মার্কেন্টাইলবাদের পরবর্তীকালে যে অর্থনৈতিক মতবাদ টি বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশবাদের প্রসার ঘটিয়েছিলো, সেটি হলো "পুঁজিবাদ"।
আজকের আলোচনাতে আমরা পুঁজিবাদ সম্পর্কে দুটি বিষয় আলোচনা করবো -
এক, পুঁজিবাদ কাকে বলে, এবং
দুই, ইওরোপে কিভাবে এই পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটেছিলো, এবং পুঁজিবাদের বিকাশের সাথে ভারতে ইংরেজদের ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব স্থাপনের বিষয়টি কিভাবে জড়িত ছিলো।
পুঁজিবাদ কাকে বলে?
পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র হলো এমন একধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, যেখানে (১) উৎপাদনের উপকরন, (২.) উৎপাদনের পদ্ধতি - (৩.) ব্যক্তিগত মালিকানাধীন থাকে। (৪.) মালিক মজুরির বিনিময়ে বাজার থেকে শ্রম কিনে উৎপাদন করে এবং (৫.) অধিক মুনাফা অর্জন করে।
পুঁজিবাদের সংজ্ঞাটি যদি একটু ভেঙ্গে আমরা বিশ্লেষন করি, তাহলে যে মূল দিকগুলো খুঁজে পাবো -
পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য :-
- পুঁজিবাদ হল "উৎপাদন নির্ভর একধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা system।
- এখানে profit বা মুনাফা লাভের জন্যই উৎপাদন করা হয়।
- পুঁজিবাদে ব্যক্তি মালিকানার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
- পুঁজিবাদে উৎপাদনের উপকরন, পদ্ধতি এবং উৎপন্ন পন্য সবকিছুরই মালিক হন পুঁজিপতি ব্যক্তি।
- পুঁজিপতি মালিক শ্রমিকের কাছ থেকে মজুরির বিনিময়ে শ্রম কিনে নিয়ে উৎপাদনের কাজটি করেন।
- তাই পুঁজিবাদে উৎপাদনের ওপর শ্রমিকের কোন অধিকার থাকে না।
পুঁজিবাদকে আরও একটু সহজ ভাবে একটা উদাহরণের সাহায্যে বুঝে নেওয়া যাক,
পুঁজিপতি রামের গল্প :-
ধরা যাক, রাম একজন পুঁজিপতি। সে তার পুঁজি বিনিয়োগ করে একটি কাপড়ের কারখানা স্থাপন করেছে।ঐ কারখানায় উৎপাদনের উপকরন অর্থাৎ কাপড় তৈরি করবার জন্য যে কাঁচামাল লাগে, যেমন - সুতো, রঙ ইত্যাদি সবকিছুরই মালিক রাম। উৎপাদনের পদ্ধতি অর্থাৎ কাপড় তৈরির মেশিন বা বুননের নতুন টেকনোলজিরও মালিক রাম।
পুঁজিবাদের ধরন |
এককথায়,পুরো কাপড়ের কারখানাটিরই মালিক রাম। সে পুঁজিপতি, তার অনেক অর্থ রয়েছে। তাই সে কারখানা স্থাপন করতে পেরেছে। এইবার রাম ঐ কারখানায় উৎপাদনের জন্য বাজার থেকে মজুরির বিনিময়ে শ্রম কিনছে, অর্থাৎ কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ করছে। শ্রমিকরা রামের কারখানায় উৎপাদনের নানা কাজ করছে। এবং কাজের বিনিময়ে, অর্থাৎ শ্রমের বিনিময়ে দিনের শেষে কিছু অর্থ পারিশ্রমিক বা মজুরি পাচ্ছে।
