ভারতে ইংরেজদের আগমনের পর যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছিল, তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তন। ঔপনিবেশিক আমলে ভারতে শিক্ষা সংস্কারের ৩ টি স্তর লক্ষ্য করা যায় -
- প্রথম পর্বে ইংরেজরা প্রাচ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে গুরুত্ব আরোপ করেছিলো, এবং প্রাচ্য বিদ্যা চর্চার জন্য একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলো।
- দ্বিতীয় পর্বে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের জন্য সরকারি, বেসরকারি উদ্যোগে নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মান করা হয়।
- দ্বিতীয় পর্বের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান চর্চার ওপরেই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিলো। এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো সরকারি কাজের উপযোগী কেরানি তৈরি করা। তাছাড়া, এই শিক্ষাতে কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষায় কোন গুরুত্ব দেওয়া হয় নি। ফলে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ করেও ভারতবাসী আত্মনির্ভর ও স্বাবলম্বী হতে পারে নি।
- এর ফলে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিরুদ্ধে পাল্টা একটি স্বদেশীয় শিক্ষার ধারা গড়ে উঠেছিলো। যেখানে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। ভারতীয়দের উদ্যোগে ঔপনিবেশিক শাসনের শেষ দিকে একাধিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
খুব সংক্ষেপে আমরা ঔপনিবেশিক আমলে গড়ে ওঠা এই সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলির একটি তালিকা আজকের আলোচনাতে তুলে ধরবো।
সাল অনুযায়ী ক্রমানুসারে শিক্ষা সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীর তালিকাটি নীচে তুলে ধরা হলো -
ভারতে শিক্ষা বিস্তার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সাল ও ঘটনা |
১৭৮১ - কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা
- প্রতিষ্ঠা করেন - ওয়ারেন হেস্টিংস।
- উদ্দেশ্য ছিলো - আরবি ও ফার্সি ভাষা চর্চা করা ও মুসলিম আইন চর্চা করা।
১৭৮৪ - এশিয়াটিক সোসাইটি
- প্রতিষ্ঠা করেন - স্যার উইলিয়াম জোন্স।
- উদ্দেশ্য ছিলো - প্রাচ্য বিদ্যার চর্চা করা, অর্থাৎ প্রাচ্যের ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে চর্চা করা। এটি কলকাতায় অবস্থিত।
১৭৯২ - বারানসী সংস্কৃত কলেজ
- প্রতিষ্ঠা করেন - জোনাথান ডানকান।
- উদ্দেশ্য ছিলো - হিন্দু আইন, সংস্কৃত ভাষা ও দর্শন সম্পর্কে চর্চা করা।
১৮০০ - ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ
- প্রতিষ্ঠা করেন - লর্ড ওয়েলেসলি।
- উদ্দেশ্য - ভারতে আগত ইংরেজ সিভিলিয়ানদের ভারতীয় ভাষা, আইন ও রীতিনীতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কলকাতায় এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিলো।
- পরবর্তীকালে এই কলেজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো এবং ইংল্যান্ডে হেইলেবেরি কলেজ প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিলো।এই কলেজ থেকে ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ নিয়েই ব্রিটিশ সিভিলিয়ানরা ভারতে চাকরিতে নিযুক্ত হতেন।
১৮০০ - শ্রীরামপুর ব্যপটিস্ট মিশন
- প্রতিষ্ঠা করেন - উইলিয়াম কেরি, উইলিয়াম ওয়ার্ড ও মার্শম্যান। এদের একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হতো।
- শ্রীরামপুর মিশন একাধিক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করে এদেশে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তারে সাহায্য করে ।
- এছাড়া এখানকার ছাপাখানা থেকে অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক ছেপে বেরোতো, যা শিক্ষার প্রসারকে অনেকটাই সহজতর করে দিয়েছিলো।
১৮১৩ - চার্টার আইন
- এই আইনে ভারতে শিক্ষার প্রসারের জন্য কোম্পানিকে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা খরচ করবার নির্দেশ দেওয়া হয়।
- ভারতীয় রাজস্বের টাকা থেকেই এই এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হবে, বলা হয়।
- শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অর্থ দেশীয় শিক্ষায় নাকি পাশ্চাত্য শিক্ষায় ব্যয় করা হবে, তা নিয়ে ১৮১৩ - ১৮৩৫ খ্রিঃ পর্যন্ত দীর্ঘ "প্রাচ্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব" চলেছিলো।
