ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ

বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার অল্প কিছু কালের মধ্যেই ছাপাখানার বানিজ্যিক উদ্যোগটি লক্ষ্য করা যায় । বাংলায় ছাপাখানার বানিজ্যিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে ইওরোপীয়দের প্রাধান্য দেখা গেলেও, পরের দিকে ছাপাখানা বাঙালিদের একচেটিয়া কারবারে পরিনত হয়। 

ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত হতে থাকে বিভিন্ন স্বাদের বই ও নানা পত্র পত্রিকা। কালক্রমে বই এবং সংবাদপত্র ছাপা, তার প্রকাশ ও বিপনন শুধু লাভজনক ব্যবসা হিসাবেই উঠে আসে না। তা প্রকৃতপক্ষে বাঙালির কাছে আত্মমর্যাদা ও  বৌদ্ধিক জ্ঞান চর্চারও একটি বিষয় হয়ে দাড়ায়।

সময়ের হাত ধরে ধীরে ধীরে মুদ্রনশিল্প একটি প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারি ব্যবসা হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কাগজ বিক্রি, কালি তৈরি, বই ছাপানো, বই বাঁধাই, বই বিক্রি, মেশিন সারাই ইত্যাদি নতুন নতুন পেশার প্রসার ঘটতে থাকে।ছাপাখানাকে অবলম্বন করে সমাজে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। 

ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ
ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ 


ইওরোপীয়দের ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ 

বাংলা ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগটি অবশ্য ইওরোপীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারাই প্রথম লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। এ প্রসঙ্গে  প্রথমেই আমরা জেমস অগাস্টাস হিকির কথা স্মরন করতে  পারি।

হিকির ছাপাখানার ব্যবসা

হিকি ভাগ্যান্বেষনের জন্য ইংল্যান্ডের ব্যাকিংহাম থেকে কলকাতায় এসেছিলেন। ঘটনাচক্রে জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে একটি ছাপাখানা খুলেছিলেন। সেখানে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কোম্পানির নানা সরকারি কাগজপত্রের তিনি প্রিন্ট করতেন। পরবর্তীকালে কোম্পানির নিজস্ব প্রেস কোলকাতায় গড়ে উঠলে হিকির কাজের বরাত কমে যায় এবং তিনি ছাপাখানা ব্যবসার জন্য বিকল্প কিছু উপায়ের কথা ভাবতে থাকেন।

এই ভাবনার ফলস্রুতিতেই তিনি ১৭৮০ খ্রিঃ তার ছাপাখানা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশ করেন। তার প্রকাশিত "বেঙ্গল গেজেট" নামের সংবাদপত্রটি ছিলো ভারতের প্রথম সংবাদপত্র। বলার অপেক্ষা রাখে না, সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কারনেই  হিকি তার সংবাদপত্রটি প্রকাশ করেছিলেন। এখানে বিজ্ঞাপন ও পত্রিকার বিক্রি থেকে হিকি ভালোই রোজগার করতেন।

হিকি পরবর্তী ইওরোপীয়দের সংবাদপত্রের ব্যবসা

পরবর্তীকালে হিকির দেখা দেখি আরোও নানা পত্রিকা ও ছাপাখানা ব্যবসায়িক ভিত্তিতে গড়ে উঠতে আরম্ভ করেছিলো। যেমন - ক্যালকাটা গেজেট প্রেস, ক্রনিকল প্রেস ইত্যাদি। অল্প সময়ের মধ্যেই এক একটি পত্রিকাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এক একটি ছাপাখানা গড়ে উঠতে আরম্ভ করে।

১৭৮০ - ১৭৯০  খ্রিঃ মধ্যে কলকাতায় বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে ১৯ টি সাপ্তাহিক এবং ৬ টি মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে।এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায়, সংবাদপত্র বিক্রি ধীরে ধীরে লাভজনক একটি পেশা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে শুরু করেছিলো, এবং অনেকেই নতুন এই ব্যবসায় পা রাখতে আরম্ভ করছিলেন। 