এখন রামের কারখানায় শ্রমিকদের শ্রমে যে উৎপাদন হলো অর্থাৎ কাপড় তৈরি হলো, তার মালিক কিন্তু শ্রমিকরা নয়। তার মালিক হল রাম। ঐ কাপড় গুলো কতদামে বিক্রি করা হবে, কারখানায় কত কাপড় দৈনিক উৎপাদন করা হবে, সবটাই ঠিক করেন রাম নিজে।
কারন উৎপাদনের মূল দুটি স্তম্ভ - (১.) উপকরন বা কাঁচামাল এবং (২.) পদ্ধতি বা কাপড় তৈরির মেশিন, দুটিরই মালিক রাম। উৎপাদনের আরেকটি অপরিহার্য শর্ত (৩.) শ্রম, সে মজুরির বিনিময়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে।
কারখানায় উৎপাদন শুরু হওয়ার পর রামের প্রধান লক্ষ্য থাকে, যাতে সে অধিক মুনাফা লাভ করতে পারে। এইজন্য সে অধিক উৎপাদনে জোর দেয়। বেশি লাভ করবার জন্য সে সবসময়ই চায়, অল্প বেতনে শ্রমিকরা অনেক বেশি কাজ করুক।
অধিক মুনাফা লাভের পর রাম একটির জায়গায় আরোও একটি কারখানা স্থাপন করে। তারপর ঐ দুটো কারখানার মুনাফা থেকে আরও বড়ো একটি কারখানা খোলার চেষ্টা করে। শেষের দিকে ঐ বড়ো কারখানার লভ্যাংশ থেকে রাম এতটাই ধনী হয়ে উঠলো যে, তার এলাকার সব কাপড়ের কল গুলো সে কিনে নিলো অথবা তার কোম্পানির অধিনস্ত করে নিলো। শুধু তাই নয়, কাপড়ের উৎপাদন ও মূল্য নির্ধারনের একচেটিয়া মালিক হয়ে উঠলো রাম। বাজারের যোগান ও মূল্য নির্ধারণের সব চেয়ে বড়ো নির্নায়ক হয়ে উঠলো রাম।
রামের গল্পের মতোই পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সমাজের ধনরাশি বা অর্থ ধীরে ধীরে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে জমা হতে থাকে। কালক্রমে ঐ বিরাট ধনশালী ব্যক্তিরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রনকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সমাজের অর্থ গুটিকতক ব্যক্তিদের হাতে পুঞ্জিভূত হওয়ার ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সমাজে ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ে। বলা বাহুল্য,এই ধনী দরিদ্রের বৈষম্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থারএকটি লক্ষ্যনীয় দিক ছিল।
রামের গল্প থেকে পুঁজিবাদ এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি একটা idea আমরা করতে পারলাম। এবার আমরা দ্বিতীয় আলোচনাতে আসবো। অর্থাৎ ইওরোপে এই পুঁজিবাদের জন্মটি কিভাবে ঘটেছিলো।
ইওরোপে পুঁজিবাদের বিকাশ :-
ইওরোপে পুঁজিবাদের বিকাশ হয় ৩ টি পর্বের মধ্য দিয়ে -
- বানিজ্য পুঁজি,
- বানিজ্য পুঁজি থেকে শিল্প পুঁজি,
- শিল্প পুঁজি থেকে মহাজনী পুঁজি।
বানিজ্য পুঁজি :-