১৮১৬ - অ্যাংলো হিন্দু স্কুল
- রাজা রামমোহন রায় কলকাতার হেদুয়ার কাছে শুঁড়িপাড়ায় এই ইংরেজি বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
- ১৮২২ খ্রিঃ এই বিদ্যালয়টির নামকরন করা হয় অ্যাংলো হিন্দু স্কুল।
১৮১৭ - হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা
- ডেভিড হেয়ার, রাধাকান্ত দেব, বৈদনাথ মুখোপাধ্যায়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি স্যার হাইড ইস্ট প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তায় কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
- ১৮৫৫ খ্রিঃ এই কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজ নামে পরিচিত হয়। বর্তমানে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হয়েছে এবং এর নামকরণ করা হয়েছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
- পাশ্চাত্য শিক্ষা ও চিকিৎসা বিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রে হিন্দু কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো।
১৮১৭ - কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি
- ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে কলকাতায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
- এর উদ্দেশ্য ছিলো - কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন স্কুল গুলির জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনা ও বিতরন করা।
১৮১৮ - কলকাতা স্কুল সোসাইটি
- ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
- এর উদ্দেশ্য ছিলো - কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
- স্কুল সোসাইটির অধীনে পরবর্তীকালে কলকাতার দেশীয় পাঠশালা গুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো।
১৮১৮ - হেয়ার স্কুল প্রতিষ্ঠা
- ১৮১৮ খ্রিঃ আরপুলি বাংলা স্কুল এবং পটলডাঙ্গা ইংরেজি স্কুল একত্রিত হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় হেয়ার স্কুল।
- ডেভিড হেয়ার ছিলেন এর স্থপতি ও প্রতিষ্ঠাতা।
১৮১৮ - শ্রীরামপুর কলেজ
- শ্রীরামপুর ব্যপটিস্ট মিশনের উদ্যোগে শ্রীরামপুরে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
- পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের ক্ষেত্রে কলেজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।
১৮২২ - স্ত্রী শিক্ষা বিধায়ক পুস্তকের প্রকাশ
- রাধাকান্ত দেবের অনুরোধে গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার এই গ্রন্থ রচনা করেন।
- ভারতে নারী শিক্ষায় জনমত গঠনে বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো।
১৮২৩ - জনশিক্ষা কমিটি গঠন
- ভারতে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের উদ্দেশ্যে লর্ড আমহাস্টের আমলে "জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন" বা জনশিক্ষা কমিটি গঠন করা হয়।
- জনশিক্ষা কমিটির সদস্যদের মধ্যে প্রাচ্য শিক্ষা বনাম পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠলে এই কমিটির প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী দুই গোষ্ঠীর সদস্যরা বিতর্ক নিরসনের জন্য পৃথক পৃথক ভাবে সরকারের কাছে আবেদন করেছিলো।
- লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেকলে কে জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি করে এই বিতর্ক নিরসনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
১৮৩০ - জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন
- আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টি তৈরি করেন।
- এর বর্তমান নাম স্কটিশ চার্চ কলেজ।
- এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মানে ডাফকে রাজা রামমোহন রায় প্রভূত সাহায্য করেছিলেন।
১৮৩৫ - মেকলে মিনিট
- লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক প্রাচ্য শিক্ষা বনাম পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্বের দায়িত্ব দিয়ে টমাস ব্যাবিংটন মেকলে কে জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেন।
- ১৮৩৫ খ্রিঃ মেকলে প্রাচ্য শিক্ষার কঠোর সমালোচনা করে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার স্বপক্ষে মত দেন এবং মেকলে প্রতিবেদন পেশ করেন।
