উনিশ শতকে রক্ষনশীল হিন্দু সমাজের অন্যতম প্রধান মুখ ও নেতা ছিলেন রাধাকান্ত দেব। রক্ষনশীল হলেও, শিক্ষার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত উদার ও প্রগতিশীল ছিলেন। তিনি নিজে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন এবং চেয়েছিলেন "প্রাচ্যবাদী শিক্ষার কাঠামোর" মধ্যেই ভারতে "পাশ্চাত্য শিক্ষার" বিকাশ ঘটুক।
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে তার "বিভিন্ন উদ্যোগ" ও "নেতৃত্ব", রক্ষনশীল হিন্দু সমাজের বাধাকে অনেকটাই দূর করে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের পথকে করেছিলো মসৃন ও প্রশস্ত। ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে এটাই ছিলো তার সবথেকে বড়ো অবদান।
এ বিষয়ে তার স্মরণীয় উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা গুলি ছিলো -
ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকা |
(১.) হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা
রাধাকান্ত দেব হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।১৮১৭ খ্রিঃ কলকাতায় হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম একজন প্রধান মুখ ছিলেন রাধাকান্ত দেব।
কলেজের প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কলেজকে সাফল্য ও সুনামের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও রাধাকান্ত দেব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৮১৮ খ্রিঃ থেকে টানা ৩২ বছর হিন্দু কলেজের পরিচালন কমিটির সঙ্গে যুক্ত থেকে এই কলেজের আইন কানুন ও নিয়মাবলী রচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
(২.) শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ারকে সাহায্য
রাধাকান্ত দেব ডেভিড হেয়ারের নানা শিক্ষা উদ্যোগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন।
- ১৮১৭ খ্রিঃ ডেভিড হেয়ার যখন ইস্কুলের পাঠ্য বই রচনার জন্য "স্কুল বুক সোসাইটি" গঠন করেন, তখন রাধাকান্ত দেব পুস্তক রচনা ও প্রনয়নের ব্যাপারে তাকে নানা ভাবে সাহায্য করেন। এছাড়া,
- হেয়ার স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮১৮ খ্রিঃ "স্কুল সোসাইটি" গঠন করলে রাধাকান্ত দেব তার অবৈতনিক ভারতীয় সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগে সামিল হন।
(৩.) পাশ্চাত্য চিকিৎসা বিদ্যায় সাহায্য
(৪.) নারী শিক্ষার প্রসারে পৃষ্ঠপোষকতা
(৫.) মেট্রোপলিটন কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা
(৬.) শিক্ষার উপযোগী পুস্তক রচনা
শব্দকল্পদ্রুম ছিলো একটি সংস্কৃত অভিধান। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে রাধাকান্ত দেব এই অভিধান রচনা করেছিলেন। শব্দকল্পদ্রুম একটি কাল্পনিক গাছের নাম, যে গাছ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোন জিনিস দেওয়ার অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। সংস্কৃত ভাষায় এমন কোন শব্দ নেই, যার অর্থ শব্দকল্পদ্রুম এ লেখা নেই।
(৭.) ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষায় গুরুত্ব আরোপ
মূল্যায়ন
- রক্ষনশীল হিন্দুদের এই বিরোধিতাকে অনেকটাই দূর করতে পেরেছিলেন,
- রক্ষনশীল সমাজের প্রধান মুখ হয়ে এই সমাজকে পাশ্চাত্য শিক্ষার যথার্থতার দিকটি বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন,
- সর্বোপরি, স্ত্রী শিক্ষা, শব ব্যবচ্ছেদ ও ইংরেজি শিক্ষাকে সমর্থন করে তিনি যে প্রগতিশীল চিন্তার পরিচয় রেখে যেতে পেরেছিলেন, তা পরবর্তীকালে হিন্দু রক্ষনশীল সমাজকে প্রভাবিত করেছিলো। এর ফলে অনেকেই পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণে এগিয়ে এসেছিলেন।
- সবথেকে বড়ো কথা, ভারতীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরম্পরাকে বজায় রেখে ভারতীয় কাঠামোর মধ্যেই যে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব, সেটি রাধাকান্ত দেব প্রমান করে দিতে পেরেছিলেন। তার ফলে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে রক্ষনশীল হিন্দু সমাজের দ্বিধা দন্দ্বের অনেকটাই অবসান হয়েছিলো।