ইংরেজ আমলে শিক্ষা বিস্তার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সাল ও ঘটনা

 ভারতে ইংরেজদের আগমনের পর যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছিল, তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তন। ঔপনিবেশিক আমলে ভারতে শিক্ষা সংস্কারের ৩ টি স্তর লক্ষ্য করা যায় - 

  1. প্রথম পর্বে ইংরেজরা প্রাচ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে গুরুত্ব আরোপ করেছিলো, এবং প্রাচ্য বিদ্যা চর্চার জন্য একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলো।
  2. দ্বিতীয় পর্বে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের জন্য সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মান করা হয়। 
  3. দ্বিতীয় পর্বের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান চর্চার ওপরেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিলো। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো সরকারি কাজের উপযোগী কেরানি তৈরি করা। তাছাড়া, এই শিক্ষাতে কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। ফলে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করেও ভারতবাসী আত্মনির্ভর ও স্বাবলম্বী হতে পারে নি। 
  4. এর ফলে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিরুদ্ধে পাল্টা একটি স্বদেশীয় শিক্ষার ধারা গড়ে উঠেছিলো। যেখানে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ভারতীয়দের উদ্যোগে ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ দিকে একাধিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। 
খুব সংক্ষেপে আমরা ঔপনিবেশিক আমলে গড়ে ওঠা এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির একটি তালিকা আজকের আলোচনাতে তুলে ধরবো।

 সাল অনুযায়ী ক্রমানুসারে শিক্ষা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর তালিকাটি নীচে তুলে ধরা হলো - 

ভারতে শিক্ষা বিস্তার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সাল ও ঘটনা
ভারতে শিক্ষা বিস্তার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সাল ও ঘটনা

১৭৮১ - কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা 

  • প্রতিষ্ঠা করেন - ওয়ারেন হেস্টিংস। 
  • উদ্দেশ্য ছিলো - আরবি ও ফার্সি ভাষা চর্চা করা ও মুসলিম আইন চর্চা করা।

১৭৮৪ - এশিয়াটিক সোসাইটি

  •  প্রতিষ্ঠা করেন - স্যার উইলিয়াম জোন্স
  • উদ্দেশ্য ছিলো - প্রাচ্য বিদ্যার চর্চা করা, অর্থাৎ প্রাচ্যের ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে চর্চা করা। এটি কলকাতায় অবস্থিত।

১৭৯২ - বারানসী সংস্কৃত কলেজ

  •  প্রতিষ্ঠা করেন - জোনাথান ডানকান
  • উদ্দেশ্য ছিলো - হিন্দু আইন, সংস্কৃত ভাষা ও দর্শন সম্পর্কে চর্চা করা। 

১৮০০ - ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ

  •  প্রতিষ্ঠা করেন - লর্ড ওয়েলেসলি
  •  উদ্দেশ্য - ভারতে আগত ইংরেজ সিভিলিয়ানদের ভারতীয় ভাষা, আইন ও রীতিনীতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কলকাতায় এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিলো।
  • পরবর্তীকালে এই কলেজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো এবং ইংল্যান্ডে হেইলেবেরি কলেজ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিলো।এই কলেজ থেকে ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ নিয়েই ব্রিটিশ সিভিলিয়ানরা ভারতে চাকরিতে নিযুক্ত হতেন। 

১৮০০ - শ্রীরামপুর ব্যপটিস্ট মিশন

  •  প্রতিষ্ঠা করেন - উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড ও মার্শম্যান। এদের একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হতো। 
  • শ্রীরামপুর মিশন একাধিক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করে এদেশে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তারে সাহায্য করে । 
  • এছাড়া এখানকার ছাপাখানা থেকে অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক ছেপে বেরোতো, যা শিক্ষার প্রসারকে অনেকটাই সহজতর করে দিয়েছিলো। 

১৮১৩ - চার্টার আইন

  • এই আইনে ভারতে শিক্ষার প্রসারের জন্য কোম্পানিকে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা খরচ করবার নির্দেশ দেওয়া হয়।
  • ভারতীয় রাজস্বের টাকা থেকেই এই এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হবে, বলা হয়। 
  • শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অর্থ দেশীয় শিক্ষায় নাকি পাশ্চাত্য শিক্ষায় ব্যয় করা হবে, তা নিয়ে ১৮১৩ - ১৮৩৫ খ্রিঃ পর্যন্ত দীর্ঘ "প্রাচ্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব" চলেছিলো।

১৮১৬ - অ্যাংলো হিন্দু স্কুল

  • রাজা রামমোহন রায় কলকাতার হেদুয়ার কাছে শুঁড়িপাড়ায় এই ইংরেজি বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 
  • ১৮২২ খ্রিঃ এই বিদ্যালয়টির নামকরন করা হয় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল। 

১৮১৭ - হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা

  • ডেভিড হেয়ার, রাধাকান্ত দেব, বৈদনাথ মুখোপাধ্যায়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যার হাইড ইস্ট প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তায় কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  • ১৮৫৫ খ্রিঃ এই কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজ নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হয়েছে এবং এর নামকরণ করা হয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। 
  • পাশ্চাত্য শিক্ষা ও চিকিৎসা বিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দু কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো।