- এখানে বলা হয় ভারতের উচ্চবিত্তদের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার বিস্তার ঘটালে তা ফিলট্রেশন থিওরি অনুযায়ী সর্বসাধারনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।
১৮৩৫ - কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা
- লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের আমলে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
- এম জে ব্রামলি ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ।
১৮৩৬ - ভারতে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ
- ১৮৩৬ খ্রিঃ কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজে প্রথম শবব্যবচ্ছেদ হয়।
- প্রথম শবব্যবচ্ছেদ করেছিলেন মধুসূদন গুপ্ত।
- প্রথম শবব্যবচ্ছেদকে কেন্দ্র করে রক্ষনশীল হিন্দু সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
১৮৩৯ - অকল্যান্ড মিনিট
- ১৮৩৯ খ্রিঃ অকল্যান্ড এক মিনিটে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার পাশাপাশি প্রাচ্য শিক্ষাতেও অর্থ বরাদ্দের ঘোষনা করেন।
- এই ঘোষনার ফলে প্রাচ্য পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দীর্ঘ দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘটে।
১৮৪২ - কাউন্সিল অব এডুকেশন গঠন
- জনশিক্ষা কমিটিকে নতুন করে পুর্নগঠন করে ১৮৪২ খ্রিঃ কাউন্সিল অব এডুকেশন গঠন করা হয়েছিলো।
- শিক্ষা বিভাগ পরিচালনার জন্য এটি গঠন করা হয়েছিলো।
১৮৪৪ - ইংরেজিকে সরকারি ভাষা ঘোষনা
- লর্ড হাডিঞ্জ ইংরেজি ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসাবে ঘোষনা করেন।
- এই ঘোষনায় সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা জ্ঞানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়।
- এর ফলে ইংরেজি শিক্ষার আগ্রহ ও চাহিদা দুই বৃদ্ধি পায়। এবং এই ঘোষনা ভারতে ইংরেজি শিক্ষার বিকাশকে বহুলাংশে ত্বরান্বিত করে।
১৮৪৯ - বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা
- কাউন্সিল অব এডুকেশনের সচিব ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।
- এটি ছিলো ভারতে প্রতিষ্ঠিত প্রথম বালিকা বিদ্যালয়।
- এর আদি নাম ছিলো নেটিভ ফিমেল স্কুল।
- এই স্কুল পরে কলেজে পরিনত হয় এবং বেথুন কলেজ ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কলেজ।
১৮৫৩ - হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজ
- রাধাকান্ত দেব সহ কয়েক জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে কলকাতায় এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
- এটিই ছিলো প্রকৃতপক্ষে ভারতের প্রথম জাতীয় কলেজ।
- পরে আর্থিক কারনে কলেজটি স্কুলে রূপান্তরিত হয়েছিলো।
১৮৫৪ - উডের ডেসপ্যাচ
- বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ১৮৫৪ খ্রিঃ শিক্ষা সংক্রান্ত যে প্রতিবেদন পেশ করেন, তাকেই উডের ডেসপ্যাচ বলা হয়।
- একে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে ম্যাগনা কার্টা বলা হয়ে থাকে।
- উডের প্রতিবেদনে একটি পৃথক শিক্ষা দপ্তর স্থাপন, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, সমগ্র শিক্ষাকে ৫ টি পর্যায়ে ভাগ করা, সরকারি উদ্যোগে স্কুল কলেজ খোলার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
১৮৫৫ - ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন
- উডের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারি শিক্ষা দপ্তর হিসাবে ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন গঠিত হয়।
১৮৫৭ - বিশ্ববিদ্যালয় আইন
- লর্ড ক্যানিং এর শাসনকালে বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করা হয়।
- এই আইন অনুযায়ী কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৮৫৭ - বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন
- উডের সুপারিশের ভিত্তিতে ১৮৫৭ খ্রিঃ কোলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো ভারতীয় উপমহাদেশে স্থাপিত প্রথম আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়।
- ১৮৫৭ খ্রিঃ ২৪ জানুয়ারি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
- এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলি প্রতিষ্ঠার সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং।
