বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ - আধুনিক পর্ব (১৮৩৫ - ১৯৩৫)

 বাংলায় ছাপাখানা বিকাশের আলোচনার এটিই আমাদের শেষ পর্ব। আজকের চতুর্থ পর্বটিতে আমরা বাংলা মুদ্রনের আধুনিক যুগ কে নিয়ে আলোচনা করবো। আধুনিক যুগ বলতে অবশ্য বর্তমান সময়কালকেও বোঝায়। তাই শুরুতেই আমাদের আলোচনার পরিধির বিষয়টা স্পষ্ট করে দেওয়া প্রয়োজন। আমরা আজকের পর্বটির আলোচনার সময়কাল ১৮৩৫ থেকে ১৯৩৫ খ্রিঃ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রেখেছি। 


বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ - আধুনিক পর্ব (১৮৩৫ - ১৯৩৫)
বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ - চতুর্থ পর্ব 


বাংলা ছাপাখানার আধুনিক যুগ (১৮৩৫-১৯৩৫)

১৮৩৫ খ্রিঃ পর থেকেই বাংলা ছাপাখানা তার আধুনিক পর্বে পদার্পণ করেছিলো। এই সময় বাংলা ছাপাখানায় প্রধানত ৩ টি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য দেখা গিয়েছিলো - 

  • মুদ্রনের গতিশীল চেহারা বা মুদ্রনকে দ্রুত করে তোলার নতুন পদ্ধতির উদ্ভাবন, 
  • মুদ্রনের সুবিধার্থে বাংলা বর্ণমালার সংস্কার, যেটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর করেছিলেন, এবং
  • বাংলায় রঙিন মুদ্রনের আবির্ভাব, যেটি উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর হাত ধরে এসেছিলো। 
১৮৩৫ খ্রিঃ আগেই অসংখ্য পত্র পত্রিকা, পাঠ্যপুস্তক আর চাহিদার গুনে ধীরে ধীরে বাংলা মুদ্রন তার গতিশীল চেহারা লাভ করতে শুরু করেছিলো। এর মধ্যেই ছাপাখানা একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে গিয়েছিলো। অনেকেই তাই এই সময়ে তাদের সঞ্চিত অর্থ ছাপাখানায় বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসেন। ব্যক্তিগত ভাবে পত্রিকা প্রকাশ এবং ছাপাখানা স্থাপন এই সময় শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কাছে সামাজিক মর্যাদা ও প্রতিপত্তি লাভের মানদন্ডে পরিনত হয়েছিলো।


বাংলা ছাপাখানা ও বিদ্যাসাগর

আধুনিক বাংলা মুদ্রন প্রকাশনায় এই সময় যে সমস্ত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ অবদানের সাক্ষ্য রেখে যেতে পেরেছিলেন, তাদের মধ্যে সবথেকে বেশি স্মরণীয় ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। 

সংস্কৃত প্রেস স্থাপন

বিদ্যাসাগর নিজেই বাংলা মুদ্রন প্রকাশনা, ছাপাখানা পরিচালনা ও বইয়ের ব্যবসার কাজে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৮৪৭ খ্রিঃ তিনি বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারের সঙ্গে যৌথভাবে ৬২ নং আমহাস্ট স্ট্রীটে "সংস্কৃত প্রেস" নামে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। 

বাংলা বর্ণমালার সংস্কার 

বাংলা ছাপাখানার ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদানের প্রধান দিকটি ছিলো বাংলা বর্ণমালার সংস্কার

মূলত (১.) বাংলা ভাষা শিক্ষার প্রসার এবং (২.) বাংলা মুদ্রনের কাজকে সহজ সরল ও বিজ্ঞান সম্মত করবার জন্যই বিদ্যাসাগর বাংলা স্বরবর্ন ও ব্যাঞ্জনবর্ন গুলির সংস্কার করেন। 
তিনি স্বরবর্ন ও ব্যাঞ্জনবর্ন গুলির একটি আদর্শ রূপ দিয়ে "বর্নপরিচয়" প্রথমভাগ ও দ্বিতীয়ভাগ, যথাক্রমে ১৮৫৫ খ্রিঃ ১৩ এপ্রিল এবং ১৪ জুন প্রকাশ করেন। 

বিদ্যাসাগর বর্নপরিচয়ে মোট ৫২ টি বর্নকে রেখে দিয়ে, অপ্রয়োজনীয় বর্নগুলিকে বাদ দিয়ে দেন। এর মধ্যে স্বরবর্নের সংখ্যা ছিলো ১২ টি এবং ব্যাঞ্জনবর্নের সংখ্যা ছিলো ৪০ টি। তার এই সংস্কার কাজের ফলে বাংলা হরফ জটিলতা মুক্ত হয়ে একটি স্ট্যান্ডার্ড রূপ লাভ করে। 