১৮১৭ - কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি 

  • ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে কলকাতায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
  • এর উদ্দেশ্য ছিলো - কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন স্কুল গুলির জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনা ও বিতরন করা।

১৮১৮ - কলকাতা স্কুল সোসাইটি 

  • ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
  • এর উদ্দেশ্য ছিলো - কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। 
  • স্কুল সোসাইটির অধীনে পরবর্তীকালে কলকাতার দেশীয় পাঠশালা গুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো। 

১৮১৮ - হেয়ার স্কুল প্রতিষ্ঠা 

  • ১৮১৮ খ্রিঃ আরপুলি বাংলা স্কুল এবং পটলডাঙ্গা ইংরেজি স্কুল একত্রিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় হেয়ার স্কুল। 
  • ডেভিড হেয়ার ছিলেন এর স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা। 

১৮১৮ - শ্রীরামপুর কলেজ

  • শ্রীরামপুর ব্যপটিস্ট মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুরে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  • পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে কলেজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। 

১৮২২ - স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক পুস্তকের প্রকাশ

  • রাধাকান্ত দেবের অনুরোধে গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার এই গ্রন্থ রচনা করেন। 
  • ভারতে নারী শিক্ষায় জনমত গঠনে বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো। 

১৮২৩ - জনশিক্ষা কমিটি গঠন

  • ভারতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের উদ্দেশ্যে লর্ড আমহাস্টের আমলে "জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন" বা জনশিক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। 
  • জনশিক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রাচ্য শিক্ষা বনাম পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠলে এই কমিটির প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী দুই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিতর্ক নিরসনের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলো। 
  • লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেকলে কে জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি করে এই বিতর্ক নিরসনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। 

১৮৩০ - জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন 

  • আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টি তৈরি করেন। 
  • এর বর্তমান নাম স্কটিশ চার্চ কলেজ
  • এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানে ডাফকে রাজা রামমোহন রায় প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। 

১৮৩৫ - মেকলে মিনিট 

  • লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক প্রাচ্য শিক্ষা বনাম পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্বের দায়িত্ব দিয়ে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে কে জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেন।
  • ১৮৩৫ খ্রিঃ মেকলে প্রাচ্য শিক্ষার কঠোর সমালোচনা করে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার স্বপক্ষে মত দেন এবং মেকলে প্রতিবেদন পেশ করেন। 
  • এখানে বলা হয় ভারতের উচ্চবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার ঘটালে তা ফিলট্রেশন থিওরি অনুযায়ী সর্বসাধারনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। 

১৮৩৫ - কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা

  • লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমলে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  • এম জে ব্রামলি ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ। 

১৮৩৬ - ভারতে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ 

  • ১৮৩৬ খ্রিঃ কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ হয়। 
  • প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করেছিলেন মধুসূদন গুপ্ত। 
  • প্রথম শবব্যবচ্ছেদকে কেন্দ্র করে রক্ষনশীল হিন্দু সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। 

১৮৩৯ - অকল্যান্ড মিনিট

  • ১৮৩৯ খ্রিঃ অকল্যান্ড এক মিনিটে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার পাশাপাশি প্রাচ্য শিক্ষাতেও অর্থ বরাদ্দের ঘোষনা করেন। 
  • এই ঘোষনার ফলে প্রাচ্য পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দীর্ঘ দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটে।

১৮৪২ - কাউন্সিল অব এডুকেশন গঠন

  • জনশিক্ষা কমিটিকে নতুন করে পুর্নগঠন করে ১৮৪২ খ্রিঃ কাউন্সিল অব এডুকেশন গঠন করা হয়েছিলো। 
  • শিক্ষা বিভাগ পরিচালনার জন্য এটি গঠন করা হয়েছিলো। 

১৮৪৪ - ইংরেজিকে সরকারি ভাষা ঘোষনা

  • লর্ড হাডিঞ্জ ইংরেজি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষনা করেন। 
  • এই ঘোষনায় সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা জ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। 
  • এর ফলে ইংরেজি শিক্ষার আগ্রহ ও চাহিদা দুই বৃদ্ধি পায়। এবং এই ঘোষনা ভারতে ইংরেজি শিক্ষার বিকাশকে বহুলাংশে ত্বরান্বিত করে। 

১৮৪৯ - বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা 

  • কাউন্সিল অব এডুকেশনের সচিব ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। 
  • এটি ছিলো ভারতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। 
  • এর আদি নাম ছিলো নেটিভ ফিমেল স্কুল।
  • এই স্কুল পরে কলেজে পরিনত হয় এবং বেথুন কলেজ ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কলেজ। 

১৮৫৩ - হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ 

  • রাধাকান্ত দেব সহ কয়েক জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে কলকাতায় এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। 
  • এটিই ছিলো প্রকৃতপক্ষে ভারতের প্রথম জাতীয় কলেজ। 
  • পরে আর্থিক কারনে কলেজটি স্কুলে রূপান্তরিত হয়েছিলো। 