- স্বদেশী আন্দোলনের সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে "গোলদীঘির গোলামখানা" বলা হতো। ইংরেজি শিক্ষা দিয়ে কেরানি তৈরির জন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিলো বলে এমন নামে ব্যঙ্গ করা হতো।
১৮৫৮ - ভারতের প্রথম স্নাতক (পুরুষ)
- ১৮৫৮ খ্রিঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভারতের প্রথম স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন যদুনাথ বসু এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।
১৮৭২ - মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এটি প্রতিষ্ঠা করেন ।
- এর বর্তমান নাম বিদ্যাসাগর কলেজ।
১৮৭৬ - ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স
- এটি প্রতিষ্ঠা করেন মহেন্দ্রলাল সরকার।
- এটি ছিলো ভারতের প্রথম বৈজ্ঞানিক সংগঠন।
- বিজ্ঞানের গবেষণায় এই প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৮৮২ - হান্টার কমিশন
- উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে এই কমিশন গঠন করা হয়।
- এর উদ্দেশ্য ছিলো শিক্ষার বিস্তার সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা।
- এটি ছিলো ভারতের প্রথম শিক্ষা কমিশন।
১৮৮২ - ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক
- ১৮৮২ খ্রিঃ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক হন চন্দ্রমুখী বসু এবং কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়।
- কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসক।
১৮৯০ - ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বীরসিংহ গ্রামে তার মায়ের স্মৃতি রক্ষার্থে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
- এটি ছিলো বিদ্যাসাগরের প্রতিষ্ঠিত শেষ বিদ্যালয়।
১৯০১ - শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯০২ - Raleigh কমিশন
- লর্ড কার্জন sir Thomas Raleigh এর নেতৃত্বে Raleigh কমিশন গঠন করেছিলেন।
- এটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন নামেও পরিচিত ছিলো।
- এই কমিশনের দুজন ভারতীয় সদস্য ছিলেন - স্যার গুরুদাস ব্যানার্জি এবং সৈয়দ হুসেন বিলগ্রামী।
১৯০২ - ডন সোসাইটি গঠন
- সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৯০২ খ্রিঃ কলকাতাতে বিদ্যাসাগর কলেজের দোতলায় ডন সোসাইটি স্থাপন করেন।
- এটি ছিলো বাংলাদেশে জাতীয় শিক্ষা প্রবর্তনের প্রথম ধাপ।
১৯০৪ - ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন
- Raleigh commission এর সুপারিশ অনুযায়ী এই আইন তৈরি করা হয়।
- এই আইন অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় গুলির ওপর কঠোর সরকারী নিয়ন্ত্রন আরোপ করা হয়।
- লর্ড কার্জনের আমলে এই আইন প্রণয়ন করা হয়।
১৯০৬ - জাতীয় শিক্ষা পরিষদ
- বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের যুগে ৯২ জন সদস্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়।
- এর সভাপতি হন রাসবিহারী ঘোষ এবং যুগ্ম সভাপতি হন আশুতোষ চৌধুরী ও হীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
- এই পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়,
১৯০৬ - বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট
- তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের জন্য এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
- এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন প্রমথনাথ বসু।
- সভাপতি ছিলেন রাসবিহারী ঘোষ।
- ১৯১০ খ্রিঃ "বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট" "বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ" এর সঙ্গে মিশে যায়। ১৯৫৫ খ্রিঃ এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিনত হয়।
১৯১৪ - কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, স্যার তারকনাথ পালিত এবং রাসবিহারী ঘোষের উদ্যোগে কলকাতায় বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো।
১৯১৭ - বসু বিজ্ঞান মন্দির
- জগদীশ চন্দ্র বসু এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
- বিজ্ঞান চর্চার অগ্রনী প্রতিষ্ঠান ছিলো এটি।
১৯২১ - বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
- প্রতিষ্ঠাতা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
- প্রথম অধ্যক্ষ - বিধুশেখর ভট্টাচার্য।
- ১৯৫১ খ্রিঃ এই বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে।