
ইতিহাসের তথ্য বিশ্লেষণের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি

(অ.) ইতিহাস চর্চায় তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন :-
(১.) অতীতের অনন্ত সময়কালে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঘটনাই হলো ইতিহাসের এক একটি তথ্য। এই তথ্য বা ঘটনাকে ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন এবং বিশ্লেষন করে থাকেন।
(২.) দৃষ্টিভঙ্গি বা দেখার ধরন যেমন ব্যক্তিভেদে আলাদা হয়, তেমনই যুগ, দেশ ও কাল অনুসারেও আলাদা হয়ে থাকে। একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝে নেওয়া যাক।
ধরা যাক, তোমার ক্লাসে রাহুল নামে একটি ছেলে পড়ে। এখন তোমাদের প্রত্যেককে পৃথক পৃথক করে একটি আলাদা ঘরে ডেকে জানতে চাওয়া হলো, রাহুল ছেলেটি কেমন? এখানে সকলের উত্তর কি একই হবে? তা তো হবে না। সকলের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। সুতরাং রাহুল কেমন ছেলে সকলেই তা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ব্যাখ্যা - বিশ্লেষন করবে।
আরোও একটি উদাহরণ নেওয়া যাক। একদিন ক্লাস করতে করতে হঠাৎতি তোমাদের ক্লাসের মাস্টারমশাই সকলকে বললেন তোমরা এখন একটু বাইরে থেকে ঘুরে এসো। কিছুক্ষণ পর ঐ ক্লাসের মাস্টারমশাই প্রত্যেককে আলাদা করে ডেকে জানতে চাইলেন, তুমি বাইরে কি দেখলে? এর উত্তরে সকল ছাত্রই কি একই কথা বলবে? তা তো বলবে না। কেউ হয়তো বলবে, আমি একটি গাছে কয়েকটি পাখি দেখলাম। আবার কেউ দূরে রাস্তায় হয়তো কোনো অচেনা ব্যক্তির হেঁটে যাওয়ার কথা বলবে।
এইভাবে ব্যক্তি ভেদে দেখার দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটে। বদলে যাওয়া এই দৃষ্টিভঙ্গিতে অতীতকে দেখার ভঙ্গিমারও বদল ঘটে যায়। এই কারনে একই ইতিহাস ভিন্ন ভিন্ন লেখকদের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষনে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠে। এক একজন লেখক এক এক দৃষ্টিভঙ্গিতে ঐতিহাসিক তথ্য বা ঘটনা গুলির বিশ্লেষন করেন বলেই লেখক ভেদে আমাদের ইতিহাস বই গুলো আলাদা হয়ে যায়।
ব্যক্তিভেদে যেমন দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটে। তেমনি যুগ বা সময়কাল অনুসারেও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটে যায়। যেমন মধ্য যুগে আমাদের সমাজের মেয়েদের আমরা যে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতাম, এখন কি সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের দেখে থাকি? তা তো দেখি না।
আসলে সময়ের হাত ধরে আমাদের শিক্ষা, চেতনা ও সামাজিক মূল্যবোধে নানা বদল আসে। এই পরিবর্তনের হাত ধরে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও বদল ঘটে। নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে নতুন ভঙ্গীমায় আমরা যেকোন কিছুকেই মূল্যায়ন করতে, বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করতে চাই।
ইতিহাস চর্চায় "ঐতিহাসিক তথ্য বা ঘটনা" বিশ্লেষনে এইকারনেই বিভিন্ন যুগের ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পরিলক্ষিত হয়। দৃষ্টিভঙ্গির তারতম্যের জন্যই ঐতিহাসিক তথ্য বা ঘটনা সম্পর্কে যুগে যুগে আমাদের ধারনার পরিবর্তন ঘটে চলে।
যেমন পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ ঐতিহাসিকদের সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে ঔরঙ্গজেবকে যতটা সাম্প্রদায়িক দেখানো হয়, অথবা ভারতবর্ষের প্রাচীন ও মধ্য যুগকে যতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখানো হয়, বর্তমানে জাতীয়তাবাদী ইতিহাস চর্চায় ততটা মনে হয় না। এককথায়, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সাথে সাথে ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের ধারনারও বদল ঘটে।
(আ.) ইতিহাস চর্চার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় :-
