বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ - বিকাশ পর্ব (১৮০০-১৮১৬)

বাংলা ছাপাখানার বিকাশ নিয়ে আমরা ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করেছিলাম। প্রথম পর্বে আমরা বাংলা ছাপাখানার সূচনা পর্ব নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছি। আজ দ্বিতীয় পর্বে আমরা বাংলা ছাপাখানার বিকাশ পর্ব নিয়ে আলোচনা করবো। আমাদের আজকের আলোচনার সময়কাল - ১৮০০ - ১৮১৬।

বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ - বিকাশ পর্ব (১৮০০-১৮১৬)
বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ - দ্বিতীয় পর্ব 


বাংলা ছাপাখানার বিকাশ পর্ব (১৮০০  - ১৮১৬) 

১৮০০ খ্রিঃ থেকে ১৮১৬ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কালকে বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে "বিকাশ পর্বের" অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

এই সময় থেকে বাংলা মুদ্রন ব্যবস্থার প্রভূত বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। প্রধানত দুটি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে এই সময় বাংলা ছাপাখানার অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে। এর একটি ছিলো - (১.) শ্রীরামপুর মিশন, অপরটি ছিলো - (২.) ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। তবে এই পর্বে (৩.) ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ছাপাখানাকে আশ্রয় করে বাংলা ছাপাখানার যে "তৃতীয় ধারটি" প্রবাহমান ছিলো, সেটিও বাংলা ছাপাখানার বিকাশকে অনেকখানি ত্বরান্বিত করেছিলো।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও শ্রীরামপুর মিশন

১৮০০ খ্রিঃ বাংলাতে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। তেমনই এই বছরটিতেই প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রীরামপুর মিশন। 

 ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ভারতে আগত ইংরেজ সিভিলিয়ানদের দেশীয় ভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। অন্যদিকে খ্রিষ্টধর্ম প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো শ্রীরামপুর মিশন।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে পড়ানোর জন্য দরকার পড়েছিলো  পাঠ্যপুস্তকের। সেই সমস্ত পাঠ্যপুস্তক শ্রীরামপুর মিশন,"মিশন প্রেস" থেকে ছেপে দিয়েছিলো। এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক হিসাবে মিশন লাভ করেছিলো অর্থ। 

শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজটি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলেছিলো। এর ফলে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের কাছ থেকে শ্রীরামপুর মিশন যে অর্থ লাভ করেছিলো, তাকে সদ্ব্যবহার করে মিশন ছাপাখানার প্রভূত বিকাশ ঘটায়, এবং অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই  শ্রীরামপুর মিশন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাপাখানায় পরিনত হয়। 

বাংলা ছাপাখানায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান

প্রতিষ্ঠা

শ্রীরামপুর মিশন মার্শম্যান, ওয়ার্ড এবং উইলিয়াহম কেরির উদ্যোগেে ১৮০০ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। প্রতিষ্ঠার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মিশন বাংলা ছাপাখানার বিষয়ে়ে তৎপর হয়ে উঠেছিলো। 

মিশন প্রেসের সূচনা

 ১৮০০ খ্রিঃ, ১০ ই জানুয়ারি, একটিমাত্র কাঠের মুদ্রন যন্ত্র নিয়ে মিশন প্রেস তার ছাপাখানার কাজ শুরু করেছিলো। উডনি নামের একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি একটি মুদ্রনযন্ত্র কেরিকে নিলামে কিনে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন। 

কেরি এই মুদ্রন যন্ত্রটিকে মদনাবাটীর কুঠিতে স্থাপন করেন, এবং এখান থেকেই বাংলা ভাষায় বাইবেল ছাপার পরিকল্পনা করেন। সেইমতো তিনি বাইবেলের  একটি বঙ্গানুবাদও করে ফেলেন।

বাংলা হরফ তৈরি 

 কিন্তু বাংলায় বাইবেল ছাপতে  গিয়ে তিনি একটু সমস্যায় পড়ে গেলেন। বাংলায় ছাপার কাজ করতে গেলে বাংলা হরফ প্রয়োজন। তিনি হিসাব কষে দেখলেন, ইংল্যান্ড থেকে ছাপার হরফ তৈরি করিয়ে আনলে খরচ অনেক পড়ে যাবে। এই অবস্থায় কিভাবে বিকল্প উপায়ে বাংলা ছাপার হরফ তৈরি করা যায়, সেটি নিয়ে তিনি চিন্তা ভাবনা করতে থাকলেন। 

