মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত

মধ্যযুগে ভারতে আগত ইওরোপীয় পর্যটকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মার্কো পোলো। তাঁকে "মধ্যযুগের পর্যটকদের রাজা" বলে অভিহিত করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন পর্যটকের জীবনই তাঁর জীবনের মতো বৈচিত্র্যপূর্ন ছিলো না। তাঁর বিশ্ব ভ্রমনের ক্ষেত্র যে বিরাট পরিসর জুড়ে ব্যাপৃত ছিলো, তা আর অন্য কোন পর্যটকের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না। মার্কো পোলো ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ইতালি থেকে রেশম পথ ধরে প্রথমে চিনে আসেন, পরে চিন থেকে জলপথে নিজ দেশ ইতালিতে ফেরার সময় আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও বন্দরে পরিভ্রমন করেন। 

দেশে ফেরার পর মার্কোপোলোর কাছ থেকে চিন ও ভারত ভ্রমনের নানা কাহিনী ও অভিজ্ঞতা শুনে মার্কোপোলোর বন্ধু রাস্তিচেল্লো দা পিসা ফরাসি ভাষায় মার্কোপোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত রচনা করেন। এই ভ্রমন বৃত্তান্তটি "The Travels of Marco Polo" নামে পরিচিত।

মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত
মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত 


(১.) মার্কো পোলোর ভারত আগমনকালে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা :-

উজবেকিস্তান থেকে আগত আরবীয় পর্যটক আলবেরুনীর মৃত্যুর (১০৪৮) প্রায় ২৪৩ বছর পরে ইতালীয় পর্যটক মার্কো পোলো ভারতে এসেছিলেন (১২৯২)। একথা ঠিক, আলবেরুনী ও মার্কো পোলোর মধ্যেকার সময়ের ব্যবধান ছিলো বিস্তর। কিন্তু ভিন্ন সময় ও ভিন্ন দেশ থেকে আগত এই দুই পর্যটকের ভারত আগমনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো এক। ভারত সম্পর্কে অদম্য কৌতুহল ও আগ্রহের টানেই এই দুই পর্যটক ভারতে এসেছিলেন। এই আগ্রহের টানে যুগে যুগে বহু পর্যটক ভারতে ছুটে এসেছিলেন।  মার্কো পোলোও তাঁর ব্যতিক্রম ছিলেন না। 

আলবেরুনীর সময় থেকে মার্কো পোলোর সময়ের ব্যবধানে ভারতের ইতিহাসে বহু উল্লেখযোগ্য স্মরনীয় ঘটনা ঘটে গিয়েছিলো। 

  • গজনীর সুলতান মামুদের (১০০০ - ১০২৭ খ্রিঃ) প্রায় ১৭ বার ভারত আক্রমণের কয়ের বছর পর ঘুর রাজ্যের সুলতান মহম্মদ ঘোরী ভারত অভিযান করেন। 
  • মহম্মদ ঘোরী ১১৯২ খ্রিঃ তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে দিল্লি ও আজমীরের শাসক পৃথ্বীরাজ চৌহানকে পরাজিত করে, তার ভারত অধিকৃত অঞ্চলের দায়িত্ব অর্পন করে যান অন্যতম বিশ্বস্ত ক্রীতদাস ও সেনাপতি কুতুবউদ্দিন আইবকের হাতে। 
  • কিছুকাল পর ১২০৬ খ্রিঃ কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিকে কেন্দ্র করে ভারতে সুলতানি শাসন (তুর্কো - আফগান শাসন) বা তথাকথিত দাসবংশের শাসনের সূচনা করেন। এই দাসবংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে ছিলেন - ইলতুৎমিস, রাজিয়া, গিয়াসউদ্দিন বলবন১২০৬ থেকে ১২৯০ খ্রিঃ পর্যন্ত দাসবংশের শাসন চলেছিলো।
  • ১২৯০ খ্রিঃ এই দাস বংশের শেষ সুলতান কাইকোবাদকে হত্যা করে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি দিল্লিতে খলজি বংশের শাসনের সূত্রপাত করেন। ভারতে খলজি বংশের শাসন চলেছিলো ১২৯০ থেকে ১৩২০ খ্রিঃ পর্যন্ত। খলজি বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন আলাউদ্দিন খলজি (১২৯৬ - ১৩১৬)।

মার্কো পোলোর ভারত আগমনের সময় ভারতে খলজি বংশের শাসন চলছিলো। তখন দিল্লির সুলতান ছিলেন জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি (১২৯০ - ১২৯৬)। মার্কো পোলো এই সময়ে যে দক্ষিণ ভারত পরিভ্রমন করেন, সেখানে চারটি উল্লেখযোগ্য হিন্দুরাজ্য ছিলো। এগুলি হল - 

  • (ক।) দেবগিরি রাজ্য (বর্তমান দৌলতাবাদ), এর রাজধানী ছিলো দেবগিরি
  • (খ।) বরঙ্গল রাজ্য (বর্তমান তেলেঙ্গানা), এর রাজধানী ছিলো তেলেঙ্গানা
  • (গ।) হোয়সল রাজ্য (বর্তমান কর্নাটক) , এর রাজধানী ছিলো দ্বারসমুদ্র
  • (ঘ।) পান্ড্য বা মাবার রাজ্য (বর্তমান কেরালা), এর রাজধানী ছিলো মাদুরাই
দক্ষিন ভারতের এই হিন্দুরাজ্য গুলিকে পরবর্তীকালে খলজি বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান আলাউদ্দিন খলজি জয় করে খলজি সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। এর আগে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজির আমলে ভারতে আগত পর্যটক মার্কো পোলো দক্ষিনের এইসব রাজ্য গুলির বিস্তৃত বিবরন তার ভ্রমন কাহিনীতে উল্লেখ করে যান। 

(২.)মার্কো পোলোর সংক্ষিপ্ত জীবনী:- 

(I.) জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় :- 

১২৫৪ খ্রিঃ ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ইতালির ভেনিস শহরের এক সম্ভ্রান্ত বংশে মার্কো পোলোর জন্ম হয়। তাঁর পারিবারিক ডাকনাম ছিলো - "এমিলিয়ন" (Emilione) । মার্কোর পিতার নাম ছিলো নিকোলো পোলো এবং মায়ের নাম ছিলো নিকোলো এনা ডিফিউস। মার্কো পোলোর পিতা নিকোলো পোলো এবং কাকা মাফেও পোলো দুজনেই ছিলেন বিখ্যাত ইটালিয়ান ব্যাবসায়ী। 