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে ভৌগলিক আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইওরোপের দেশ গুলো এশিয়া, আফ্রিকা বা আমেরিকা মহাদেশে পৌঁছায়। সেখান থেকে নানা ধরনের জিনিস পত্র কিনে এনে তারা সেগুলো ইওরোপের বাজারে অত্যন্ত চড়া দামে বিক্রি করে। বিক্রির মুনাফা থেকে পুনরায় ঐসব দেশ থেকে পন্য কিনে এনে ইওরোপের বাাজারে বিক্রি করে। এইভাবেই "বানিজ্য পুঁজির" সৃষ্টি হয়।
কালক্রমে যে সব নতুন জায়গা থেকে ইওরোপের দেশগুলি বানিজ্যিক জিনিস পত্র অল্প মূল্যে কিনে এনে ইওরোপের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছিলো, সেইসব দেশগুলোতে তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। আর এটি করতে গিয়ে তারা ঐসব দেশ গুলোকে তাদের উপনিবেশে পরিনত করে ফেলে।
ইংল্যান্ড আর ভারতের গল্প :-
ইংল্যান্ডের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমদিকে ব্যবসা করবার জন্যই আমাদের দেশে এসেছিলো। ভারত থেকে বিভিন্ন বানিজ্যিক দ্রব্য কিনে তারা ইওরোপের বাজারে সেগুলিকে চড়া দামে বিক্রি করতো। পরে বানিজ্যিক মুনাফাটিকে দ্বিগুন করে তোলার জন্য তারা ভারতকে তাদের উপনিবেশে পরিনত করে।
বানিজ্যিক মুনাফাটি বজায় রাখার জন্য প্রথমপর্বে তারা ভারত থেকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন বানিজ্যিক শক্তি গুলিকে (যেমন ফরাসি, ওলন্দাজ, দিনেমার) হটিয়ে দেয়। এরপর তারা বানিজ্যিক জিনিস গুলি ক্রয় করার ক্ষেত্রে দাদন প্রথা চালু করে।
দাদন মানে অগ্রিম অর্থ দিয়ে আগে থেকেই মূল্য নির্ধারন করে জিনিসটি কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা। প্রথম দিকে কোম্পানি এইভাবেই ভারত থেকে জিনিস পত্র কিনে নিয়ে মুনাফা লাভের চেষ্টা চালিয়ে ছিলো। পরে পলাশীর এবং বক্সারের যুদ্ধের পর দেওয়ানী লাভের মধ্য দিয়ে কোম্পানি প্রভূত অর্থ লাভ করে। ঐ অর্থ দিয়েই পরবর্তীকালে তারা ভারত থেকে বানিজ্যিক দ্রব্য কিনে নিয়ে ইওরোপের বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে। ব্যাপারটা অনেকটা মাছের তেলে মাছ ভাজবার মতো।
অর্থাৎ ভারতের টাকায় ভারতের জিনিস কিনে, সেগুলোকে ইওরোপের বাজারে চড়া দামে কোম্পানি বিক্রি করেতে থাকে। এই বানিজ্যের জন্য কোম্পানিকে কোন টাকা খরচ করতে হয় নি। ইংল্যান্ডের বানিজ্যের পুরো পুঁজিটাই ভারত থেকে তোলা হয়েছিলো এবং এইভাবেই ভারতের টাকা বানিজ্যের মাধ্যমে ইংল্যান্ডের ব্যাঙ্কে জমা হয়। পুঁজির পুঞ্জিভবন ঘটতে থাকে এবং এই পুঞ্জিভূত অর্থ "বানিজ্য পুঁজি" হিসাবে গড়ে ওঠে।
বানিজ্য পুঁজি থেকে শিল্প পুঁজি :-
প্রথম পর্বে ব্যবসা বাণিজ্যের মুনাফা থেকে যে বিরাট পরিমান টাকা ব্যাঙ্কে পুঞ্জিভূত হয়েছিলো, তাকে বানিজ্য পুঁজি বলা হয়। এই বানিজ্য পুঁজির টাকাটা যখন শিল্পে বিনিয়োগ করা হয়, তখনই বানিজ্য পুঁজি শিল্প পুঁজিতে পরিনত হলো বা রূপান্তরিত হলো।