ইতিমধ্যে তিনি খবর পেলেন, কোলকাতায় কোম্পানির প্রেসে হরফ ঢালাইয়ের একটি কারখানা তৈরি হয়েছে। পঞ্চানন কর্মকার এটি তৈরি করেছিলেন। এ খবর পাওয়া মাত্র বিলম্ব না করে কেরি কোম্পানির প্রেস থেকে পঞ্চানন কর্মকারকে ভাঙ্গিয়ে নিয়ে এলেন। পঞ্চানন কর্মকার কেরির ছাপাখানার জন্য বাংলা হরফ তৈরি করে দিলেন। 

 প্রেসের স্থানান্তর এবং বই প্রকাশ 

এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কেরি তার ছাপাখানাটি উত্তরবঙ্গের মদনাবতী থেকে শ্রীরামপুরে নিয়ে এলেন। এখানে ছাপার কাজে কেরির প্রধান সহযোগী হন দক্ষ মুদ্রাকর উইলিয়াম ওয়ার্ড। বাংলা অক্ষর তৈরির কাজে পঞ্চানন কর্মকার কে কেরি পাকাপাকি ভাবে নিযুুক্ত করলেন। 

কিছুদিনের মধ্যেই শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে ছেপে বের হয় নিউ টেস্টামেন্টের বাংলা অনুবাদ বই "ধম্মপুস্তক"। এরপর রামরাম বসুর লেখা "হরকরা" ও "জ্ঞানোদয়" নামে দুটি বই মুদ্রিত হয়। এই বই দুটি ছিলো মিশন প্রেসের মুদ্রিত প্রথম বাংলা পুস্তিকা

প্রেসের কলেবর বৃদ্ধি 

অল্প দিনের মধ্যেই মিশন প্রেসের কলেবর দ্রুত বৃদ্ধি পেলো। ১৮১৫ খ্রিঃ মিশনে মুদ্রন যন্ত্রের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ টি। ১৮২০ খ্রিঃ তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ টিতে। পঞ্চানন কর্মকারের মৃত্যুর পর তার জামাতা মনোহর কর্মকার মিশনে একটি হরফ ঢালাইয়ের কারখানা খোলেন। অন্যদিকে, মিশনের গোন্ডির মধ্যেই কাগজ ও কালি তৈরির ব্যবস্থা করে, এবং অনুবাদ বিভাগ স্থাপন করে শ্রীরামপুর মিশন একটি স্বয়ং সম্পূর্ন সুবৃহৎ মুদ্রন প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়। 

বাংলা ছাপাখানায় মিশন প্রেসের কৃতিত্ব

বাংলা ছাপাখানায় শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের প্রধান কৃতিত্ব ছিলো দুটি - 

  • শ্রীরামপুর মিশনই ছিলো বাংলার প্রথম স্বয়ং সম্পূর্ণ সুবৃহৎ মুদ্রন প্রতিষ্ঠান। 
  • এই মিশন থেকে প্রকাশিত অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক সমকালীন সময়ে বাংলা বইয়ের চাহিদাকে যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছিলো, তা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই পরবর্তীকালে ছাপাখানা খুলতে এগিয়ে এসেছিলেন। 

কেরির জীবনী কার জর্জ স্মিথের রচনা থেকে জানা যায়, কেরির জীবদ্দশায় ১৮৩২ খ্রিঃ মধ্যে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে ৪০ টি ভাষায় দুই লক্ষ বারো হাজার বই ছেপে বের হয়েছিলো। ১৮১২ - ১৮১৪ খ্রিঃ মধ্যে মিশন প্রেসে ছাপা বাংলা ধর্মীয় পুস্তকের সংখ্যা ছিলো ৩৫,২৩৮ টি। 

এই পুস্তক গুলি ছাড়াও অসংখ্য বাংলা গদ্য পুস্তক মিশন প্রেস থেকে ছেপে বের হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো - রামরাম বসুর রাজা প্রতাপাদিত্য, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কারের বত্রিশ সিংহাসন, হিতোপদেশ, রাজা বলি, কাশীরাম দাসের মহাভারত, কীত্তিবাসের রামায়ন। 

মিশন প্রেসের ছাপা বইয়ের অধিকাংশই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। ছাপা বই সংরক্ষণের জন্য সেখানে একটি গ্রন্থাগারও গড়ে তোলা হয়।এছাড়া স্কুল বুক সোসাইটির অনেক বইও মিশন প্রেসেে ছাপা হতো। 