বিদ্যাসাগর সার্ট

বিদ্যাসাগর সম্পূর্ণ নতুনভাবে এবং নতুন ছাঁচে ছাপার অক্ষর তৈরি করান। বিদ্যাসাগরের বর্ণমালার ভিত্তিতে যে বাংলা মুদ্রাক্ষর তৈরি হয়েছিলো, তা "বিদ্যাসাগর সাট" নামে পরিচিত হয়। 

বিদ্যাসাগরের বাংলা বর্ণমালা সংস্কারে উচ্ছ্বসিত হয়ে ভার্নাকুলার এডুকেশন সোসাইটির পাদ্রি জন মার্ডক এক চিঠিতে বিদ্যাসাগরকে বাংলা যুক্তাক্ষর ভেঙ্গে দেওয়ার কথা বলেন। তার মতে, এর ফলে বাংলা ভাষা শিক্ষা এবং মুদ্রন, দুটোই অত্যন্ত সহজ হয়ে যাবে। যুক্তাক্ষর ভেঙ্গে দিলে বাংলা ভাষা শেখা, লেখা, পড়া এবং ছাপা, সবগুলিই সহজ হবে।
উদাহরন দিয়ে মার্ডক বলেছিলেন, চিক্কন হতে পারে চিক্কন, 
চিন্তা হতে পারে চিন্তা, বন্ধু হতে পারে বন্ধু। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই বিষয়ে বিদ্যাসাগরের কোন প্রতিক্রিয়া জানা যায় নি। প্রস্তাবটিও বাস্তবায়িত হয় নি। 

বিদ্যাসাগর থেকে বিদ্যাবনিক

এখানে আরো একটা কথা বলা প্রয়োজন, বিদ্যাসাগর শুধু যে ছাপাখানা খুলেছিলেন, তাই নয় ।ছাপাখানার বই গুলি বিক্রির জন্য ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কোলকাতায় একটি দোকানও খুলেছিলেন। শুধুমাত্র স্কুল পাঠ্য বই ছেপেই সেই সময়ে তার মাসিক আয় দাড়িয়েছিলো তিন থেকে চার হাজার টাকা। তৎকালীন সময়ের এই আয় যে কি বিরাট পরিমানের ছিলো, তা সেই সময়ের অর্থনীতির হালহকিকৎ বিশ্লেষণ করলে সহজেই অনুমান করে নেওয়া যায়। 

ছাপাখানা থেকে বিপুল মুনফা লাভ করবার জন্য তৎকালীন সময়ে অনেকেই বিদ্যাসাগরকে "বিদ্যাবনিক" বলে ডাকতে। 


বটতলা সাহিত্য 

 বিদ্যাসাগরের মুদ্রন প্রকাশনার আগে থেকেই অবশ্য কলকাতায় আরোও একটি প্রকাশনাধারা চলছিলো, যা প্রধানত বটতলা সাহিত্য নামে পরিচিত ছিলো। 

বটতলার ভৌগলিক এলাকা

বাংলা ছাপাখানার বিকাশে বটতলা সাহিত্যের গুরুত্বও ছিলো অপরিসীম। উত্তর কলকাতার শোভাবাজার থেকে বিডন স্কোয়ার পর্যন্ত বিস্তৃত চিৎপুরের রাস্তার দু দিকের অঞ্চলকে বলা হতো বটতলা। 

চিৎপুরে, শোভাবাজার, কুমারটুলি, আহিরীটোলা, দর্জিপাড়া, গড়ানহাট, চোরবাগান, জোড়াসাঁকো, সিমলা, মির্জাপুর, শিয়ালদহ, বউবাজার, শাঁখালিটোল, চাপাতলা ইত্যাদি বিস্তৃর্ন অঞ্চল জুড়ে বটতলা প্রকাশনার কাজ চলতো। 

বটতলা প্রকাশনীর ধরন ও বৈশিষ্ট্য 

সস্তার হরেক রকমের বাংলা বই ছাপা ছিলো বটতলা প্রকাশনার সবথেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য। অশ্লীল বই থেকে ধর্মকথা, লঘু রচনা থেকে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ, সবই ছিলো এর উপজীব্য। আর এইসব বই ছেপে বের হতো অসংখ্য ছোটখাটো ছাপাখানা থেকে। সস্তা কাগজ, নড়বড়ে মেশিন আর ভাঙ্গা হরফে তার বেশিরভাগই ছাপা হতো। এই সকল বইয়ের দামও ছিলো যথেষ্ট কম। 