(II.) নিকোলো পোলো ও মাফেও পোলোর চিনযাত্রা :-  

মার্কোর পিতা ও কাকা যৌথভাবে ব্যবসা করতেন। কনস্ট্যান্টটিনোপেলে তাদের বানিজ্যের প্রধান কেন্দ্র ছিলো। বানিজ্যের জন্য তাদের প্রায়ই দূর দেশে যেতে হতো। একবার ক্রিমিয়া থেকে বখরায়ে যাওয়ার পথে নিকলো পোলো ও মাফেও পোলোর সঙ্গে চিনের কুবলাই খানের সেনাদলের দেখা হয়। কুবলাই খানের সেনাদূত এইসময় পোলোদের কুবলাই খানের দরবারে আমন্ত্রন জানান। এই আমন্ত্রন রক্ষার জন্য পোলোরা চিন যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 

মার্কো পোলো যখন খুব ছোট্ট তখন মার্কোর পিতা ও কাকা চিনের উদ্দেশ্যে বানিজ্য সফরে রওনা দেন। তাদের চিন যাত্রার উদ্দেশ্য ছিলো দুটি। এক, চিন সম্রাট কুবলাই খানের চিন যাত্রার আমন্ত্রন রক্ষা করা। দুই, চিন থেকে রেশমবস্ত্র এনে তা ইওরোপের বাজারে চড়া মূল্যে বিক্রি করা। 

(III.) কুবলাই খানের পরিচয় :- 

কুবলাই খান ছিলেন একজন মোঙ্গল সেনাপতি। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের নাতি ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত মোঙ্গল সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তরসূরী। ১২০৬ খ্রিঃ যাযাবর মোঙ্গলদের একটি সংগঠিত জাতি হিসাবে ঐক্যবদ্ধ করেন চেঙ্গিস খান।

কুবলাই খান ১২১৫ খ্রিঃ ২৩ শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চিনের ইউয়ান বা মোঙ্গল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে ১২৭১ খ্রিঃ থেকে ১২৯৪ খ্রিঃ পর্যন্ত চিন শাসন করেন। কুবলাই খান চিনের প্রথম অ - চিনা সম্রাট ছিলেন। তাঁর রাজধানী ছিলো দাদু, যা বর্তমানে বেইজিং নামে পরিচিত। ১২৯৪ খ্রিঃ তাঁর মৃত্যুর পর চিনে ইউয়ান রাজবংশ বা মোঙ্গল আধিপত্য দুর্বল হতে শুরু করে। 

(IV.) কুবলাই খানের দরবারে পোলোদের রাজপ্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ :- 

নিকোলো পোলো ও মাফেও পোলো দীর্ঘ রেশম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে চিনে কুবলাই খানের দরবারে পৌঁছান (১২৬৫)। কুবলাই খান পোলোদের সঙ্গে আলাপ করে অত্যন্ত অভিভূত হন। এই সময় খ্রিষ্টান ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে কুবলাই খান অত্যন্ত আগ্রহান্বিত হন। বলা বাহুল্য, তিনি সমগ্র চিনে খ্রিষ্টান ধর্ম প্রসারের ব্যাপারেও অত্যন্ত উৎসাহিত ছিলেন।

জাতে মোঙ্গল কুবলাই খান চিনা কর্মচারীদের বিশেষ বিশ্বাস বা ভরসা করতেন না। চিনাদের বদলে তিনি শ্বেতাঙ্গ বনিকদের বেশি ভরসাযোগ্য বলে মনে করতেন। এইসময় কুবলাই খান  ইওরোপীয় সওদাগর পোলোদের তাঁর রাজপ্রতিনিধি করে ইওরোপে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 

নিকলো পোলো ও মাফেও পোলোকে কুবলাই খান এইসময় দুটি দায়িত্ব দিয়ে ইওরোপে পাঠান। এক, ইওরোপের পোপ যেন জ্ঞানী গুনি ১০০ জন দূতকে চিনা সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারের জন্য প্রেরন করেন এবং দুই, চিনে ফিরে আসবার সময় পোলো ভাইয়েরা যেন জেরুজালেম ধরে আসেন এবং সেখান থেকে যীশু খ্রিষ্টের কবরের সদা প্রজ্বলিত পবিত্র তেল নিয়ে আসেন। 

পোলোদের নিরাপদে ইওরোপে ফেরার পথে কুবলাই খান একটি সোনার ফলকে খোদাই করা কূটনৈতিক পাসপোর্ট প্রদান করেছিলেন। এতে লেখা ছিলো - "শাশ্বত স্বর্গের শক্তির কসম, খানের নাম পবিত্র হোক। যে তাকে শ্রদ্ধা করে না তাকে হত্যা করা হোক।" এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে পোলোরা নিরাপদে ইওরোপে ফিরে আসতে পেরেছিলেন।

(V.) পোলো ভাইদের ইওরোপ প্রত্যাবর্তন :- 

চিনের বানিজ্য সফর শেষে মার্কোর পিতা ও কাকা ১২৬৯ খ্রিঃ যখন দেশে ফেরেন তখন দেশে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে গিয়েছিলো। 
  • ছোট্ট মার্কো তখন অনেকটাই বেড়ে উঠেছিলো। মার্কোর বয়স ছিলো তখন প্রায় ১৫ বছর। 
  • ইতিমধ্যে মার্কোর মা মারা গিয়েছিলেন। 
  • পোপের কাছে বিশেষ পত্র প্রেরনের যে দায়িত্ব দিয়ে কুবলাই খান পোলোদের ইতালিতে পাঠান, দেশে ফিরবার পর পোলো ভাইরা জানতে পারেন, ইতিমধ্যে পোপ চতুর্থ ক্লেমেন্টও মারা গেছেন
  • নতুন পোপের নির্বাচনের প্রত্যাশায় তারা দুবছর ভেনিসেই থেকে যান।

(VI.) মার্কোপোলোর চিন সফর :-  

পোপের নির্বাচনে যথেষ্ট বিলম্ব হওয়ায় নিকলো পোলো ও মাফেও পোলো মার্কো পোলোকে সঙ্গে নিয়েই ১২৭১ খ্রিঃ চিন সফরে রওনা দেন। মার্কো পোলো যখন পিতা ও কাকার সঙ্গে চিন সফরে যাত্রা শুরু করেন তখন তার বয়স ছিলো প্রায় ১৭ বছর

মার্কোরা সিল্ক রুট বা রেশমপথ ধরে স্থলপথে ১২৭৫ খ্রিঃ চিনে কুবলাই খানের দরবারে পৌঁছান। প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচ্যের সঙ্গে পাশ্চাত্যের ব্যবসা বানিজ্য ও যোগাযোগের অন্যতম পথ ছিলো সিল্ক রুট। মধ্য এশিয়ার মধ্যে প্রবাহিত এই পথটি অত্যন্ত দুর্গম ও বিপদসঙ্কুল ছিলো। 