অ্যানড্রুজের ছাপাখানা ও বইয়ের দোকান

ছাপাখানার বানিজ্যিক উদ্যোগে ইওরোপীয়দের ভূমিকার ক্ষেত্রে হুগলির অ্যানড্রুজ সাহেবের ছাপাখানার কথাও বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয়। অ্যানড্রুজ সাহেবের ছাপাখানা থেকেই হ্যালহেডের ব্যাকরন ছেপে বের হয়েছিলো। আমরা আগেই আলোচনা করেছি, এই অ্যানড্রুজের ছাপাখানা টি পরবর্তীকালে কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছিলো। ১৭৮১ খ্রিঃ এই ছাপাখানাটি কলকাতায় স্থানান্তরিত হয় এবং এর নাম হয় "অনারেবল কোম্পানি প্রেস"।

এটি ছিলো কলকাতার সবচেয়ে বড়ো প্রেস। এখানে সরকারি কাজের পাশাপাশি বাইরের বিভিন্ন বইপত্র ও অন্যান্য ছাপার কাজও ব্যবসায়িক ভিত্তিতে চলতো।

১৮২২ খ্রিঃ একটি বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, লালদীঘিতে "সেন্ট অ্যানড্রুজ" নামের একটি বিলিতি বইয়ের দোকান ছিলো। এই দোকানে বিদেশী নানা বইয়ের পাশাপাশি দেশীয় ভাষায় ছাপা বইও বিক্রি করা হতো। হ্যালহেডের ব্যাকরনও নিশ্চয়ই এখানে বিক্রি হতো। 

সুতরাং একথা বলা যায়, ছাপাখানার জগতে বাংলা হরফ সম্বলিত প্রথম বইয়ের লেখক থেকে মুদ্রাকর, বিক্রেতা, সবাই ইওরোপীয় ছিলেন। আধুনিক রীতিতে কমিশন দিয়ে বই বিক্রির ব্যবস্থা কলকাতায় শুরু হয় এই ইংরেজ ব্যবসায়ীদের দ্বারাই।

শ্রীরামপুর মিশনের বই ব্যবসা

১৮০০ খ্রিঃ পর বাংলা ছাপাখানায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে শ্রীরামপুর মিশন এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। শ্রীরামপুর মিশন থেকে নানা স্বাদের বই ছেপে বের হবার ফলেএকটি বাঙালি পাঠকগোষ্ঠী সৃষ্টি হলো। কালক্রমে এই পাঠক গোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলো। এর সাথে  সাথে বইয়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পেলো। ইতিমধ্যেই শ্রীরামপুরের ছাপা অনেক বই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা পূরন করে।

কিন্তু মনে রাখতে হবে, বাংলা বই তখনও পর্যন্ত গুটিকয়েক মানুষ অর্থাৎ ছাত্র শিক্ষকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। বানিজ্যিক ভাবে তার বিক্রি সেভাবে শুরু হয় নি।

বাংলা বইয়ের বানিজ্যিকীকরন ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ 

বাংলা বইয়ের বানিজ্যিকীকরনের ক্ষেত্রে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের একটি ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলো।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে একটি গ্রন্থাগার গড়ে তোলা হয়েছিলো। কলেজের ছাত্র, শিক্ষকদের পাশাপাশি আগ্রহী কিছু পাঠককে সেখানে বই পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। 

কিন্তু এই ঘটনার কিছু দিনের মধ্যেই গ্রন্থাগার থেকে বহু বই চুরি যেতে লাগলো। বই চুরির বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ কে অত্যন্ত বিচলিত করে তুলেছিলো। বই চুরির ঘটনা থেকে বোঝা গিয়েছিলো, বই পড়ার একটি বিরাট আগ্রহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে। কিন্তু বই কেনার কোন ব্যবস্থা নেই।

এর ফলে কলেজ কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেয়, ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বইগুলি খোলা বাজারেও বিক্রি হবে। এই জন্য বই বিক্রির উদ্দেশ্যে কয়েকজন পুস্তক বিক্রেতাকে এজেন্ট নিযুক্ত করা হয়। এবং এই ভাবেই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের উদ্যোগে শুরু হয়েছিলো বই বিক্রির ব্যবসা। 

