আধুনিক ইতিহাস চর্চার অলিখিত উপাদান গুলির একটি অন্যতম ভাগ হল "Myth" বা "পৌরাণিক কাহিনী"। একে অনেকে অতিকথাও বলে থাকেন।
|
ইতিহাস চর্চায় মিথ |
মিথের শব্দগত অর্থ ও ধারনাগ্রিক শব্দ "মিথস্" থেকে ইংরেজি "মিথ" কথাটির উৎপত্তি হয়েছিলো, যার অর্থ - গল্প বলা।
বৃহত্তর অর্থে যেকোন ঐতিহ্যগত গল্পগাথাকেই মিথ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সঠিক অর্থে মিথ বলতে মানবকুল, জীবকুল এবং জগৎ কিভাবে সৃষ্টি হলো, সেই সম্পর্কে "সৃষ্টি তত্ত্বের" নানা গল্প কথাকেই বোঝায়। মিথের এই গল্প গুলো একেবারে প্রাগৈতিহাসিক যুগের সময় থেকেই তৈরি হয়েছিলো।
আদিম কাল থেকেই চন্দ্র, সূর্য, আকাশ, ঝড়, বৃষ্টি, প্রলয়, আগুন, গ্রহন ইত্যাদি প্রকৃতির নানা দিকগুলিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন ও রহস্য দানা বেঁধেছিলো। মানুষ ভাবতো, প্রকৃতির এই ঘটনা গুলির পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন আছে। ঘটনার অন্তরালে এমন কেউ আছেন, যিনি লুকিয়ে এইসব ঘটাচ্ছেন। প্রকৃতির এইসব রহস্য ভেদ করবার জন্য কল্পনার সাহায্যে মানুষ যে কাল্পনিক গল্পকথার ব্যাখ্যা রচনা করে, সেগুলিই হলো মিথ।
উদাহরন হিসাবে চন্দ্র গ্রহন ও সূর্য গ্রহনের মিথের একটি কথা আমরা বলতে পারি।
হিন্দু পুরাণের এই মিথটিতে গ্রহনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলা হয়েছিলো, রাহু চন্দ্র ও সূর্যকে খেয়ে ফেলে বলেই গ্রহন হয়। কেন খেয়ে ফেলে সেই নিয়ে মিথে গল্পের আকারে বলা হয়েছিলো, সমুদ্র মন্থনের অমৃত রাহু চুরি চামারি করে খেতে গিয়ে চন্দ্র সূর্যের কাছে ধরা পড়ে যান। পরে চন্দ্র সূর্য ঘটনাটি বিষ্ণুদেবতার কানে তুললে, বিষ্ণু তার চক্র দিয়ে রাহুর মাথা কেটে দেন। সেই রাগেই রাহু মাঝে মধ্যে চন্দ্র সূর্য কে খেতে আসে। এইভাবে গল্পের আকারে মিথে জাগতিক সৃষ্টি তত্ত্বের বিভিন্ন বিষয়কে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে।
মিথের সংজ্ঞা
মিথ হলো এমন এক ধরনের (১.) ঐতিহ্যগত (২.) অবাস্তব, (৩.) অলৌকিক (৪.) কাল্পনিক গল্পকথা, যেখানে (৫.) "মানবকুল এবং জগৎ সৃষ্টির ব্যাপারে" সৃষ্টি তত্ত্বের নানা বিবরন (৬.) কাহিনীর মাধ্যমে প্রজন্ম পরম্পরায় প্রবাহিত হয়ে চলে।
মিথের মূল কথা
আরোও সহজ করে বলতে গেলে -
(১.) মিথ হলো একটি কাল্পনিক গল্পকথা :-
মিথের গল্প গুলো সবই কাল্পনিক এবং অলৌকিক ধরনের হয়ে থাকে। এই গল্প গুলোর মধ্যে একটি অতিমানবীয়, অতিদানবীয়, ও আধিভৌতিক ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়।
(২.) মিথ হল সৃষ্টি তত্ত্বের কল্পকথার সংকলন:-
মিথের গল্প গুলোতে এই পৃথিবীর এবং মানুষের জন্ম কিভাবে হয়েছিলো, পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য স্মরণীয় ঘটনা গুলো কি কি ছিলো,রাজাদের উদ্ভব কিভাবে হলো, এইসব নানা বিষয় নিয়ে একটা কল্পিত আলোচনা করা থাকে।
(৩.) মিথ প্রজন্ম পরম্পরায় প্রবাহিত হয় :-
মিথের তৃতীয় উল্লেখযোগ্য ব্যাপারটা হলো, মিথ গুলো প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে রচিত হয়ে প্রজন্ম পরম্পরায় বর্তমান কালেও প্রবাহিত হয়ে চলেছে। মিথের গল্প গুলো কে আজও মানুষ সত্য বলেই বিশ্বাস করে থাকে।
মিথের উদাহরন :-