মার্কো পোলোর ভ্রমন পথ : ভেনিস থেকে চিন ও চিন থেকে ভেনিসে স্থলপথ ও জলপথে আসা - যাওয়া।
মার্কো পোলোর ভ্রমন পথ : ভেনিস থেকে চিন ও চিন থেকে ভেনিসে স্থলপথ ও জলপথে আসা - যাওয়া। 


রেশম পথ ধরে চিনে আসবার সময়েই মার্কো পোলোরা সংবাদ পান পিয়াসেনজার তেওবাল্ডো ইওরোপের পরবর্তী পোপ নির্বাচিত হচ্ছেন। সেই সময় আকরে (বর্তমান ইজরায়েল) অবস্থানরত ভাবি পোপের হাতে কুবলাই খানের পত্র তুলে দিলে পোপ দুজন প্রতিনিধিকে মার্কো পোলোর সঙ্গে পাঠিয়ে দেন। দুর্গম রেশমপথ কিছুটা পাড়ি দেওয়ার পর পোপের প্রেরিত প্রতিনিধিরা চিন যেতে অস্বীকার করে ফিরে যান। মার্কো পোলোরা অবশ্য কুবলাই খানের জন্য জেরুজালেম থেকে পবিত্র গির্জার তেল ও পোপের পত্র সফল ভাবে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

(VII.) কুবলাই দরবারে মার্কো পোলো :- 

প্রায় সাড়ে তিন বছরের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ১২৭৫ খ্রিঃ মার্কো পোলো পিকিং শহরের কাছে সাঙ্গটুতে কুবলাই খানের দরবারে পৌঁছান। মার্কো পোলো এমনিতেই ইতালীয় ও ফারসি ভাষায় কথা বলতে পারতেন। চিনে থাকার সময় তিনি তাতারদের ভাষা (মোঙ্গল ভাষা) ও আচার - আচরন শিখে নেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মার্কো পোলো কুবলাই খানের মন জিতে তাঁর অত্যন্ত স্নেহভাজন ও বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন। 

মার্কো পোলো দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর চিনা শাসকের দরবারে অবস্থান করেন। এই সময় কুবলাই খান বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব দিয়ে মার্কোকে সাম্রাজ্যের নানা দুর্গম স্থানে পাঠান। এমনকি মার্কোকে একটি প্রদেশের শাসনকর্তাও নিযুক্ত করেন।

(VIII.) মার্কো পোলোর চিন থেকে প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ :- 

দীর্ঘ ১৭ বছর চিনে থাকার পর মার্কো পোলোরা স্বদেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। কুবলাই খান এইসময় যথেষ্ট বৃদ্ধ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর বিপুল সম্পত্তি নিয়ে তাদের চিন থেকে স্বদেশে ফেরা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের মনে করে মার্কো পোলোরা আগে ভাগেই চিন ত্যাগ করতে চাইছিলেন। কিন্তু কুবলাই খান কিছুতেই তাদের ছাড়তে রাজি ছিলেন না। 

ইতিমধ্যে মার্কোদের চিন ত্যাগের এক অনুকূল সুযোগ উপস্থিত হয়। পারস্যের (বর্তমান ইরানের)  ইলখান সাম্রাজ্যের মোঙ্গল শাসক আরঘুন খান তাঁর স্ত্রীকে হারিয়েছিলেন। আরঘুন খান ছিলেন কুবলাই খানের চাচাতো ভাই। কুবলাই খান আরঘুন খানের জন্য একজন মোঙ্গল রাজকন্যা ঠিক করেছিলেন। মার্কো পোলো ও তাঁর পিতার ওপর সেই রাজকন্যাকে পারস্যে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঠিক হয়, মার্কো পোলোরা দেশে ফিরে যাবার সময় মোঙ্গল রাজকন্যাটিকে পারস্যে আরঘুন খানের কাছে পৌঁছে দেবেন। 

চিনা সম্রাটের কাছে অনুমতি নিয়ে মার্কো পোলোরা স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য বেরিয়ে পড়েন। সেই সময়ে তাতারদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিলো বলে ঠিক হয় মার্কোরা জলপথে পারস্যে ফিরবেন। জলপথে ফেরার আরও একটি কারন ছিলো ভারত সম্পর্কে মার্কো পোলোর আগ্রহ। 

(IX.) মার্কো পোলোর জলপথে পারস্য ও ভারতে আসার বিবরন :- 

১২৯২ খ্রিঃ মার্কো পোলোরা চিনের টংকিং উপসাগর থেকে যাত্রা শুরু করে চম্পা, সুমাত্রা, মালাক্কা প্রনালী দিয়ে ভারতের আন্দামানে পৌঁছান, পরে সেখান থেকে সিংহল হয়ে যথাক্রমে ভারতের করমন্ডল উপকূল, গুজরাট ইত্যাদি হয়ে পারস্যে পৌঁছান। চিন থেকে পারস্যে পৌঁছাতে তাদের দুই বছর সময় লেগেছিলো। 

মার্কো পোলো যখন মোঙ্গল রাজকন্যাকে আরঘুন খানের রাজসভায় নিয়ে যান, তখন তারা শুনতে পান বৃদ্ধ আরঘুন খানের মৃত্যু হয়েছে। ফলে সেই মোঙ্গল রাজকন্যাকে আরঘুন খানের এক পুত্রের সঙ্গে বিবাহ দিয়ে তারা ভেনিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। 

(X.) মার্কো পোলোর স্বদেশে ফেরা ও কারারুদ্ধ হওয়া :-

পারস্য থেকে মার্কো পোলোরা স্থলপথে কনস্টান্টিনোপল এবং তারপর ভেনিসে ফিরে আসেন। দীর্ঘ ২৪ বছর পর ১২৯৫ খ্রিঃ মার্কো পোলো যখন স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন তাঁর বয়স ছিলো প্রায় চল্লিশ বছর। এই সময় (১২৯৫ খ্রিঃ) ভেনিসের সঙ্গে প্রতিবেশী জেনোয়া নগর রাষ্ট্রের যুদ্ধে মার্কো পোলো জড়িয়ে পড়েন এবং জেনোয়া বাহিনীর হাতে কারারুদ্ধ হন।  

কারাগারে বন্দী অবস্থায় (১২৯৬ - ১২৯৮) মার্কো পোলো তার চিন ও ভারত ভ্রমনের কাহিনীটি সহবন্দী রাস্তিচেল্লো দা পিসাকে শোনান। রাস্তিচেল্লো মার্কোর সেই ভ্রমন বৃত্তান্তটি গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন। 