স্কুল বুক সোসাইটির বই ব্যবসা

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পরবর্তীকালে বাংলা পুস্তক রচনা এবং বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় স্কুল বুক সোসাইটি১৮১৭ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত স্কুল বুক সোসাইটি থেকে মাত্র একবছরে ৬৫ টি বাংলা বই ছেপে বেরিয়েছিলো। প্রধানত স্কুলের জন্যই সোসাইটি বই ছেপে বিক্রি করতো। 

কলকাতা এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে বইয়ের বিতরন কেন্দ্র স্থাপন, বিক্রেতাদের কমিশন প্রদান ইত্যাদির মধ্য দিয়ে স্কুল বুক সোসাইটি আধুনিক রীতিতে বইয়ের ব্যবসা আরম্ভ করেছিলো। 


দেশীয় ব্যক্তিদের ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ 

 বাংলায় ধীরে ধীরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে।ফলে ছাপাখানার গুরুত্বও পূর্বের থেকে অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠা থেকে ক্রমে একটি শিক্ষিত শ্রেনীর জন্ম হয়। ঐ শিক্ষিত শ্রেনীর চিন্তা ভাবনা, মতাদর্শ বহিঃপ্রকাশের জন্য প্রয়োজন পড়ে বই আর সংবাদপত্রের।বই আর সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য প্রয়োজন পড়ে ছাপাখানার। 

এইভাবেই দেখা যায়, শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষিত শ্রেনী এই তিনটি বিষয়কে অবলম্বন করে যে জ্ঞান চর্চা ও বৌদ্ধিক আত্মপ্রকাশের তাগিদ লক্ষ্য করা যায়, তা থেকেই দেশীয় শিক্ষিত সম্প্রদায় ছাপাখানা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ক্রমে এই বৌদ্ধিক তাগিদ থেকেই এসেছিলো ছাপাখানার ব্যবসায় দেশীয় উদ্যোগ। 

ছাপাখানার প্রথম বাঙালি ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা

ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া এবং সমাচার দর্পনের তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলা বই বিক্রির জন্য গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যই প্রথম দোকান খোলেন ১৮১৫ - ১৬ খ্রিঃ নাগাদ। তিনি গ্রামাঞ্চল ও শহরে বই বিক্রির সুবিধার জন্য এজেন্ট নিযুক্ত করেছিলেন। পরে নিজেই "বাঙ্গাল গেজেটি" প্রেস স্থাপন করে নিজস্ব ছাপাখানায় বই ছেপে বিক্রি করতেন। 

বই ছাড়াও, নিজস্ব প্রেস থেকে গঙ্গাকিশোর প্রকাশ করেন বাঙালি সম্পাদিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্র "বাঙ্গাল গেজেটি" ।এখানে বলে রাখা প্রয়োজন,গঙ্গাকিশোরই ছিলেন বাংলা ছাপাখানার প্রথম বাঙালি ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা, বাংলার প্রথম সচিত্র বই "অন্নদামঙ্গল" ছেপে বের করার মধ্য দিয়েই যার বানিজ্যিক আত্মপ্রকাশ ঘটেছিলো।

বিদ্যাসাগরের বই ব্যবসা

গঙ্গাকিশোরের পর কোলকাতায় গড়ে উঠেছিলো স্কুল বুক সোসাইটির দোকান (১৮২৬)। এরপর স্থাপিত হয় বিদ্যাসাগরের "সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি", এবং"কলিকাতা পুস্তকালয়"। 

ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা এবং বই বিক্রি করে বিদ্যাসাগর অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছিলেন। ছাপাখানা থেকে তার মাসিক আয় দাড়িয়েছিলো তিন থেকে চার হাজার টাকা। এই বানিজ্যিক সাফল্যের জন্য বিদ্যাসাগর কে "বিদ্যাবনিক" এবং আধুনিক বই ব্যবসার প্রথম পথপ্রদর্শক বলা হয়। 