ঐতিহাসিক তথ্য বা ঘটনা বিশ্লেষনে ইতিহাস চর্চার সূচনালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত (ক.) বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, (খ.) ইতিহাস চর্চার আঙ্গিক ও (গ.) ঐতিহাসিক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। এগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় নীচে তুলে ধরা হলো।
![]() |
ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি |
(১.) ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি :-
প্রাচীন যুগ ও মধ্য যুগের ঐতিহাসিকগন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে ইতিহাস চর্চা করতেন। এই সময় ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমেই ঐতিহাসিক তথ্য বা ঘটনার ব্যাখ্যা করা হতো ।
পৃথিবীর সব দেশেই প্রাচীন ও মধ্য যুগে ধর্মের ব্যাপক প্রভাব ছিলো। এই সময় মনে করা হতো জাগতিক সমস্ত ঘটনাই ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রনে ঘটে থাকে। শুধু জাগতিক ঘটনা নয়, মানুষের আপন ভাগ্যও ঈশ্বর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয় বলে মনে করা হতো। এই কারনে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক লিয়োপোল্ড ভন র্যাঙ্কে বলেছিলেন, "ঈশ্বরের অবস্থান ইতিহাসের মধ্যেই"।
(ক.) ইতিহাস চর্চার আঙ্গিক :-
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা যে ইতিহাস চর্চা করা হয়, সেখানে অতীতের ঘটনাবলী বা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন গুলি ঈশ্বরের নির্দেশে পরিচালিত বলে ব্যাখ্যা করা হতো। এমনকি রাজা কতটা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে রাজ্য শাসন করছেন, তা দেখেই সেই সময় একজন রাজা কতখানি ভালো ও যোগ্য তার মূল্যায়নও করা হতো ।
(খ.) ঐতিহাসিক গোষ্ঠী :-
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির ইতিহাস চর্চার সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম হলেন -
- আধুনিক ঐতিহাসিক লিয়োপোল্ড ভন র্যাঙ্কে,
- জার্মান ঐতিহাসিক টয়েনবি।
(২.) যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গি :-
(ক.) ইতিহাস চর্চার আঙ্গিক :-
(খ.) ঐতিহাসিক গোষ্ঠী :-
- ভলতেয়ার
- বার্কলে
- কোঁৎ
- ডারউইন।
- পগ্গিও
- এসকোলির ইনোক।
(৩.) সাম্রাজ্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি :-
(ক.) ইতিহাস চর্চার আঙ্গিক :-
(খ.) ঐতিহাসিক গোষ্ঠী :-
- জেমস মিল
- উইলিয়াম হান্টার
- ব্যাবিংটন মেকলে
- জন স্টুয়ার্ট মিল
- অ্যাডাম স্মিথ
- ভিনসেন্ট স্মিথ।
(৪.) জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি :-
(ক.) ইতিহাস চর্চার আঙ্গিক :-
(খ.) ঐতিহাসিক গোষ্ঠী :-
- তারাচাঁদ
- ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার
- আচার্য যদুনাথ সরকার
- ড. রোমিলা থাপার
- ড. ইরফান হাবিব।
(৫.) মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি :-
(ক.) ইতিহাস চর্চার আঙ্গিক:-
(খ.) ঐতিহাসিক গোষ্ঠী :-
- সুশোভন সরকার
- ডি ডি কোশাম্বী
- সুপ্রকাশ রায়
- সুমিত সরকার
- বিপানচন্দ্র
- রোমিলা থাপার
- ইরফান হাবিব
- রামশরন শর্মা
- ডি এন ঝা
- রজনীপাম দত্ত
- এরিখ হবসবম।
(৬.) সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি :-
(ক.) ইতিহাস চর্চার আঙ্গিক:-
(খ.) ঐতিহাসিক গোষ্ঠী :-
- ফার্নান্দ ব্রদেল
- মার্ক ব্লখ
- লুসিয়েন ফেভর।
(৭.) নিন্মবর্গের ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি :-
(ক.) ইতিহাস চর্চার আঙ্গিক:-
(খ.) ঐতিহাসিক গোষ্ঠী :-
- রনজিৎ গুহ
- গৌতম ভদ্র
- পার্থ চট্টোপাধ্যায়
- জ্ঞান পান্ডে
- এরিখ হবসবম
- জর্জ দুদে
- লাদুরি
- ই পি থমসন
- গায়ত্রী চক্রবর্তী।
(৮.) অন্যান্য ইতিহাস চর্চার দৃষ্টিভঙ্গি
- ড. অনিল শীল
- গর্ডন জনসন
- ফ্রান্সিস রবিনসন
- জুডিথ মার্গারেট ব্রাউন।