(XI.) মার্কো পোলোর শেষ জীবন :- 

১২৯৯ খ্রিঃ ভেনিস ও জেনোয়ার মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধ শেষে সমস্ত বন্দীদের পাশাপাশি মার্কো পোলোকেও মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তি লাভের পর মার্কো ভেনিসে ফিরে আসেন এবং ডোনাটা বাডোয়ের নামে এক মহিলাকে বিবাহ করেন। অল্পদিনের ব্যবধানে মার্কো পোলো তিন কন্যা সন্তানের পিতা হন। চিন থেকে ফিরে আসার পর মার্কো পোলো কখনই আর বেশি দূর ভ্রমন করেন নি। ১৩২৪ খ্রিঃ ৮ই জানুয়ারি মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় তিনি ভেনিসেই ছিলেন। 

১৩২৪ খ্রিঃ ভেনিসে মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় তিনি যেসমস্ত কথা বলেছিলেন, তার মধ্যে তাঁর স্মরনীয় একটি উক্তি ছিলো - "আমি যা দেখেছি, তার অর্ধেকই বলেছি।

(৩.) মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তের পরিচয় :- 

(I.) ভ্রমন বৃত্তান্তের কথক ও লেখক :- 

মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তটি তিনি নিজে রচনা করেন নি। সেটি লিখেছিলেন তাঁর অন্যতম বন্ধু রাস্তিচেল্লো দা পিসা। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি, জেনোয়ার কারাগারে বন্দী অবস্থায় (১২৯৬ - ১২৯৮) মার্কো পোলো তার চিন ও ভারত ভ্রমনের কাহিনীটি সহবন্দী রাস্তিচেল্লো দা পিসাকে শোনান। কারাগারে রাস্তিচেল্লো মার্কোর সেই ভ্রমন বৃত্তান্তটি ফরাসি ভাষায় গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করেন। 

(II.) ভ্রমন বৃত্তান্তের নাম :- 

মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তের প্রকৃত নাম ছিলো - "ডেভিসমেন্ট ডু মন্ডে"/"Devisement du Monde" (Description of the world/বিশ্বের বর্ননা) বা "লিভ্রে দেস মারভেলেস দ্যু মন্দে" /"Livre des Merveilles du Monde" (বিস্ময়কর পৃথিবীর বর্ননা)। 

ফরাসি ভাষায় লেখা মূল গ্রন্থটি পরবর্তীকালে ইওরোপের নানা ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশিত হয়েছিলো। মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তের ইংরেজি অনুবাদের নাম ছিলো - "The Travels of Marco Polo"। মার্কোর ভ্রমন বৃত্তান্তের মূল পান্ডুলিপিটি হারিয়ে যায়, বর্তমানে এটি আর পাওয়া যায় না। মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তটি ইওরোপে এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিলো যে এই বইটি ইওরোপে সর্বাধিক বিক্রির জন্য "বেস্ট সেলার বুকের" স্বীকৃতি লাভ করেছিলো। 

(III.) ভ্রমন বৃত্তান্তের বিষয়বস্তু :- 

১২৭১ খ্রিঃ থেকে ১২৯৫ খ্রিঃ পর্যন্ত সময়কালে মার্কো পোলোর - (i.) চিন, ভারত সহ এশিয়া ভ্রমন এবং (ii.) চিনের মোঙ্গল সম্রাট কুবলাই খানের দরবারে প্রায় ১৭ বছর (১২৭৫ - ১২৯২) থাকার নানা অভিজ্ঞতাই ছিলো এই গ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু। 

মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তটি ৪ টি পর্বে বিভক্ত ছিলো। 
  • প্রথম পর্বে বর্নীত আছে মার্কোর মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া ভ্রমনের নানা কাহিনী। 
  • দ্বিতীয় পর্বে আলোচিত হয়েছে মার্কোর চিন ভ্রমন এবং কুবলাই খানের দরবারে তাঁর থাকার ও কাজের নানা অভিজ্ঞতার কথা। 
  • তৃতীয় পর্বে আছে জলপথে ভারত, জাপান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ভ্রমনের অভিজ্ঞতার কথা। 
  • চতুর্থ পর্বে মোঙ্গল জাতির মধ্যে কিছু যুদ্ধ বিগ্রহ এবং রাশিয়া সহ দূরদেশের বেশ কিছু অঞ্চল ভ্রমনের অভিজ্ঞতার বিবরন লিপিবদ্ধ আছে।

(৪.) মার্কো পোলোর বর্ননায় ভারত :- 

"The Travels of Marco Polo" গ্রন্থের তৃতীয় পর্বে মার্কো পোলোর ভারত ভ্রমনের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ আছে। (i.) মার্কো ১২৭১ খ্রিঃ তাঁর পিতা ও কাকার সঙ্গে রেশম পথ ধরে প্রথমে চিনে আসেন। (ii.) চিনে আসার পর ১২৭৫ খ্রিঃ থেকে ১২৯২ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি মোঙ্গল সম্রাট কুবলাই খানের দরবারে ছিলেন। (iii.) এরপর ১২৯২ খ্রিঃ তিনি জলপথে চিন থেকে পারস্য বা ভেনিসে ফিরে যাবার সময় মাঝপথে দক্ষিন ভারতের নানা বন্দর ও রাজ্যে পরিভ্রমন করেন। 

মার্কোর চিন থেকে ভেনিসে ফিরে যেতে প্রায় ৩ বছর সময় লেগেছিলো। এর মধ্যে প্রায় দেড় থেকে দুই বছর সময় তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল গুলিতে পরিভ্রমন করেন। 

(i.) মার্কোর যাত্রাপথ ও পরিভ্রমনকারী ভারতীয় অঞ্চল :-

মার্কোর চিন থেকে ইতালিতে ফেরার সময়কালে (১২৯২ খ্রিঃ) তাতারদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিলো বলে রেশম পথ বা স্থলপথে চিন থেকে ফিরে আসা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। এমতাবস্থায় মার্কো পোলো ঠিক করেন, তারা জলপথে চিন থেকে ভারত মহাসাগর, আরব সাগর হয়ে পারস্যে ফিরবেন। এই যাত্রাপথের মাঝে মার্কো পোলো দক্ষিণ ভারতের করমন্ডল উপকূল, মালাবার উপকূল ও কোঙ্কন উপকূলের বিভিন্ন বন্দর ও রাজ্যে পরিভ্রমন করেন। তিনি বর্তমান ভারতের তামিলনাড়ু, কেরালা, তেলেঙ্গানা - অন্ধ্রপ্রদেশ অঞ্চল, ও গুজরাট রাজ্য পরিভ্রমন করেন। 


উপকূলের নাম পরিচয়
করমন্ডল উপকূল অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু রাজ্যের উপকূল জুড়ে বিস্তৃত। এটি ভারতের পূর্ব উপকূলের একটি অংশ।
মালাবার উপকূল এটি বর্তমান কেরালা রাজ্যের উপকূল জুড়ে বিস্তৃত। এই অঞ্চলটি ভারতের পশ্চিম উপকূলের একটি অংশ।
কোঙ্কন উপকূল এটি বর্তমান মহারাষ্ট্র ও গোয়া রাজ্যের উপকূল জুড়ে বিস্তৃত। এটি ভারতের পশ্চিম উপকূলের একটি অংশ।