১৮৫৪ - উডের ডেসপ্যাচ

  • বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিঃ শিক্ষা সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন পেশ করেন, তাকেই উডের ডেসপ্যাচ বলা হয়। 
  • একে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে ম্যাগনা কার্টা বলা হয়ে থাকে। 
  • উডের প্রতিবেদনে একটি পৃথক শিক্ষা দপ্তর স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, সমগ্র শিক্ষাকে ৫ টি পর্যায়ে ভাগ করা, সরকারি উদ্যোগে স্কুল কলেজ খোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়। 

১৮৫৫ - ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন 

  • উডের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারি শিক্ষা দপ্তর হিসাবে ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন গঠিত হয়। 

১৮৫৭ - বিশ্ববিদ্যালয় আইন

  • লর্ড ক্যানিং এর শাসনকালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করা হয়। 
  • এই আইন অনুযায়ী কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

১৮৫৭ - বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন 

  • উডের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৮৫৭ খ্রিঃ কোলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  • কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশে স্থাপিত প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়। 
  • ১৮৫৭ খ্রিঃ ২৪ জানুয়ারি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  • এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলি প্রতিষ্ঠার সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং। 
  •  স্বদেশী আন্দোলনের সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে "গোলদীঘির গোলামখানা" বলা হতো। ইংরেজি শিক্ষা দিয়ে কেরানি তৈরির জন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিলো বলে এমন নামে ব্যঙ্গ করা হতো। 

১৮৫৮ - ভারতের প্রথম স্নাতক (পুরুষ) 

  • ১৮৫৮ খ্রিঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতের প্রথম স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন যদুনাথ বসু এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। 

১৮৭২ - মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা

  • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
  • এর বর্তমান নাম বিদ্যাসাগর কলেজ। 

১৮৭৬ - ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স

  • এটি প্রতিষ্ঠা করেন মহেন্দ্রলাল সরকার। 
  • এটি ছিলো ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক সংগঠন। 
  • বিজ্ঞানের গবেষণায় এই প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

১৮৮২ - হান্টার কমিশন 

  • উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করা হয়।
  • এর উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষার বিস্তার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা। 
  • এটি ছিলো ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন। 

১৮৮২ - ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক 

  •  ১৮৮২ খ্রিঃ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক হন চন্দ্রমুখী বসু এবং কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। 
  • কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক। 

১৮৯০ - ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা 

  • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বীরসিংহ গ্রামে তার মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 
  • এটি ছিলো বিদ্যাসাগরের প্রতিষ্ঠিত শেষ বিদ্যালয়। 

১৯০১ - শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা 

  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৯০২ - Raleigh কমিশন 

  • লর্ড কার্জন sir Thomas Raleigh এর নেতৃত্বে Raleigh কমিশন গঠন করেছিলেন। 
  • এটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন নামেও পরিচিত ছিলো। 
  • এই কমিশনের দুজন ভারতীয় সদস্য ছিলেন - স্যার গুরুদাস ব্যানার্জি এবং সৈয়দ হুসেন বিলগ্রামী। 

১৯০২ - ডন সোসাইটি গঠন

  • সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৯০২ খ্রিঃ কলকাতাতে বিদ্যাসাগর কলেজের দোতলায় ডন সোসাইটি স্থাপন করেন। 
  • এটি ছিলো বাংলাদেশে জাতীয় শিক্ষা প্রবর্তনের প্রথম ধাপ। 

১৯০৪ - ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন

  • Raleigh commission এর সুপারিশ অনুযায়ী এই আইন তৈরি করা হয়। 
  • এই আইন অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় গুলির ওপর কঠোর সরকারী নিয়ন্ত্রন আরোপ করা হয়। 
  • লর্ড কার্জনের আমলে এই আইন প্রণয়ন করা হয়। 

১৯০৬ - জাতীয় শিক্ষা পরিষদ 

  • বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের যুগে ৯২ জন সদস্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়। 
  • এর সভাপতি হন রাসবিহারী ঘোষ এবং যুগ্ম সভাপতি হন আশুতোষ চৌধুরী ও হীরেন্দ্রনাথ দত্ত। 
  • এই পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, 

১৯০৬ - বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট 

  • তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। 
  • এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন প্রমথনাথ বসু
  •  সভাপতি ছিলেন রাসবিহারী ঘোষ। 
  • ১৯১০ খ্রিঃ "বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট" "বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ" এর সঙ্গে মিশে যায়। ১৯৫৫ খ্রিঃ এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হয়। 

১৯১৪ - কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ

  • কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, স্যার তারকনাথ পালিত এবং রাসবিহারী ঘোষের উদ্যোগে কলকাতায় বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। 

১৯১৭ - বসু বিজ্ঞান মন্দির

  • জগদীশ চন্দ্র বসু এটি প্রতিষ্ঠা করেন। 
  • বিজ্ঞান চর্চার অগ্রনী প্রতিষ্ঠান ছিলো এটি।

১৯২১ - বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা 

  • প্রতিষ্ঠাতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 
  • প্রথম অধ্যক্ষ - বিধুশেখর ভট্টাচার্য। 
  • ১৯৫১ খ্রিঃ এই বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post