মিথের উদাহরন হিসাবে হিন্দু পুরানের নানা মিথের উদাহরন দেওয়া যেতে পারে। যেমন -
- বিষ্ণু ও ব্রহ্মার সৃষ্টি তত্ত্বের কাহিনী,
- সমুদ্র মন্থনের কাহিনী,
- গঙ্গার মর্তে আগমনের কাহিনী,
- সীতাহরনের কাহিনী,
- দুর্গার মহিষাসুর বধের গল্প,
- শিবপুরানের নানা গল্প ইত্যাদি।
ইওরোপের মিথের উদাহরনের মধ্যে বলা যায় -
- বাইবেলের নানা পৌরাণিক কাহিনীর গল্প,
- গ্রিসের নানা দেবদেবীর কাহিনী,
- রোমের রোমুলাসের জীবনকাহিনী ইত্যাদি।
মিথের উৎপত্তি সংক্রান্ত তত্ত্ব
মিথের উৎপত্তি কখন, কিভাবে আর কেন হয়েছিলো, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে দীর্ঘ বিতর্ক আছে। মিথের উৎপত্তি সংক্রান্ত আলোচনার পরিধিও ব্যাপক বিস্তৃত। আমরা এক্ষেত্রে বিস্তারিত আলোচনাতে না গিয়ে খুব সংক্ষেপে মূল আলোচ্য বক্তব্য টি জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবো।
বলা হয়ে থাকে, মানুষের না দেখা ঘটনার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন থেকেই মিথের জন্ম হয়েছিলো। প্রখ্যাত পন্ডিত ম্যাক্সমুলারের মতে, প্রকৃতির নানা রূপক বর্ননা থেকেই মিথের জন্ম হয়েছিলো।
নৃতত্ববিদ James Frazer মনে করেন, প্রাকৃতিক নিয়মের ভুল ধারণার ওপর ভিত্তি করেই মিথের জন্ম হয়েছিলো। জল, ঝড়, বৃষ্টি, ভূমিকম্প, সূর্য গ্রহন, চন্দ্র গ্রহন, পৃথিবীর সৃষ্টি, এসব কেন হয়েছিলো, কিভাবে হয়েছিলো তার একটা অতিভৌতিক ব্যাখ্যা দানের মধ্য দিয়েই মিথের জন্ম হয়েছিলো। মিথে বিশ্বাস করানো হয় জাগতিক সব ঘটনা গুলির পিছনে কোন দৈব শক্তি জড়িত থাকে।
এই বিশ্বাস থেকে মনে করা হয়, সূর্য গ্রহন অথবা চন্দ্র গ্রহনের পিছনে নিশ্চয়ই কোন গুঢ় রহস্য আছে। কোন অতিদানবীয় ব্যক্তি এটি ঘটাচ্ছেন। ঝড়, জল, সৃষ্টি আর ধ্বংসের অন্তরালে অতিমানবীয় কেউ আছেন। এই অতিমানবীয় ব্যক্তির তুষ্টিকরন ও মহিমা কীর্তন করতে গিয়েই দেবত্বের concept আসে। মিথ থেকেই তাই ধীরে ধীরে পৃথিবীর সব দেশের ধর্মীয় নানা বিশ্বাস, প্রথা ও আচার অনুষ্ঠান ও সংস্কারের উদ্ভব ঘটে।
ইতিহাস চর্চায় মিথ
মিথকে একটা সময় নিছকই একটি অবাস্তব কল্পকাহিনী বলে মনে করা হলেও, উনিশ শতক থেকেই ঐতিহাসিকরা মিথের ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন।
মিথ থেকে সামাজিক নানা প্রথা ও আচার আচরন গুলির যেমন একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়, তেমনই প্রাগৈতিহাসিক যুগের ঘটনাবলীরও একটি আভাস পাওয়া যায়।
উদাহরন হিসেবে বলা যায়, বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্কর মহাপ্লাবন, এবং তা থেকে বাঁচতে একটি বিরাট নৌকায় পৃথিবীর এক জোড়া করে প্রানীকে তুলে নেওয়ার গল্প, পৃথিবীর সব মিথের মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়। এ থেকে অনুমান করা অসঙ্গত নয়, পৃথিবীতে অতীতে নিশ্চয়ই এমন কিছু একটা ঘটনা ঘটেছিলো। তা না হলে পৃথিবীর সব দেশের মিথে একই ধরনের একটি ঘটনার উল্লেখ থাকবে কেন? মিথোলজিস্ট ইউহেমেরাস তাই মিথকে প্রকৃত ইতিহাসের ঘটনা বলে উল্লেখ করেছিলেন। যা পরবর্তীকালে অতি কথন ও অতিরঞ্জনের ফলে মৌলিকত্ব হারিয়েছিলো।