ধারে, ভারে ও গুনমানে বটতলা প্রকাশনী খুব উন্নতমানের না হলেও, সংখ্যাধিক্য ও চাহিদার প্রাবল্যে এটি সমকালীন সময়ে বাংলা মুদ্রনের একটি স্বতন্ত্র ধারা গড়ে তুলেছিল। 

বটতলা প্রকাশনী ১৮৪০ থেকে ১৭৭০ খ্রিঃ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী ও সক্রিয় ছিলো। শোভাবাজারে বিশ্বনাথ দেবের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই এর সূত্রপাত ঘটে। 

বটতলার শ্রেষ্ঠ সাহিত্য 

বটতলা সাহিত্য নানা স্বাদের কমদামী বই ছেপে গ্রামীন ও দরিদ্র পাঠকদের চাহিদা পূরন করেছিলো। বটতলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বইগুলি ছিলো - 
  • ভবানীচরন বন্দোপাধ্যায়ের "কলকাতা কমলালয়", 
  • জয়নারায়ন ঘোষালের "করুনানিধান বিলাস", 
  • ভারতচন্দ্রের লেখা "অন্নদামঙ্গল", 
  • প্যারীচাঁদ মিত্রের "আলালের ঘরের দুলাল", 
  • যোগেন্দ্রনাথ গুপ্তের "কীর্তিবিলাস", 

বাংলা ছাপাখানা ও উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী 

বাংলা ছাপাখানার বিকাশে আরেকটি স্মরণীয় নাম ছিলো উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। বাংলা ছাপাখানায় তার প্রধান অবদান ছিলো - (১.)রঙিন ছবি ছাপবার প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা, এবং (২.)বাংলা মুদ্রনকে ঝকঝকে, সুন্দর করে তোলা। 

মাথায় রাখতে হবে, ১৮৯০ দশকের প্রথম দিকে বাংলায় উন্নত ছাপাখানা থাকা সত্ত্বেও, ভালো মানের মুদ্রন ও অলঙ্কারের অভাব ছিলো। উপেন্দ্রকিশোর এই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করেন।

ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের প্রতিষ্ঠা 

 তিনি উন্নত মানের ছাপার কাজ করবার জন্য ইংল্যান্ড থেকে নানা বইপত্র আনিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। পরে ইংল্যান্ড থেকে ছাপার কালি ও যন্ত্রপাতি আনিয়ে নিজস্ব ছাপাখানা খোলেন - "ইউ রায় অ্যান্ড সন্স"। তার এই ছাপাখানাটি ১৮৯৫ খ্রীঃ তিনি গড়ে তোলেন। 

প্রসেস ওয়ার্ক

ছাপার কাজের সাথে সাথে, উপেন্দ্রকিশোর এইসময় ছাপার পদ্ধতি নিয়েও গবেষণা করতে থাকেন। এর ফলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তিনি আবিষ্কার করেন, "প্রসেস ওয়ার্ক" বা "প্রসেস শিল্প"। 

প্রসেস ক্যামেরা নিয়ে মৌলিক গবেষণার মাধ্যমে ছবির নেগেটিভকে আরোও উৎকৃষ্ট মানের করে বহু সংখ্যক ছবিকে একই সঙ্গে বইয়ে ছাপবার পদ্ধতি টি কেই "প্রসেস ওয়ার্ক" বলা হয়। প্রসেস শিল্পে উপেন্দ্রকিশোরই প্রথম এবং শেষ ভারতীয়, যিনি মৌলিক অবদানের সাক্ষ্য রেখে যেতে পেরেছিলেন। 

হাফটোন ব্লক তৈরি 

এই অসামান্য কৃতিত্বের পর উপেন্দ্রকিশোর "হাফটোন ব্লক" তৈরি করেন। ফোটগ্রাফকে বইয়ে ছাপবার উপযুক্ত করে ব্লক তৈরির প্রযুক্তিকেই বলে "হাফটোন ব্লক পদ্ধতি"। 

উপেন্দ্রকিশোর ছাপাখানায় কাঠের পরিবর্তে তামা ও দস্তার পাতে ছবি বা অক্ষর খোদাই করে আলোর প্রতিসরন ও প্রতিফলন দেখে হাফটোন ব্লক তৈরির সঠিক সূত্র খুঁজে পান। 

কালার প্রিন্টের উদ্ভাবন

এছাড়া, উপেন্দ্রকিশোরই এশিয়ার প্রথম ব্যক্তি, যিনি "কালার প্রিন্টের" নানা দেশীয় পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। যেমন - ডায়াফর্ম যন্ত্র, স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র, ট্রিন্ট প্রসেস ইত্যাদি।

উপেন্দ্রকিশোরের আবিষ্কারের সূত্র ধরেই ব্রিটেনে বানিজ্যিক ভাবে "টিন্ট প্রসেস" ও "স্ক্রিন অ্যাডজাস্টিং মেশিন" তৈরি হয়। মেশিন দুটির নাম উপেন্দ্রকিশোরের নামে করা হয় - "রে টিন্ট প্রসেস" এবং "রে স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার"। 