মার্কোর জাহাজ চিনের টং কিং উপসাগর থেকে ১২৯২ খ্রিঃ রওনা হয়ে পারস্যে পৌঁছায় ১২৯৪ খ্রিঃ। মাঝের দুই বছর তাদের জাহাজ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন বন্দরে নোঙর করতে বাধ্য হয়। এই সুযোগে মার্কো ভারতের উপকূলবর্তী নানা রাজ্য, শহর ও বন্দর পরিভ্রমন করেন। 

ভারতীয় উপকূল ধরে মার্কো পোলোর যাত্রা পথ : করমন্ডল উপকূল, মালাবার উপকূল ও কোঙ্কন উপকূল।
ভারতীয় উপকূল ধরে মার্কো পোলোর যাত্রা পথ : করমন্ডল উপকূল, মালাবার উপকূল ও কোঙ্কন উপকূল।


মার্কোদের জাহাজ চিনের টং কিং উপসাগর থেকে চম্পা, সুমাত্রা, আন্দামান হয়ে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছায়। তারপর সেখান থেকে তাদের জাহাজ ভারতের করমন্ডল উপকূল, মালাবার উপকূল ও কোঙ্কন উপকূল ধরে পারস্যে পৌঁছে যায়। মার্কো তৎকালীন সময়ে ভারতের যেসব রাজ্য গুলিতে পরিভ্রমন করেন সেগুলি হলো -
  • আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ, 
  • পান্ড্যদের শাসিত সিংহল বা শ্রীলঙ্কা, 
  • তামিলনাড়ুর পান্ড্য বা মাবর রাজ্য, 
  • কাকাতীয় বংশ শাসিত বরঙ্গল বা তেলেঙ্গানা রাজ্যের মুৎফিলি/মুসুলিপত্তনম বন্দর, 
  • পান্ড্যদের দ্বারা শাসিত কায়ল বন্দর, 
  • কৈলম রাজ্য, 
  • মালাবার রাজ্য, 
  • মহারাষ্ট্রের থানে, 
  • গুজরাট রাজ্য ও বন্দর 

(ii.) আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ :- 

মার্কো পোলো চিনের টং কিং উপসাগর থেকে মালাক্কা প্রনালী ধরে আন্দামানে আসেন। মার্কো পোলোই প্রথম ইওরোপীয় ব্যক্তি ছিলেন যিনি আন্দামান দ্বীপ সম্পর্কে বহু অজনা তথ্য তুলে ধরেন। তিনি লেখেন আন্দামানে কোন রাজা নেই। এখানকার আদিবাসীরা একসঙ্গে মিলেমিশে দ্বীপটিকে চালাতো। এখানকার লোকেরা কাপড় বুনতে বা পড়তে জানতো না। গাছের পাতা ঢেকে তারা লজ্জা নিবারন করতো।


(iii.) পান্ড্য রাজ্য - সিংহল :- 

আন্দামান থেকে মার্কো পোলো পৌঁছান সিংহলে। সিংহল তখন ছিলো দক্ষিণ ভারতের পান্ড্য রাজাদের অধীন। সিংহল সম্পর্কে মার্কো পোলো যেসব বক্তব্য রেখেছিলেন তা ছিলো এইরকম - 
  • সিংহলের অধিবাসীরা ছিলেন প্রায় নগ্ন। কোমরে লজ্জা নিবারনের একখন্ড কাপড় ছাড়া তারা আর কিছুই পরতেন না। 
  • সিংহলে চাল আর তিল ছাড়া কোন কিছু চাষ হতো না। 
  • এখানকার অধিবাসীদের প্রধান খাদ্য ছিলো ভাত, মাংস আর দুধ। 
  • খাবারের প্রাচুর্য না থাকলেও, এখানে পদ্মরাগমনির অভাব ছিলো না। এখানকার রাজার কাছে ছিলো একটি বড়ো পদ্মরাগমনি।

(iv.) তামিলনাড়ুর পান্ড্য রাজ্য বা মাবর রাজ্য :- 

সিংহল থেকে পক প্রনালী পেরিয়ে মার্কো পোলো আসেন ভারতের করমন্ডল উপকূলে বা তামিলনাড়ুর পান্ড্য রাজ্যেপান্ড্য রাজ্যকে মার্কো পোলো "মাবার রাজ্য" বলে উল্লেখ করেছিলেন

পান্ড্য সাম্রাজ্য ছিলো তামিলনাড়ুর তিন মহান সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি। বাকি দুই সাম্রাজ্য ছিলো যথাক্রমে চোল সাম্রাজ্য ও চের সাম্রাজ্য। পান্ড্য সাম্রাজ্যকে ৫ ভাই মিলে মিশে চালাতো। পাঁচ ভাই সাম্রাজ্যের পাঁচ আলাদা প্রান্তের শাসক ছিলেন। পান্ড্য রাজ্যের রাজধানী ছিলো মাদুরাই

ত্রয়োদশ শতকের মধ্য ভাগে পান্ড্য বংশের রাজা ছিলেন জটাবর্মন সুন্দর পান্ড্য (১২৫১ - ১২৭২)। তিনি ছিলেন পান্ড্য বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি পান্ড্য রাজ্যকে পূর্বে করমন্ডল উপকূল থেকে পশ্চিমে মালাবার উপকূলের কুইলন পর্যন্ত এবং দক্ষিনে শ্রীলঙ্কা/সিংহল পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন। মার্কো পোলো যখন মাবর রাজ্যে আসেন তখন এই রাজ্যের রাজা ছিলেন - মারবর্মন কুলশেখর পান্ডে। 