একটা কথা মনে রাখতে হবে, অতীত বস্তুগত উপাদানের মধ্যে যতটুকু সাক্ষ্য রেখে যায়, ততটুকুই আমরা ইতিহাসে জানতে পারি। প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাসের সাক্ষ্য আদিম মানুষের ব্যবহার করা পাথরের মধ্যে ধরা ছিলো বলে, ঐ উপাদানের সাহায্যেই আমরা প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাস কে বিশ্লেষন করে থাকি। কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক যুগেরও আগের ইতিহাসকে আমরা জানবো কি ভাবে? ঐ যুগের ইতিহাসের কোন বস্তুগত তথ্য তো আমাদের কাছে নেই। তাহলে উপায়?সবথেকে বড়ো কথা, অতীতের সব ঘটনার কথা কখনই সাক্ষ্য বা বস্তুগত উপাদানে সব সময় ধরাও থাকে না।
তাই সম্পূর্ণ বা total History কে জানবার প্রশ্নে অনেকে ইতিহাসের উপাদান হিসাবে, মিথের গুরুত্বের কথা বলে থাকেন। মিথ থেকে অতিরঞ্জন, অতিকথা আর কল্পকাহিনীর খোলসকে ছাড়িয়ে দিতে পারলেই, আদিম ইতিহাসের একটা আভাস আমরা পেতে পারি। যদিও খোলস ছাড়ানোর কাজটি অত্যন্ত জটিল ও কঠিন।
কিন্তু দূরুহ বা কঠিন বলে কখনই আমরা মিথকে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করতে পারি না। আর ঠিক এই কারনেই সাম্প্রতিক কালে ইতিহাসের উপাদান হিসাবে মিথের গুরুত্ব ও প্রভাবের দিকটি ঐতিহাসিকদের ভাবিয়ে তুলেছে। ঐতিহাসিকরা ইতিহাসের একটি অলিখিত মৌখিক উপাদান হিসাবে মিথকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন।
মিথের বৈশিষ্ট্য
মিথ বা পৌরাণিক কাহিনী গুলির বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন -
- পৌরাণিক কাহিনী বা মিথ গুলি সবই ছিলো মৌখিক ঐতিহ্য অনুসারি। অর্থাৎ মিথগুলির কোন লিখিত রূপ ছিলো না। অনেক পরে সেগুলি লিপিবদ্ধ হয়েছিলো।
- মিথ বা পৌরাণিক কাহিনী গুলির স্রষ্টা দের নাম জানা যায় না।
- বিশ্বের অধিকাংশ মিথের সন্ধান পাওয়া যায় মহাকাব্য গুলিতে। যেমন রামায়ন, মহাভারত, ইলিয়াড,ওডিসিতে বহু প্রাচীন মিথের কথা সংকলিত আছে।
- পৌরাণিক কাহিনী বা মিথ গুলি বর্তমান সমাজেও প্রচলিত আছে।
- অতিকথন, ঈশ্বর, অতিপ্রাকৃত নায়ক এবং অতিমানবীয় চরিত্রের সমাহার নিয়েই মিথ গুলি রচিত হয়ে থাকে।
- মিথের কাহিনী গুলি হয়ে থাকে প্রধানত ধর্মীয়। এই কাহিনীর ওপর ভিত্তি করেই সমাজে ধর্ম বিশ্বাস, নানা সামাজিক প্রথা, সংস্কার ও আচার আচরনের উদ্ভব ঘটে থাকে।
- মিথে যে কোন বক্তব্যই কাহিনী বা গল্পের মধ্য দিয়ে প্রচারিত হয়।
- পৌরাণিক কাহিনী বা মিথ গুলিতে জগৎ সৃষ্টির কল্প ইতিহাসের প্রমান পাওয়া যায়।
- পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ বা জনসমাজেই মিথের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
- মিথের মধ্য দিয়ে কোন জাতি বা দেশের ঐতিহ্য প্রবাহিত হয়। মিথকে তাই কোন জাতি বা দেশের ঐতিহ্যগত লোককথাও বলা হয়ে থাকে।
- পৃথিবীর সকল দেশের মিথ গুলির মধ্যে কিছু বিষয়ে অদ্ভুত মিল বা বিশ্বজনীনতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
- পৃথিবীর সৃষ্টি,
- মহাপ্লাবন,
- মানুষের জন্ম,
- দেবতা দানবের যুদ্ধ,
- চন্দ্র, সূর্য, আত্মা, স্বর্গ, নরক,
- অগ্নির অধিকার লাভ,
- দিনরাত্রি,
- বিভিন্ন প্রানীর জন্ম,
- শিল্প ও সভ্যতার উৎপত্তি, ইত্যাদি।
মিথের ঐতিহাসিক গুরুত্ব
মিথের ঐতিহাসিক গুরুত্বের দিকটি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমরা বলতে পারি -
