অবশিল্পায়নের কারন ও ফলাফল

 ঊনবিংশ - বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদী অভিযোগের অন্যতম একটি প্রধান দিক ছিলো "অবশিল্পায়ন" বা" Deindustrialisation".

অবশিল্পায়নের কারন ও ফলাফল
অবশিল্পায়নের কারন ও ফলাফল

ঔপনিবেশিক ভারতে দাদাভাই নৌরজী, রমেশচন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ বিদগ্ধ ব্যক্তিরা সর্বপ্রথম ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ক্ষতিকর দিকগুলির আলোচনা করতে গিয়ে "অবশিল্পায়নের" কথা তুলে ধরেন।

পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত, গ্যাডগিল, নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি, মরিস ডেভিড মরিস, এবং সাম্প্রতিক কালে সুমিত সরকার, অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতো ঐতিহাসিকরা "অবশিল্পায়ন" নিয়ে আলোচনা করেছেন।

 পাশ্চাত্যের ঐতিহাসিকরা নানা যুক্তি প্রমান হাজির করে ভারতীয় ঐতিহাসিকদের অভিযোগকে নসাৎ করে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়ন ছিলো একটি "অতিকথা" । অন্যদিকে ভারতীয় ঐতিহাসিকরা এর বিরোধিতা করে দেখানোর চেষ্টা করেছেন, ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়ন কোন অতিকথা ছিলো না, এটি ছিলো একটি "ঐতিহাসিক সত্য"।

খুব স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যায়, অবশিল্পায়ন সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়টি যথেষ্ট বিতর্কিত। এখন অবশিল্পায়ন কাকে বলে সেটি প্রথমে জেনে নেওয়া যাক।

অবশিল্পায়নের সংজ্ঞা ও ধারনা

পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তীকালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির (১.) শুল্ক হীন অবাধ বানিজ্য নীতি, (২.) দাদন প্রথা,  (৩.)ভারতীয় পন্যের ওপর বৈষম্যমূলক শুল্ক আরোপ, (৪.)  ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব, (৫.) রেলপথের বিস্তার, ইত্যাদির ফলে ভারতীয় কুটির ও হস্তশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে শিল্প নির্ভরতা হ্রাস পায় এবং কৃষি নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।এই অর্থনৈতিক অবস্থাকেই ঐতিহাসিকরা "অবশিল্পায়ন" বলে অভিহিত করেছেন।

অর্থাৎ সহজ ভাষায় বলতে গেলে একটি দেশের শিল্প - সংহার বা শিল্পের ধ্বংসসাধনকেই এককথায় "অবশিল্পায়ন" বলা হয়।

ভারতে অবশিল্পায়নের সময়কাল

ভারতে ঠিক কোন সময় থেকে অবশিল্পায়ন ঘটতে শুরু করেছিলো, তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও, অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে, ১৮০০ - ১৮৬৫ খ্রিঃ মধ্যেই অর্থাৎ ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরেই ভারতে ধীরে ধীরে "অবশিল্পায়ন" ঘটতে শুরু করেছিলো। 

ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে অল্প সময়ে প্রচুর পন্য সামগ্রী তৈরি হতে থাকে। ঐসব পন্য বিক্রির জন্য বাজার সৃষ্টি করতে দেশীয় শিল্পের ধ্বংস সাধন ইংরেজদের পক্ষে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলো। মূলত এর ফলেই ভারতে "অবশিল্পায়ন" ঘটেছিলো।

 তবে মনে রাখতে হবে, ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব ভারতের অবশিল্পায়নের প্রধান কারন হলেও, একমাত্র কারন ছিলো না। 

অবশিল্পায়নের কারন

আসলে শিল্প বিপ্লবের আগে ও পরে ভারতীয় শিল্পক্ষেত্রে ইংরেজরা এমন কিছু প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে, যার ফলে ভারতীয় শিল্প মার খেতে থাকে এবং ভারতীয় অর্থনীতিতে "অবশিল্পায়ন" দেখা যায়। 

সংক্ষেপে এই প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টির কারন গুলিকে আমরা নিন্মলিখিত ভাবে তুলে ধরতে পারি - 

(১.) দাদন প্রথার কুফল 

পলাশীর যুদ্ধের পর রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে  কোম্পানির লোকজন তাঁতিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে সস্তায় মাল বিক্রি করতে বাধ্য করতো। 

দাদন গ্রহনের ফলে খোলা বাজার থেকে তাঁতি অনেক কম দাম পায় এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এর ফলে উৎপাদনের গুনগত মান ও উৎপাদকের উৎসাহ দুটিরই অবনমন ঘটে। 

(২.) ইওরোপীয় ক্রেতাদের বিতাড়ন 

ভারতীয় পন্য কিনবার জন্য প্রথম দিকে ইওরোপের একাধিক বনিক গোষ্ঠী এদেশে এসেছিলো। কিন্তু ১৭৬৫ খ্রিঃ মধ্যে সমস্ত ইওরোপীয় শক্তি গুলিকেই ইংরেজরা ভারতের বাজার থেকে হটিয়ে দেয়। এর ফলে ভারতের বৈদেশিক বানিজ্যের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে এবং সেখানে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। 

ভারতের বাজারে কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পরেই কোম্পানির এজেন্ট ও গোমস্তারা তাঁতিদের কম দামে দাদন দিতে শুরু করে অথবা নিজেদের ইচ্ছা মতো দামে পন্য বিক্রি করতে বাধ্য করতে থাকে। এর ফলে চরম ক্ষতি ও লোকসানের কারনে অনেক তাঁতিই  কাপড় বোনার কাজ ছেড়ে দিতে শুরু করেন। 