মার্কো পোলো মাবর বা পান্ড্য রাজ্য সম্পর্কে যেসব বক্তব্য রেখেছেন তা হলো এইরকম - 
  • পান্ড্য রাজ্য বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাজ্যের একটি ছিলো। 
  • পান্ড্য রাজ্য মুক্তো উৎপাদনে প্রসিদ্ধ ছিলো।
  • এখানে অত্যাধিক গরম থাকায় রাজা - প্রজা সকলেরই উর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত থাকতো। স্ত্রী - পুরুষ সকলেই সকাল - সন্ধ্যা দুবার স্নান করতো।
  • এখানকার রাজা বহু মূল্যবান রত্ন ও মনি মানিক্য পরিধান করে থাকতেন।
  • রাজ্যের লোকের প্রধান খাদ্য ছিলো - দুধ, ভাত, তাড়ি বা মদ । তবে তারা মাংস খেতো না।
  • তারা বামহাতে খাবার স্পর্শ করতেন না। জল খাওয়ার পাত্র মুখে ঠেকাতেন না। মাটিতে বসে খাদ্য গ্রহণ করতেন। ঘর নিকানো বা শুদ্ধিকরনের কাজে গোবর ব্যবহার করতেন। 
  • রাজ্যে সতীদাহপ্রথা, দেবদাসী প্রথা, নানা জাদু, তুকতাক ইত্যাদি প্রচলিত ছিলো। শুভ কাজে যাওয়ার আগে তারা নিজ ছায়ার দৈর্ঘ্য মেপে যেতো বা মাকড়সার যাত্রাপথ দেখে সিদ্ধান্ত নিতো
  • পান্ড্য রাজ্যে ঘোড়া পাওয়া যেতো না। তাই পান্ড্য দেশের রাজারা আরবদের কাছ থেকে ঘোড়া কিনতো।
  • মার্কো পোলোর বর্ননা অনুযায়ী মাবার রাজ্যে (বর্তমান তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ে) খ্রিষ্টান সাধু সেন্ট থমাস শহীদ হয়েছিলেন। তাঁর সমাধিস্থলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিলো সান থোম শহর। বহু খ্রিষ্টান ও মুসলমান পুন্য অর্জনের জন্য এই শহরে আসতো এবং এখানকার লাল মাটি বাড়ি নিয়ে যেতো। 

(v.)তেলেঙ্গানা/বরঙ্গল রাজ্যের মুৎফিলি বন্দর :- 

মাবর রাজ্য থেকে ৫০০ মাইল উত্তরে মার্কো পোলো মুরফিলি বা মুৎফিলি বা মতুপল্লী বন্দরে আসেন। ঐতিহাসিকদের মতে, মুৎফিলি কৃষ্ণা নদীর মোহনায় অবস্থিত বর্তমানকালের মুসুলিপত্তনম ছিলো। 

মুৎফিলি বন্দরটি তৎকালীন বরঙ্গল রাজ্যে/বর্তমান তেলেঙ্গানা রাজ্যে অবস্থিত ছিলো। মার্কো পোলো যখন এই রাজ্যে আসেন, তখন এখানকার রানী ছিলেন কাকাতীয় বংশীয় রুদ্রমাদেবী। পিতা গনপতিদেবের আকস্মিক মৃত্যুর পর বরঙ্গল রাজ্যের শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেন রুদ্রমাদেবী। তিনি ১২৬১ খ্রিঃ থেকে ১২৯৫ খ্রিঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন । মার্কোর মতে, রুদ্রমাদেবী ছিলেন একজন নিরপেক্ষ, ন্যায় পরায়ন ও দক্ষ নারী শাসিকা। এই রাজ্যের প্রজারা পূর্ববর্তী রাজাদের থেকে তাকে বেশি ভালোবাসতো। 

মার্কো পোলোর মতে, বরঙ্গল রাজ্যের গোলকুন্ডা হিরের খনির জন্য বিখ্যাত ছিলো। মার্কো পোলো বরঙ্গল রাজ্যের বস্ত্রশিল্পের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তাঁর মতে, এই অঞ্চলের লোকেরা উন্নতজাতের মেষপালন করতো। অন্ধ্রের কাকতীয় রাজারা ত্রয়োদশ শতকে একটি রাজকীয় আদেশ জারি করে মুৎফিলি বন্দরে বনিকদের স্বার্থ রক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। মার্কো পোলো জানিয়েছেন, মুৎফিলি থেকে উৎকৃষ্ট মানের মসলিন ও হিরে বিদেশে রপ্তানি করা হতো। 

(vi.) পান্ড্য শাসিত কায়ল বন্দর :- 

করমন্ডল উপকূলে তাম্রপর্নী নদীর তীরে কায়ল বন্দর অবস্থিত ছিলো। এই বন্দরটি মাবর রাজ্যের পান্ড্য রাজার এক ভাই শাসন করতেন। মার্কোর মতে, আরব দেশের বনিকরা অর্মুজ, কিসা, এডেন প্রভৃতি বন্দর থেকে পন্যদ্রব্য ও ঘোড়া এনে এই বন্দরে বিক্রি করতো। এই বন্দরে প্রচুর হিরা, মনিমানিক্য ও মুক্তো পাওয়া যেতো। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে সুগন্ধির ব্যবহার ও পান খাওয়ার প্রচলন ছিলো। 

(vii.) কৈলম রাজ্য :- 

কায়ল বন্দর ঘুরে মার্কো পোলো পৌঁছেছিলেন কৈলাম রাজ্যে (বর্তমান কুইলনে)। এটি মালাবার অঞ্চলে অবস্থিত ছিলো। মার্কোর মতে - 
  • এখানে প্রচুর পরিমাণে চন্দন গাছ, গোলমোরিচ ও উৎকৃষ্ট নীল ও ধানের চাষ হতো। এছাড়া ছিলো বহু রকম ফলের গাছ। 
  • কৈলম রাজ্যের রাজা স্বাধীন ভাবে রাজ্য শাসন করতেন। 
  • এই রাজ্যে অনেক খ্রিষ্টান ও ইহুদি বসবাস করতো।
  • রাজ্যটি ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য খুব বিখ্যাত ছিলো। 
  • আরব ও দক্ষিন চিন থেকে অনেক বনিক এখানে ব্যবসার জন্য আসতো। 

(vii.) মালাবার দেশ :- 

কৈলমের উত্তর - পশ্চিমে ছিলো মালাবার দেশ। এই দেশটির রাজাও ছিলেন স্বাধীন। মার্কোর মতে - 
  • মালাবারে প্রচুর পরিমাণে গোলমরিচ, আদা এবং কাবাবচিনি পাওয়া যেতো।
  • পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সুতিকাপড় তৈরি হতো মালাবারে।
  • মালাবার উপকূলের মশলার বিশেষ সুখ্যাতি ছিলো
  • তবে মালাবার অঞ্চলে জলদস্যুদের মারাত্মক উপদ্রোপ ছিলো।

(viii.) মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন উপকূল (থানে) :- 

মালাবার উপকূলে জলদস্যুদের মুখে পড়ে মার্কো পোলোদের জাহাজ মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন উপকূলে অবস্থিত থানেতে পৌঁছায়। মহারাষ্ট্রে তখন সিলাহারা সাম্রাজ্যের শাসন ছিলো। এই অঞ্চলেও জলদস্যুদের উপদ্রোপ ছিলো। মার্কোর মতে, এখানকার রাজা জলদস্যুদের সঙ্গে মিলে ডাকাতি করতেন। অনেকে পরিবারিক ভাবে ডাকাতির পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মার্কোর মতে, জলদস্যুরা ডাকাতি করলেও, কাউকে হত্যা করতেন না। 