এইভাবেই দেখা যায় কেরির অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর উদ্যোগের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই শ্রীরামপুর মিশন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাপার কারখানা হয়ে ওঠে। 

দেশীয় ছাপাখানা 

মিশনারি ও সরকারি ছাপাখানার পাশাপাশি এইসময়, অনেক দেশীয় ছাপাখানাও স্থাপিত হয়েছিলো। দেশীয় এই সমস্ত ছাপাখানা গুলি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মূলত ব্যবসার জন্যই গড়ে তোলা হয়েছিলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো - 

  • কলকাতার হিন্দুস্থানি প্রেস (১৮০২), 
  • খিদিরপুরের সংস্কৃত যন্ত্র (১৮০৭), 
  • ফেরিস অ্যান্ড কোম্পানি, এবং 
  • গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের "বাঙ্গালি প্রেস"। 
১৮০০ থেকে ১৮১৬ খ্রিঃ বাংলা ছাপাখানার বিকাশ পর্বে শ্রীরামপুর মিশন মহীরুহের ভূমিকা পালন করলেও, ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত এই সমস্ত প্রেস গুলির ভূমিকা এবং অবদানও উপেক্ষনীয় ছিলো না। 

পরিশিষ্ট 


বাংলা ছাপাখানার বিকাশ পর্বের এই আলোচনায় সবার শেষে দুজন ব্যক্তির অবদানকে আমরা একটু পৃথক ভাবে আলোচনা করবো। এঁদের একজন অবশ্যই পঞ্চানন কর্মকার, অন্যজন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। বাংলা ছাপাখানায় ইতিহাসের অসামান্য অবদানের স্বাক্ষর রাখা সত্ত্বেও, এদের একজন স্মরণীয় হলেও, অপরজন প্রদীপের আড়ালেই থেকে গেছেন। 

বাংলা ছাপাখানায় পঞ্চানন কর্মকারের অবদান


পঞ্চানন কর্মকারের বিষয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছি। হুগলির ত্রিবেনীর অধিবাসী ছিলেন, পঞ্চানন কর্মকার। হুগলির ত্রিবেনীর অধিবাসী পঞ্চানন কর্মকারই একমাত্র বাঙালি ছিলেন, যিনি ছেনিকাটা বাংলা হরফ নিখুঁত ভাবে তৈরি করতে পেরেছিলেন। তার সুযোগ্য অবদান ছাড়া উইলকিন্সের পক্ষে কখনই বাংলা মুদ্রনের কাজটি করা সম্ভব ছিলো না। 

অথচ বাংলা মুদ্রনের ক্ষেত্রে পঞ্চাননের এই বিরাট অবদানের ছিটেফোঁটার কথা কোম্পানির কোনও নথিপত্রে নেই। যাবতীয় কৃতিত্ব উইলকিন্সকে দেওয়া হয়েছিলো। পঞ্চানন কর্মকারের কথা ইতিহাসে আলাদা করে আলোচনাও করা হয় না। এটি ইতিহাসের একধরনের অবিচার ও অবমূল্যায়ন ছাড়া আর কিছুই নয়। 

পঞ্চানন কর্মকার কোম্পানির প্রেস থেকে পরে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে যোগ দিয়েছিলেন। মিশন যে বাংলা মুদ্রনের ক্ষেত্রে এতটা সফল হতে পেরেছিলো, তার অন্তরালে ছিলো পঞ্চানন কর্মকারের পরিশ্রম। তার তৈরি বাংলা হরফের হাত ধরেই বাংলা মুদ্রন এগিয়ে যেতে পেরেছিলো। 

মিশন অবশ্য কোম্পানির মতো অতখানি অকৃতজ্ঞ ছিলো না। শ্রীরামপুর মিশন ছাপাখানায় পঞ্চাননের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠাবোধ করে নি। একমাত্র মিশনের রেখে যাওয়া তথ্যসূত্র থেকেই আমরা পঞ্চানন কর্মকারের বিষয়ে জানতে পারি। 

পঞ্চানন কর্মকার তার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মিশনে হরফ ঢালাইয়ের কাজ করতেন। তার মৃত্যুর পর তার শিষ্য এবং জামাতা মনোহর কর্মকার পঞ্চাননের অসম্পূর্ণ কাজকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। 