বটতলা প্রকাশনীর বই ব্যবসা

বাংলা বই বা ছাপার ব্যবসায়িক উদ্যোগের ক্ষেত্রে "বটতলা প্রকাশনী" কিন্তু একটি বিরাট ভূমিকা নিয়েছিলো। সস্তার বই বিক্রির ক্ষেত্রে বটতলা প্রকাশনী একটি প্রতিযোগীতার পরিবেশ তৈরি করেছিলো। বাংলা বইকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পাঠকদের কাছে পৌঁছেও দিয়েছিলো। 

পত্রিকা ও বই ব্যবসার ধরন ও বৈশিষ্ট্য 

মনে রাখতে হবে, বাংলা ছাপাখানার প্রথম যুগে এখনকার মতো এত বইয়ের দোকান ছিলো না। বাংলা বই ছাপা শুরু হবার বেশ কিছুকাল পর পর্যন্ত তা বিক্রি হতো ছাপাখানা থেকে। তাই বইয়ের প্রাপ্তিস্থান হিসাবে ছাপাখানার নাম থাকতো। প্রকাশকের নাম থাকতো না। কখনো কখনো লেখক বা তার বন্ধু, আত্মীয় স্বজনের ঠিকানাও দেওয়া থাকতো। পত্রিকা বা সংবাদপত্রের ক্ষেত্রেও নিয়মটা প্রায় একই রকমের ছিলো। 

ছাপাখানার প্রথম দিকে বই বা পত্রিকা বিক্রি হতো   ফেরিওয়ালা মারফৎ বাড়ি বাড়ি ফেরি করে। এটি এখনো কোথাও কোথাও লক্ষ্য করা যায়। তবে এখনকার মতো নতুন বইয়ের প্রকাশ বিজ্ঞাপন দিয়ে তখন জানানো হতো না। তখন বইয়ের প্রকাশ এতটাই কম ছিলো যে, নতুন বইয়ের প্রকাশ একটি সংবাদ হিসাবে উঠে আসতো। বই বা পত্রিকা ছেপে বের করবার আগেই ক্রেতাদের নাম নথিভুক্ত করতে হতো। আগে বুকিং করলে কিছু কমিশনও ক্রেতাদের দেওয়া হতো। 

বই ব্যবসার কেন্দ্র রূপে কলেজ স্ট্রিট 

বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি স্থাপিত হবার পর কলেজ স্ট্রিট অঞ্চলে ধীরে ধীরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এর ফলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই কলেজ স্ট্রিট অঞ্চল কেন্দ্র করে বইয়ের ব্যবসা কেন্দ্রীভূত হতে শুরু করে। 

 ১৯২২ খ্রিঃ  কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় "বঙ্গীয় প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা সভা"। এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি ছিলেন শরৎকুমার লাহিড়ি এবং গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়। 

নেশা থেকে পেশার ব্যবসা : সবকিছুকে ছাপিয়ে ছাপাখানা

ধীরে ধীরে বানিজ্যিক লাভের জন্য ছাপাখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় । ১৮০০ খ্রিঃ মধ্যে কলকাতায় ১৭ টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়, যা ১৮৪০ এ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৫০ টি তে। ১৮৮৫ খ্রিঃ সারা ভারতে ১০৯৪ টি ছাপাখানা গড়ে উঠে, যার মধ্যে বাংলাদেশেই গড়ে ওঠে ২২৯ টি ছাপাখানা।

এই সময় ছাপাখানার মালিকরা বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছেপে তাদের ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টা চালান। কালক্রমে মুদ্রনশিল্প একটি প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারি ব্যবসা হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কাগজ বিক্রি, বই ছাপানো, বই বাঁধাই বই বিক্রি প্রভৃতি পেশার প্রসার ঘটতে থাকে। 

উনিশ শতকে বাঙালির কাছে ছাপাখানা একটি অন্যতম নেশা ও পেশার বিষয় হয়ে দাড়ায়। এইসময় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার জন্য অনেকে পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে দিতেও কসুর করেন নি। এইসব বাঙালি উদ্যোক্তাদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন - 

কৃষ্ণদাস পাল, রাধাকান্ত দেব, ঈশ্বর গুপ্ত, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, অশ্বিনীকুমার দত্ত, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, কেশবচন্দ্র সেন, নবগোপাল মিত্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ প্রমুখ। 


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post