মার্কোর মতে, মহারাষ্ট্রের থানা (বর্তমান থানে) থেকে প্রস্তুত সুগন্ধি ও চামড়া বিদেশে চড়া মূল্যে বিক্রি হতো। 

(ix.)গুজরাট রাজ্য ও বন্দর :- 

মালাবার বা কোঙ্কন উপকূল ধরে উত্তরে যাওয়ার পথে মার্কোর জাহাজ গুজরাটে নোঙর করে। মার্কোর মতে - 
  • কাম্বে উপসাগরের পাশে অবস্থিত কাম্বায়াহ বা খাম্বাত বন্দর ছিলো গুজরাটের একটি ব্যস্ত ও সমৃদ্ধশালী বন্দর।
  • এখানকার নিজস্ব ভাষা ও শাসক ছিলো। 
  • গুজরাটের বাজার ইওরোপের যেকোন দেশের বাজারের থেকেও অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ ছিলো
  • গুজরাটে প্রচুর পরিমাণে আদা, নীল, গোলমোরিচ, তুলোর চাষ হতো।
  • এই অঞ্চলটি মসলিনসুতিবস্ত্রের জন্য বিখ্যাত ছিলো। 
  • পৃথিবীর সেরা সূক্ষ্ম সূচের কারুকাজ এই অঞ্চলে হতো।
  • তবে এই অঞ্চলেও জলদস্যুদের উপদ্রোপ ছিলো।
ভ্রমন শেষে মার্কো পোলোদের জাহাজ গুজরাটের সোমনাথ হয়ে ভারতের বাইরে বেরিয়ে যায়। ভারত মহাসাগর, আরব সাগর হয়ে মার্কো পোলোর জাহাজ ১২৯৪ খ্রিঃ যখন পারস্যে পৌঁছায়, তখন তিনি সংবাদ পান চিনের মোঙ্গল শাসক কুবলাই খান এবং পারস্যের মোঙ্গল শাসক আরঘুন খান দুজনেরই  মৃত্যু হয়েছে। তারপর পারস্য থেকে ভেনিসে ফিরে যেতে মার্কোদের আরও একবছর সময় লেগেগিয়েছিলো।

(৫.) মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তের ঐতিহাসিক গুরুত্ব :- 

মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিলো অপরিসীম। 

প্রথমত, মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত থেকেই ইউরোপীয়রা প্রথম প্রাচ্যের ভূগোল,সংস্কৃতি ও জাতিগত রীতিনীতির একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ ধারনা পেয়েছিলো।

দ্বিতীয়ত, মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত পড়েই ক্রিস্টোফার কলম্বাস, প্রিন্স হেনরী, ভাস্কো দা গামার মতো পাশ্চাত্যের অনেক অভিযাত্রী এশিয়া বা ভারতে নৌ অভিযানের রসদ ও অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন।

তৃতীয়ত, মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত ছিলো পশ্চিমী দুনিয়ার কাছে এক প্রামান্য রেকর্ড বা দলিল। মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত পড়েই ইউরোপীয়রা প্রথম চিন ও ভারতের প্রাকৃতিক ও বানিজ্যিক সমৃদ্ধির কথা জানতে পারে। মার্কোর বিবরন থেকে ইওরোপ জানতে পারে, ভারতের উপকূল অঞ্চল এবং ভারতীয় সমুদ্রের দ্বীপসমূহ মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ন ছিলো। এছাড়া, চিনা মাটির বাসন, বারুদ, কাগজের টাকা, এশিয়ার বৈচিত্র্যময় গাছ গাছালি ও পশুপাখির কথা ইউরোপ মার্কো পোলোর রচনা পড়েই জানতে পারে। ভারতের বিপুল সম্পত্তির কথা ইওরোপীয়দের কাছে মার্কো পোলোই প্রথম তুলে ধরেন

চতুর্থত, ভারতের আর্থ - সামাজিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মার্কো পোলোর বিবরন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। মার্কোর বিবরন থেকে দক্ষিণ ভারতের কুইলন, কালিকট, পান্ডারানি, ম্যাঙ্গালোর, বারকুব, হোনাবুর, সিন্দাবুর (গোয়া), মুৎফিলি প্রভৃতি বানিজ্যিক বন্দরের কথা আমরা জানতে পারি। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিজ, খনিজ ও শিল্প দ্রব্যের পরিচয়ও আমরা পেয়ে থাকি, যা উল্লেখিত সময়ের অর্থনৈতিক ইতিহাস রচনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে থাকে। 

পঞ্চমত, মার্কো পোলোর কাছ থেকেই কুবলাই খান ইউরোপের আইন, রাজনীতি, রোমের পোপ ও খ্রিষ্টান ধর্ম সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে পারেন। একই ভাবে চিনের রাজনীতি ও সমাজ সম্পর্কিত বহু অজানা তথ্য ইউরোপ মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্ত থেকেই জানতে পারে। এছাড়া, মার্কো পোলোর বিবরনীর স্পষ্ট প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছিলো কার্টোগ্রাফি, কাতালান অ্যাটলাস ও ফ্রা মাউরো মানচিত্র প্রবর্তনের ক্ষেত্রে

ষষ্ঠত, মার্কো পোলোর বিবরন দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস রচনায় বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে থাকে। দক্ষিণ ভারতের পান্ড্য রাজ্য, বরঙ্গল রাজ্য, মালাবার উপকূল ও কোঙ্কন উপকূলের মানুষদের জীবনযাত্রা, পোশাক পরিচ্ছদ, তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন সম্পর্কে বহু তথ্য মার্কো পোলোর বিবরনে পাওয়া যায়। 

মনে রাখতে হবে, মার্কো পোলোর আগে অনেক বনিক বা পর্যটকই ইওরোপ থেকে রেশম পথ ধরে প্রাচ্যে এসেছিলেন বা প্রাচ্য থেকে জলপথে নিজ দেশে ফিরেও গিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে মার্কোই একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন, যিনি তাঁর প্রাচ্যদেশ ভ্রমন ও যাত্রাপথের বিবরনকে ভাবীকালের জন্য লিপিবদ্ধ করে রাখার ব্যবস্থা করে যান। মার্কোর এশিয়া ভ্রমনের সাফল্য ও এশিয়ার পথঘাট, দেশ, জনজতি ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কিত নানান তথ্য ইওরোপকে এশিয়া অভিযানে অনেকখানি অনুপ্রাণিত ও প্রলুব্ধ করেছিলো।