ইওরোপে বানিজ্য পুঁজি থেকে শিল্প পুঁজিতে উত্তরন ঘটেছিলো শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে। ভারতের উদাহরণ দিয়েই ব্যাপারটা বোঝা যাক।
শিল্প বিপ্লব ও বাণিজ্য পুঁজির রূপান্তর :-
একটু আগেই আমরা বললাম, ভারতে ব্যবসা বাণিজ্য করে কোম্পানি প্রচুর অর্থ লাভ করেছিলো। এই টাকাটা ইংল্যান্ডের ব্যাঙ্কে জমা হয়।এটাকেই বানিজ্য পুঁজি বলা হয়ে থাকে। কারন বানিজ্যের ফলেই এই পুঁজি সৃষ্টি হয়েছিলো।
বানিজ্য পুঁজি ইংল্যান্ডে প্রথম জমা হয়। এই পুঁজির অনেকটা গবেষণার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়। এর ফলে ইংল্যান্ডে নতুন নতুন আবিষ্কারের সূচনা ঘটে। আবিষ্কারের সব গুলিই উৎপাদন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলো। যেমন উড়ন্ত মাকু, স্পিনিং জেনি, নিরাপত্তা বাতি, বাষ্পীয় ইঞ্জিন ইত্যাদি। ক্রমে এইসব আবিষ্কারের সূত্র ধরে ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব ঘটলো। বড়ো বড়ো কারখানা স্থাপিত হতে থাকলো। শিল্প কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বানিজ্য পুঁজিকে কাজে লাগানো হলো। এইভাবে বানিজ্য পুঁজি যখন শিল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হলো, তখনই বানিজ্য পুঁজির উত্তরন ঘটলো। বানিজ্য পুঁজি শিল্প পুঁজিতে রূপান্তরিত হলো।
শিল্প পুঁজিতে নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবার ফলে ইংল্যান্ডে প্রচুর পরিমাণে পন্য উৎপাদন হতে থাকে। ইংল্যান্ড ঐ সব পন্য জোর করে বিক্রি করে মুনাফা লাভ করতে চায়। এইজন্য শিল্প বিপ্লব ঘটবার পরই ইংল্যান্ড ভারতের বানিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন নীতি নেয়। সে ভারতের হস্তশিল্প গুলিকে ধ্বংস করবার ব্যবস্থা করে। ইংল্যান্ডে ভারতের পন্য গুলির ওপর চড়া শুল্ক বসিয়ে তার দাম বাড়িয়ে দেয়। এবং ভারতের বাজারে দেশীয় পন্যের ঘাটতির সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা করে ইংল্যান্ডের পন্যে ভারতের বাজার ভরিয়ে দেয়।
প্রতিটি উপনিবেশেই এই একই ঘটনা ঘটে।
শিল্প পুঁজি থেকে মহাজনী পুঁজি :-
পুঁজিবাদের বিকাশের তৃতীয় স্তরে শিল্প পুঁজি থেকে মহাজনী পুঁজি গড়ে উঠে।
মহাজনী পুঁজি বলতে বোঝায়, বড়ো আকারের শিল্প গড়ে তোলার জন্য মহাজনেরা যে পুঁজি বিনিয়োগ করে এবং তা থেকে মুনাফা অর্জন করে, সেটি। শিল্প পুঁজি থেকে মহাজনী পুঁজি গড়ে উঠেছিলো অবাধ বা মুক্ত বানিজ্যের মধ্য দিয়ে।
কিভাবে গড়ে উঠলো মহাজনী পুঁজি?
