ
কিন্তু (ক.) আফিম যুদ্ধে চিনের পরাজয়,(খ.) চিনের ওপর পাশ্চাত্যের দেশ গুলির একের পর এক অসম চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া, (গ.) রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জন অসন্তোষ, প্রভৃতি ঘটনায় চিনের আভ্যন্তরীণ দূর্বলতা প্রকট হয়ে ওঠে। এই সব ঘটনায় চিনের মাঞ্চু সরকার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে।
এই উপলব্ধি থেকে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণে জোর দেওয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, প্রথম পর্বে মাঞ্চু সরকার মনে করতো চিনে সার্বিক ভাবে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনের কোন প্রয়োজন নেই। চিন পাশ্চাত্যের দেশ গুলো থেকে একমাত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকে পিছিয়ে আছে বলেই সে পরাজিত হয়েছে। সুতরাং পাশ্চাত্যের প্রযুক্তির জ্ঞান গুলি চিনারা শিখে নিতে পারলেই চিন আত্ম শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠবে।
তাই প্রথম পর্বে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শুধুমাত্র "কারিগরি জ্ঞান" অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। পাশ্চাত্য প্রযুক্তির প্রয়োগে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও যন্ত্রপাতি নির্মান, উন্নত মানের জাহাজ, রেলপথ, টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনে পাশ্চাত্য প্রযুক্তিবিদ্যা শেখার প্রয়োজন অনুভূত হয়।
চিনের মাঞ্চু সরকার মনে করেছিলো বর্বরদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা গুলো শিখে নিতে পারলে সাফল্যের সঙ্গে সেগুলোকে ব্যবহার করে বর্বরদের প্রতিহত করা যাবে, ঠিক যেমন কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা হয়। এই লক্ষ্যে ১৮৬১ থেকে ১৮৯৫ পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার আয়োজন করা হয়। চিনের ইতিহাসে এই ঘটনা "আত্মশক্তি আন্দোলন" নামে পরিচিত হয়।
এই পর্বে পাশ্চাত্য কারিগরি শিক্ষা গ্রহণের জন্য চিনা ছাত্রদের বিদেশে পড়তে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
চিনা বুদ্ধিজীবী ওয়েই ইউয়ান, ফেং কুইফেন এই পর্বে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
প্রথম পর্বের ব্যর্থতা
প্রথম পর্বের সরকারি উদ্যোগ অবশ্য সাফল্য লাভ করতে পারে নি। আর্থিক কারনে চিনের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর কোন পরিবর্তন করা যায় নি। কোন বড়ো শিল্প গড়ে ওঠে নি। সামরিক দিকেও চিন শক্তিশালী হয় নি।
এর ফলে ১৮৯৪ - ৯৫ খ্রিঃ চিন - জাপান যুদ্ধে জাপানের কাছে চিন শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। যুদ্ধ শেষে জাপান ১৮৯৫ খ্রিঃ চিনের ওপর অপমানজনক সিমনোশেকির সন্ধি চাপিয়ে দেয়। এই ঘটনায় চিনে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। চিনা বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হন।
প্রগতিশীল চিনা বুদ্ধিজীবীরা এই সময় চিনে সীমিত সংস্কারের বদলে সার্বিক সংস্কারের দাবি তোলেন। সীমিত পাশ্চাত্য শিক্ষার বদলে সার্বিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য সোচ্চার হন। এই সমস্ত চিনা বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন - কাং ইউ ওয়ে।
(৩.) দ্বিতীয় পর্যায়ের সরকারি উদ্যোগ
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনে ব্যাপক সরকারি উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়। এই সময় শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়।
এই সময় -
- চিনের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়,
- ১৯০২ খ্রিঃ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়,
- ১৯০৬ খ্রিঃ স্বতন্ত্র শিক্ষা বিভাগ গঠন করা হয়,
- বিদেশ থেকে আধুনিক পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষকদের আনা হয়।
শিক্ষার এই ব্যাপক আয়োজনে চিনের কেন্দ্র সরকার ছাড়াও, প্রাদেশিক সরকার ও উদীয়মান জেন্ট্রি সম্প্রদায় অর্থ ব্যয় করেন।
কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই আয়োজন পর্যাপ্ত ছিলো না। তাই চিন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের জন্য মেধাবী ছাত্রদের বিদেশে পাঠানো হবে। সেই মতো বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে চিনা ছাত্রদের পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশ যাত্রায় উৎসাহিত করা হয়।
এই সময় জাপান, ফ্রান্স, আমেরিকা ও ইউরোপের অন্যান্য দেশ গুলিতে শিক্ষার উদ্দেশ্যে মেধাবী চিনা ছাত্ররা পাড়ি দেন।এইভাবে চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটে।
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে চিনে -
- একটি বৌদ্ধিক শিক্ষিত শ্রেনীর জন্ম হয়,
- এই শিক্ষিত শ্রেনী চিনের যুবসমাজকে প্রাচীন ধ্যান ধারণাকে পরিত্যাগ করে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহনে আহ্বান জানায়,
- কনফুসিয় ঐতিহ্য, রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও অসাড় সামাজিক ধ্যান ধারণার ভিত্তি মূলে এরা আঘাত করেন,
- পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে চিনে গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, মার্কসবাদ, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি রাজনৈতিক আদর্শ ও চিন্তা চেতনার প্রসার ঘটে,
- শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেনী বিভিন্ন পত্র পত্রিকা প্রকাশ করে তাদের স্বাধীন চিন্তা ও নতুন আদর্শের প্রচার করেন,
- পাশ্চাত্য সাহিত্যের প্রভাবে চিনে জাতীয়তাবাদী সাহিত্য রচিত হয়,
- স্বৈরাচারী মাঞ্চু রাজবংশের উচ্ছেদ ঘটে এবং ১৯১১ খ্রিঃ প্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
- সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারায় চিনের যুবসমাজ অনুপ্রাণিত হয়,
- নতুন চিন্তা চেতনার দ্বারা প্রভাবিত হয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র। সাহিত্য সংস্কৃতি ও বৌদ্ধিক জ্ঞান চর্চা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক আন্দোলন। যা চিনের ইতিহাসে "নবজাগরন" নামে পরিচিত হয়।
চিনে পাশ্চাত্য শিক্ষিত শ্রেনীর প্রভাব
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পাশ্চাত্য শিক্ষিত যে বৌদ্ধিক শ্রেনীর জন্ম হয়, তাদের হাত ধরে চিনের সাংস্কৃতিক, বৌদ্ধিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব গন জাগরন ঘটে। চিনের এইসব শিক্ষিত শ্রেনীর প্রায় সকলেই বিদেশ থেকে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে এসেছিলেন।
এই সব শিক্ষিত বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন -
(১.) সান ইউয়ান পেই
ইনি মে ফোর্থ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯১৬ খ্রিঃ উপাচার্য হিসাবে যোগ দেন এবং সেখানে পাশ্চাত্য জ্ঞান চর্চার এক ব্যাপক আয়োজন করেন। ফলে তার হাত ধরে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধিক জ্ঞান চর্চার পীঠস্থানে পরিনত হয়।
(২.) চেন তু সিউ
১৯১১ খ্রিঃ চিনে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন।পরবর্তীকালে তিনি পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন এবং ছাত্রদের কনফুসিয় পন্থা ও প্রাচীন ধ্যান ধারনা পরিত্যাগ করে যুক্তিবাদ, গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্রবাদ গ্রহনের কথা বলেন।
(৩.) হু সি, লু সুন, মাও তুং এবং কো মো জো
এরা প্রত্যেকেই সাহিত্যিক ছিলেন। প্রাচীন পদ্ধতির বদলে সাধারনের বোধগম্য কথ্য ভাষায় এরা সাহিত্য রচনা শুরু করেন। ক্রমে এদের কর্মকান্ড চিনে এক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্ম দেয়।
সাংস্কৃতিক আন্দোলন
চিনে এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মূল পীঠস্থান ছিলো পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোন না কোন ভাবে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে প্রসারিত করতে বুদ্ধিজীবীরা চিনের বিভিন্ন স্থানে নানা সংগঠন গড়ে তোলেন।
ক্রমে বুদ্ধিজীবীরা দক্ষিনপন্থী ও বামপন্থী এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। গনতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের অভিঘাতে চিনে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গন আন্দোলনের পটভূমি রচিত হয়। যা শেষ পর্যন্ত পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে মে ফোর্থ আন্দোলনে রূপলাভ করেছিলো।