বাংলা ছাপাখানার ইতিহাসে তাই পঞ্চানন কর্মকারের মতো প্রান্তিক এক মানুষের অসামান্য অবদানের কথা, পৃথকভাবে স্মরন করতেই হয়। কারন তার মতো দক্ষ কারিগর ছিলো বলেই বাংলা মুদ্রন দ্রুত ছাপার অক্ষরে রূপলাভ করতে পেরেছিলো। 

গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ও বাংলা ছাপাখানা

বাংলা মুদ্রনের ইতিহাসে আরেকজন অসামান্য ব্যক্তির কথা আমাদের স্মরন করতে হয়, তিনি হলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ছিলেন প্রথম বাঙালি মুদ্রন ব্যবসায়ী, পুস্তক ব্যবসায়ী, প্রকাশক এবং গ্রন্থাকার। 

সংক্ষিপ্ত জীবনী ও কর্মজীবন

গঙ্গাকিশোর অষ্টাদশ শতকে গঙ্গাতীরবর্তী অগ্রদ্বীপ গাজীপুরের কাছে বহড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় ইংরেজী শিখে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসে কম্পোজিটরের চাকরিতে যোগ দেন। প্রকৃতিগত দিক থেকে তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাধীনচেতা স্বভাবের মানুষ। সম্ভবত,সেই কারনেই কম্পোজিটরের কাজ করলেও. শ্রীরামপুরে থাকা অবস্থায় ছাপাখানার সবরকম কাজই তিনি শিখে নেন। 

পরে তিনি স্বাধীন ভাবে জীবিকা অর্জনের জন্য উনিশ শতকের প্রথম দিকে কলকাতায় চলে আসেন, এবং বই প্রকাশ ও বই বিক্রির ব্যবসাতে নেমে পড়েন। 

বাংলার প্রথম সচিত্র বইয়ের প্রকাশ

১৮১৬ খ্রিঃ গঙ্গাাকিশোর "ফেরিস অ্যান্ড কোম্পানি প্রেস" থেকে বাংলার প্রথম সচিত্র বই "অন্নদামঙ্গল কাব্য" ছেপে বের করেন। 

তখনকার দিনের নামকরা শিল্পী রামচাঁদ রায়ের খোদিত ছ খানি ধাতু খোদাই ও কাঠ খোদাই ছবি এতে ছিলো। বইটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিলো ৩১৮।

বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস স্থাপন

অন্নদামঙ্গলের তুমুল জনপ্রিয়তা ও বিক্রি দেখে গঙ্গাকিশোর উৎসাহিত হয়ে নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার কথা চিন্তা ভাবনা করলেন। এরই ফলস্রুতিতে ১৮১৮ খ্রিঃ কলকাতার ১৪৫ নং চোরবাগান স্ট্রীটে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন "বাঙ্গাল গেজেটি যন্ত্রালয় বা প্রেস"। 

বাংলার প্রথম সংবাদপত্রের প্রকাশ

এই প্রেস থেকেই তিনি ১৮১৮ খ্রিঃ ১৫ ই মে শুক্রবার, প্রকাশ করেন বাংলার প্রথম সংবাদপত্র "বাঙ্গাল গেজেটি"।

দুর্ভাগ্যবশত এর কোন সংখ্যা আজও পাওয়া যায় নি। পাওয়া গেলে এটিই হতো বাংলার প্রথম সংবাদপত্র। বাঙ্গাল গেজেটি প্রকাশিত হবার ৮ দিন পরে ১৮১৮ খ্রিঃ ২৩ মে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় "সমাচার দর্পন"

কলকাতা থেকে ছাপাখানা স্থানান্তর

গঙ্গাকিশোর ছাপাখানা এবং বইব্যবসাতে প্রভূত লাভবান হওয়ায়, শেষের দিকে নানা কারনে তার বই ব্যবসার পার্টনার হরচন্দ্র রায়ের সঙ্গে বিরোধ ও মনোমালিন্য দেখা যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গঙ্গাকিশোর ১৮১৯ খ্রিঃ কলকাতা থেকে প্রেস নিয়ে চলে আসেন নিজের গ্রাম বহড়ায়। এরপর বহড়া থেকেই তিনি নানা বইপত্র ছেপে বিক্রি করতে থাকেন।

 এই সমস্ত বইপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো - অন্নদামঙ্গল কাব্য, এ গ্রামার ইন ইংলিশ অ্যান্ড বেঙ্গলী, গনিত নামতা, দায়ভাগ, দ্রব্যগুন, শ্রীমদ্ভাবতগীতা ইত্যাদি। 


চলবে..... 


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post