বানিজ্য পুঁজি যখন শিল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হলো, তখন নতুন নতুন শিল্প কারখানা গড়ে উঠতে আরম্ভ করলো। উৎপাদন বাড়াতে থাকলো। বাড়তি উৎপাদনের সূত্র ধরে স্বাভাবিক নিয়মেই ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটতে থাকলো।
অর্থাৎ বানিজ্য পুঁজি যখন সৃষ্টি হচ্ছিলো তখন ব্যবসা বানিজ্যের চরিত্র ছিলো একচেটিয়া বা সংরক্ষিত। কিন্তু পরে সেই বানিজ্য পুঁজি শিল্প পুঁজিতে বিনিয়োগের পর অবাধ বা মুক্ত বানিজ্যে জোর দেওয়া হয়।
এবার যদি আমরা ভারতের দিকে তাকায় তাহলে দেখবো, ভারতের ক্ষেত্রে প্রথমদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্যের অধিকার ছিলো। কিন্তু উনিশ শতকের প্রথম দিকে (১৮১৩ পর থেকে) ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। ১৮৫৮ খ্রিঃ ইংল্যান্ড ভারতের শাসনভার কোম্পানির হাত থেকে নিজের হাতে তুলে নেয়।
এর পরেই ইংল্যান্ড যেসব পুঁজিপতিরা শিল্প পুঁজিতে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করেছিলো, তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে জোর দেয়। এইজন্য সে ভারতের বাজারকে ইংল্যান্ডের পুঁজিপতিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।
শিল্প পুঁজিতে যারা অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা আরোও বড়ো শিল্পে তাদের পুঁজি কে বিনিয়োগ করতে চাইছিলেন। এই বিনিয়োগটাই ছিলো মহাজনী পুঁজি ।
শিল্প পুঁজির মুনাফা যখন আরোও বড়ো শিল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা হয়, তখনই মহাজনী পুঁজি গড়ে উঠে। ভারতে রেলপথ নির্মান, রাবার শিল্প, চা শিল্প, কফি শিল্প ইত্যাদি বৃহৎ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে মহাজনী পুঁজি গড়ে উঠেছিলো। এই সমস্ত বৃহৎ শিল্প গুলি গড়ে তুলতে পুঁজি নিয়ে এগিয়ে এসেছিলো বড়ো বড়ো কোম্পানি ও ব্যাঙ্ক। এছাড়া ধনশালীরা তো ছিলেনই।
এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলে রাখার দরকার রয়েছে। আমরা সবাই জানি, মহাবিদ্রোহের পর ১৮৫৮ খ্রিঃ মহারানীর ঘোষনাপত্রের মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটায় এবং ভারতের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেয়। ১৮৫৮ খ্রিঃ কোম্পানির শাসনের অবসানের একটি কারন অবশ্যই ছিলো মহাবিদ্রোহ। কিন্তু আসল কারনটি ছিলো ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের ফলে যে প্রভূত মুনাফা সৃষ্টি হয়েছে, সেই অর্থ কে লাভজনক ভাবে বিনিয়োগ এবং পূর্বে বিনিয়োগ কৃত অর্থের নিরাপত্তা প্রদান সুনিশ্চিত করা। এটা করবার জন্য সরাসরি ভারতের শাসনভার সরাসরি নিজের হাতে গ্রহন করা
ছাড়া আর অন্য কোন বিকল্প পথ খোলা ছিলো না ।
যাইহোক, শিল্প পুঁজি যখন মহাজনী পুঁজিতে রূপান্তরিত হলো, তখন উপনিবেশ গুলিতে নিয়ন্ত্রন এবং শোষন আরোও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছিলো। নীলচাষের অত্যাচারের কথা তো আমাদের সবারই জানা। রেলপথ স্থাপনের মতো বৃহৎ শিল্পের নির্মান করতে গিয়ে এদেশের জনজাতি এবং অরন্য সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রন আরোও কঠোর করা হয়। আদিবাসীরা অরন্যের অধিকার হারায়। ক্রমে রেলকে ব্যবহার করে ব্যবসা বাণিজ্যের আরও প্রসার ঘটে। শোষন এবং নিয়ন্ত্রন আরোও তীব্র হয়ে ওঠে। রেলকে কেন্দ্র করে বর্নবৈষম্যবাদের প্রভেদ আরোও তীব্রতর হয়ে ওঠে।
মোটকথা, ভারতে মহাজনী পুঁজির শোষন উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের কিছু আগে থেকেই লক্ষ্য করা যায়। বিশ শতকে মহাজনী পুঁজির শোষন একটি প্রধান বৈশিষ্ট্যে পরিনত হয়।