এশিয়ার প্রথম রঙিন ছাপাখানার উদ্ভাবক

এই প্রসঙ্গে বলে রাখা প্রয়োজন, উপেন্দ্রকিশোরই ছিলেন এশিয়ার প্রথম বাঙালি, যিনি বইয়ের পাতায় রঙিন ছবি ছাপার কৌশলটি উদ্ভাবন করেছিলেন।

উপেন্দ্রকিশোর ১৮৮৫ খ্রিঃ প্রথমদিকে, ১৩ নং কর্নওয়ালিশ স্ট্রীটের বাড়িতে, পরে ৩৮/১ শিবনারায়ন দাস লেনের বাড়িতে ছাপাখানা সংক্রান্ত কাজকর্ম ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এইখানেই তিনি ১৮৯৫ খ্রিঃ "ইউ রায় অ্যান্ড সন্স" নামে প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। 

উপেন্দ্রকিশোর ছাপাখানার কাজকে আরোও উন্নত করবার জন্য পুত্র সুকুমার রায়কে ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিন্টিং টেকনোলজির ওপর পড়তে পাঠান। ১৯১৩ খ্রিঃ সুকুমার রায় বিদেশ থেকে ফিরে এসে" ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের"কর্মকেন্দ্র মানিকতলার কাছে স্থানান্তরিত করেন। 

ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের সেরা সাহিত্য 

"ইউ রায় অ্যান্ড সন্স" থেকে বেশ কিছু বিখ্যাত গ্রন্থ ছেপে বের হয়েছিলো। যেমন - 
  • ছেলেদের মহাভারত, 
  • টুনটুনির বই, 
  • গুপী গায়ে বাঘা বায়েন, 
  • সেকালের কথা, 
  • আবোল তাবোল, 
  • হ য ব র ল, 
  • পাগলা দাশু। 
এছাড়া এই প্রেস থেকেই ছোটদের জনপ্রিয় পত্রিকা "সন্দেশ"(১৯১৩) প্রকাশিত হয়।

১৯১৫ খ্রিঃ উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর তার বড়ো ছেলে সুকুমার রায় ১৮২৩ খ্রিঃ মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা গেলে সন্দেশ পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায় এবং "ইউ রায় অ্যান্ড সন্স" নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। 


লাইনোটাইপ পদ্ধতি ও ছাপাখানা 

 বাংলা ছাপাখানায় "ইউ রায় অ্যান্ড সন্সের" অসামান্য অবদানের পর, একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ছিলো বাংলা মুদ্রনে লাইনোটাইপ পদ্ধতির প্রয়োগ।

১৯৩৫ খ্রিঃ বাংলা মুদ্রনে লাইনোটাইপ পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটে।দ্রুত গতিতে দৈনিক সংবাদপত্র মুদ্রনে এর কার্যকারিতা ছিলো অবিসংবাদিত। 

বহুদিনের প্রচেষ্টার পর সুরেশচন্দ্র মজুমদার প্রথম এই কাজে সফল হন। ১৯৩৫ খ্রিঃ ২৮ সেপ্টেম্বর, আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রথম লাইনোটাইপে ১২২ টি শব্দ ছাপা হয়। 

লাইনোটাইপ পদ্ধতির ধরন

লাইনোটাইপ প্রবর্তনের জন্য বাংলা বর্ণমালার বেশ কিছু সংস্কার করতে হয়। এইজন্য অক্ষরের সংখ্যা হ্রাস করা হয় এবং যুক্তাক্ষরের জটিলতা বর্জন করা হয়। উদাহরন হিসাবে বলা যায়, লাইনোটাইপে "আ" একটি পৃথক অক্ষর না হয়ে "অ" এর সঙ্গে  " । " আ কার যুক্ত হয়ে "আ" হয়ে থাকে। 

একই সঙ্গে স্বরচিহ্নগুলিকে পৃথক করে প্রয়োজন মতো ব্যাঞ্জনবর্নের সঙ্গে যুক্ত করে অর্ধাক্ষর সৃষ্টি করা হয়। যেমন - কা, খি, চু, গৃ, ইত্যাদি। 

লাইনোটাইপের পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে বাংলা মুদ্রন দ্রুত, গতিশীল হয়ে উঠে এবং বাংলা মুদ্রনের কাজ আরোও সহজ হয়ে যায়। বর্তমানে আমরা মোবাইলে যে বাংলা কিবোর্ড ব্যবহার করি তা এই লাইনোটাইপ পদ্ধতির। 


সমাপ্ত।। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post