(১.) অতীতের মূল সূত্রের অনুসন্ধান :-
(ক) মিথ থেকেই মানুষের ঈশ্বর ভাবনা ও অতীন্দ্রীয় ধারনার বিশ্বাস এসেছিলো।
(খ) সামাজিক সংস্কার ও আচার আচরণের উদ্ভব মিথ থেকেই ঘটেছিলো।
(গ) যেকোন সমাজের নৈতিকতা এবং সামাজিক ন্যায় নীতির ধারনাও মিথের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিলো।
তাই অতীতের যথাযথ বিশ্লেষন করতে গেলে কখনই আমরা মিথকে উপেক্ষা করতে পারি না। উদাহরন হিসাবে বলা যায়, ভারতীয় সমাজে নৈতিকতার ধারনা অর্থাৎ ভালো মন্দের নীতিবোধ মিথের কাহিনী গুলির দ্বারাই স্থির হয়েছিলো। তাই যেকোন জনসমাজের সামাজিক ও ধর্মীয় ইতিহাসের উৎস পর্যালোচনা করতে গেলে মিথ অপরিহার্য। একে উপেক্ষা করলে কখনই আমরা ইতিহাসের মূল সূত্রগুলিকে খুঁজে পাবো না।
(২.) মিথের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান :-
মিথের কাহিনী সবসময় কাল্পনিক হয় না। উদাহরন হিসাবে গ্রিসের ট্রয় নগরী ও ট্রয়ের যুদ্ধক্ষেত্র এবং শ্রীলঙ্কার পক্ প্রনালীতে রামসেতুর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের কথা বলা যায়। এই আবিষ্কার গুলি প্রমান করে, সমাজে প্রচলিত মিথ গুলির মধ্যে ইতিহাসের অনেক সত্য উপাদান লুকিয়ে আছে।
(৩.) ভারতীয় সংস্কৃতির শিকড়ের অনুসন্ধান :-
মিথের ঐতিহাসিকত্বের কথা বলতে গিয়ে নিমাই পাল প্রাগুপ্ত গ্রন্থে বলেছেন, ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মিথের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে । ভারতের ১৮ টি পুরানের মধ্য দিয়ে আমরা প্রাচীন ভারতের ভূগোল, জনপদের বিবরন, লোকাচার, ধর্ম সাধনা ও জীবনচর্চা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারি।
(৪.) প্রাচীন রাজবংশের পরিচয় :-
তুলনামূলক পদ্ধতি প্রয়োগ করে মিথ গুলি থেকে প্রাচীন ভারতের রাজাদের রাজবংশ এবং রাজত্বকালের সন তারিখ এবং শাসনকালের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলির কথাও জানা যায় । ভারতের চন্দ্র বংশীয় এবং সূর্য বংশীয় রাজাদের ইতিহাস একমাত্র মিথ থেকেই পাওয়া যায়। ড. রনবীর চক্রবর্তীর মতে পুরানে বা মিথে বর্নীত রাজবংশ গুলির বেশিরভাগই ঐতিহাসিক ভাবে স্বীকৃত।
(৫.) মিথ থেকে দেশ ও শহরের নামকরন :-
সবশেষে ইতিহাস চর্চায় মিথের গুরুত্ব ও অনস্বীকার্যতা সম্পর্কে একটি কথা বলা যায়, আমাদের দেশ যে ভারতবর্ষ নামে পরিচিত, তার নামের উৎসও কিন্তু মিথ।
কিংবদন্তির রাজা দুষ্মন্ত এবং শকুন্তলার পুত্র ভরতের নাম থেকেই এ দেশের নাম হয়েছিলো ভারতবর্ষ।শুধু ভারতবর্ষ নয়, যেকোন দেশের বা প্রাচীন শহরের নামের সঙ্গেও মিথের একটি সম্পর্ক থাকে। রাবনের লঙ্কাদেশ থেকে যেমন শ্রীলঙ্কার নামের উৎপত্তি হয়েছিল, তেমনই রোমুলাস অগাস্টুলাসের নাম থেকে হয়েছিলো রোমের নামকরন।
স্থানীয় ইতিহাস চর্চাতেও যে কোন শহরের নামের উৎস অনুসন্ধানের সবচেয়ে বড়ো উপায় এবং আশা ভরসার উৎসস্থল হলো মিথ।
উপসংহার
সুতরাং ইতিহাসে শিকড়ের সন্ধানে বের হলে মিথকে কখনই আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। অতিরঞ্জন আর অলৌকিকত্বের আচ্ছাদনটি নিপুন দক্ষতায় সরিয়ে ফেলতে পারলেই পৌরাণিক কাহিনী বা মিথ থেকে আমরা অতীত ইতিহাসের বহু অজানা দিকের দর্শন করতে পারবো।