(৬.) মার্কোর ভ্রমন বৃত্তান্তের সীমাবদ্ধতা :- 

মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অনেক ঐতিহাসিক মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন। যেমন - 
  • (১.) মার্কো পোলোর ভ্রমনকথায় শুধুমাত্র দক্ষিণ ভারতের উপকূলবর্তী এলাকার বিবরনই পাওয়া যায়, সমগ্র ভারত বা উত্তর - পূর্ব ভারতের কথা তেমন ভাবে জানতে পারা যায় না। 
  • (২.) মার্কো তাঁর ভ্রমন কথায় বহু আজগুবি, আষাঢ়ে, লোকমুখে প্রচলিত কাহিনী বা তথ্যকে তাঁর ভ্রমনকথায় স্থান দিয়েছিলেন। ফলে তাঁর ভ্রমনকথার সব বক্তব্য সঠিক ছিলো না। 
  • (৩.) ইওরোপের অনেক ঐতিহাসিক, বিশেষত জন ডব্লিউ হেগার, হার্বাট ফ্রাঙ্ক, ফ্রান্সিস উড প্রমুখরা সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, মার্কো আদৌ চিনে যান নি। কারন হিসাবে তারা বলেন, মার্কো পোলো চিনের মহাপ্রাচীর, চিনা লিপি, চা বা চপস্টিকের বিষয়ে কিছুই বলেন নি। এদের মতে, মার্কো কনস্টানটিনোপল ও কৃষ্ণসাগরের কাছে কিছু ইতালীয় উপনিবেশে গিয়ে থাকতে পারেন, তার বেশি কিছু নয়। 
  • (৪.) ব্রিটিশ ঐতিহাসিক ডেভিড মরগান বলেছেন, মার্কো পোলো চিনে তাঁর মর্যাদা ও প্রভাব সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ও মিথ্যা বলেছিলেন।
মনে রাখতে হবে, মার্কো পোলো তাঁর ভ্রমন বৃত্তান্তটি নিজে লেখেন নি। জেনোয়ার কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তাঁর বিশ্ব ভ্রমনের কাহিনীটি তিনি সহবন্দী ও বন্ধু পিসার অধিবাসী রাস্টিসেলোকে শুনিয়েছিলেন। মার্কোর সেই কাহিনীটিকেই রাস্তিচেল্লো (Rusticello) ভ্রমন বৃত্তান্ত রূপে সংকলিত করেন। গল্প কথক শ্রবনকে আকর্ষনীয় করে তোলার জন্য বহু ঘটনাকেই অতিরঞ্জিত আকারে কাহিনীতে পেশ করেন। মার্কোর ভ্রমন বৃত্তান্তের ক্ষেত্রও তেমনই কিছু ত্রুটিতে বিদ্ধ ছিলো।

একঝলকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর :- 

1/30
মার্কো পোলো কোন দেশ থেকে এসেছিলেন?
ইতালির ভেনিস থেকে।
2/30
মার্কো পোলো কখন ভারতে আসেন?
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে (১২৯২ খ্রিঃ - ১২৯৪ খ্রিঃ)
3/30
মার্কো পোলোর পিতার নাম ছিলো __________।
নিকোলো পোলো।
4/30
মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তটি কে লিখেছিলেন?
রাস্তিচেল্লো দা পিসা।
5/30
মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তটির নাম কি?
The Travels of Marco Polo
6/30
মার্কো পোলোর ভারত ভ্রমনের সময় দিল্লির সুলতান কে ছিলেন?
জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি।
7/30
মার্কো পোলো পান্ড্য রাজ্যকে কি নামে অভিহিত করেন?
মাবর রাজ্য।
8/30
মার্কো পোলো যখন পান্ড্য রাজ্যে আসেন, তখন সেখানকার রাজা কে ছিলেন?
মারবর্মন কুলশেখর পান্ড্য।
9/30
মার্কো পোলো ভারতের কোন অঞ্চলে বৃহৎ পদ্মরাগমনি দেখেছিলেন?
সিংহলে।
10/30
মুতফিলি বন্দর কোথায়/কোন রাজ্যে অবস্থিত ছিলো?
কাকতীয় বংশ শাসিত রাজ্য বরঙ্গলে।
11/30
মার্কো পোলো হিরের খনি কোথায় দেখেছিলেন?
বরঙ্গল রাজ্যের গোলকুন্ডায়।
12/30
কুবলাই খান কোথাকার সম্রাট ছিলেন?
চিনের।
13/30
মার্কো পোলো কত খ্রিঃ জন্মগ্রহণ করেন?
১২৫৪ খ্রিঃ।
14/30
মার্কো পোলো কত খ্রিঃ চিন যাত্রা করেন?
১২৭১ খ্রিঃ ।
15/30
মার্কো পোলো কত খ্রিঃ কুবলাই খানের দরবারে পৌঁছান?
১২৭৫ খ্রিঃ ।
16/30
মার্কো পোলো কত খ্রিঃ চিন থেকে ভেনিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন?
১২৯২ খ্রিঃ।
17/30
মার্কো পোলো ভারতের কোন অঞ্চল পরিভ্রমন করেন?
দক্ষিণ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চল।
18/30
মার্কো পোলো মাবর রাজ্য থেকে কোন বন্দরে আসেন?
মুতফিলি বন্দরে।
19/30
মার্কো পোলোর মৃত্যু হয় _______।
১৩২৪ খ্রিঃ।
20/30
দক্ষিণ ভারতে রুদ্রমাদেবীর শাসনকালে আগত একজন পর্যটক ছিলেন ________।
মার্কো পোলো।
21/30
মার্কো পোলো চিন থেকে ভারতে আসেন ________পথে।
জলপথে।
22/30
মার্কো পোলোর ভ্রমন বৃত্তান্তটি কোন ভাষায় লেখা হয়?
ফরাসি ভাষায়।
23/30
ডেভিসমেন্ট ডু মন্ডে কার ভ্রমন বৃত্তান্ত ছিলো?
মার্কো পোলোর।
24/30
মার্কো পোলো কত খ্রিঃ ভারতের করমন্ডলে আসেন?
১২৯২ খ্রিঃ।
25/30
খ্রিষ্টান সাধু সেন্ট থমাস শহীদ হয়েছিলেন ভারতের কোন রাজ্যে?
মাবর রাজ্যে।
26/30
মতুপল্লী বন্দর কোন নদীর মোহনায় অবস্থিত ছিলো?
কৃষ্ণা নদীর।
27/30
মার্কো পোলো ভারতের কোন উপকূলে জলদস্যুদের উপদ্রোপের কথা বলেছিলেন?
মালাবার উপকূল ও কোঙ্কন উপকূলে।
28/30
পক প্রনালীতে মুক্ত ব্যবসার বিবরন দিয়েছেন কোন বিদেশী পর্যটক?
মার্কো পোলো।
29/30
দক্ষিণ ভারতের ব্যবসা বাণিজ্যের বিস্তারিত বিবরন দিয়েছিলেন কোন বিদেশী পর্যটক?
মার্কো পোলো।
30/30
পান্ড্য রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিলো ______।
মাদুরাই।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post