(৩.) তুলোর একচেটিয়া কারবার

অবশিল্পায়ন ও ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের অবনমনের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন ছিলো তুলোর দাম বৃদ্ধি। কোম্পানির কর্মচারীরা কাঁচা তুলোর একচেটিয়া কারবার করতো। তাঁতিরা কোম্পানির লোকেদের কাছ থেকেই চড়া দামে তুলো কিনতে বাধ্য হতো। এর পর সেই তুলো থেকে সুতো তৈরি করে কাপড় বোনার পর তা আবার কোম্পানির লোকেদের কাছেই সস্তায় বেচতে হতো। 

এর ফলে তাঁতিরা ধীরে ধীরে সর্বস্বান্ত হয়ে যেতে থাকেন। তাঁত বোনা থেকে কৃষিকাজ শ্রেয় বিবেচনা করে অনেকেই কৃষির দিকে ঝুঁকে পড়তে শুরু করেন। যাদের অন্য উপায় ছিলো না, তারা তখনও ক্ষতি স্বীকার করে বস্ত্র শিল্পে থেকে যান। এর ফলে বস্ত্র শিল্পে মন্দা ও অনগ্রসরতা দেখা যেতে থাকে। 

(৪.) শিল্প বিপ্লবের প্রভাব 

১৭৬০ খ্রিঃ পর থেকে ইংল্যান্ডে শিল্পায়ন ঘটতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ম্যানচেস্টারল্যাঙ্কাশায়ার অঞ্চলে বড়ো বড়ো কাপড়ের কল গড়ে উঠতে আরম্ভ করে। এইসব কলের মালিকরা ছিলো অনেক বেশি জোটবদ্ধ ও সংগঠিত। 

ফলে তারা কারখানার উৎপাদিত পন্য বিক্রির জন্য ইংল্যান্ডের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যাতে ইংল্যান্ডের বাজারে ভারতীয় পন্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ইংল্যান্ডের হাউস অব কমন্সের অনেক সদস্যই বনিক সভাকে সমর্থন করতো। ফলে খুব সহজেই ইংল্যান্ডের বাজারে ভারতীয় পন্যের ওপর নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। 

ইংল্যান্ডের বাজারে ভারতীয় বস্ত্র কেনাবেচার ওপর জরিমানা ধার্য করা হয়। এর ফলে ইংল্যান্ডের বাজার থেকে ভারতীয় বস্ত্র শিল্প পিছু হটতে শুরু করে। 

(৫.) অবাধ বানিজ্যনীতির প্রভাব

প্রথম পর্বে ইংল্যান্ডের বাজার থেকে ভারতীয় বস্ত্রশিল্পকে বিতাড়িত করবার পর, ম্যাঞ্চেস্টারের মিল মালিকরা ভারতের বাজার দখলের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। 

ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্যের অধিকার থাকায় মিল মালিকদের পক্ষে ভারতে পন্য বিক্রির কোন উপায় ছিলো না। এমতাবস্থায়, এইসব শিল্পপতিদের চাপে ব্রিটিশ সরকার যথাক্রমে ১৮১৩ ও ১৮৩৩ খ্রিঃ ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বানিজ্য নীতির অবসান করে এবং ভারতে সকল পুঁজিপতিদের অবাধে প্রবেশের মুক্ত ব্যবস্থা করে দেয়। 

এর ফলে বাঁধভাঙ্গা জলের স্রোতের মতো ইংল্যান্ডের পন্য ভারতে বাজারে ঢুকতে আরম্ভ করে। 

(৬.) অসম প্রতিযোগীতা 

ইংল্যান্ডের পন্য ভারতে প্রবেশ করলে ভারতের দেশীয় পন্যকে প্রবল অসম প্রতিযোগীতার মুখে পড়তে হয়। দেশীয় তাঁত বস্ত্রের তুলনায় ইংল্যান্ডের কলে তৈরি কাপড় যেমন ছিলো মিহি, তেমনি দামেও ছিলো সস্তা। তাই কলের তৈরি কাপড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারতের তাঁতের কাপড় ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকে এবং বাজার হারাতে আরম্ভ করে। 

(৭.) রেলপথের বিস্তার 

দেশীয় শিল্পের ধ্বংশের আরেকটি বড়ো কারন ছিলো রেলপথের বিস্তার। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ভারতে রেলপথের বিস্তার ঘটে। এর ফলে ব্রিটিশ পন্য খুব সহজেই দ্রুততার সঙ্গে ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। 

কলকারখানার উৎপাদনের তুলনায় দেশীয় হস্তশিল্পের উৎপাদন পদ্ধতি শ্লথ ও ধীর গতির হওয়ায় এবং রেলের মতো উন্নত পরিবহন না থাকায় তা দেশের দূর দূরান্তের বাজার গুলিতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয় নি। 

(৮.) অসম শুল্ক নীতি 

দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারন ছিলো ব্রিটিশ সরকারের সাম্রাজ্যবাদী শুল্ক নীতি। বিলাতি পন্য যাতে অবাধে ভারতে প্রবেশ করে, সেজন্য ব্রিটিশ সরকার বিলাতি পন্যের ওপর মাত্র আড়াই শতাংশ শুল্ক বসায়।  

অন্যদিকে ইংল্যান্ড ভারতীয় পণ্য গুলির ওপর ১০ % থেকে ৮৫ % শুল্ক আরোপ করে। এত বেশি পরিমানে শুল্ক বসানোর ফলে ভারতীয় পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া হয়ে যায়। ফলে ভারতীয় শিল্প গুলি তাদের বাজার হারাতে থাকে এবং সেই শূন্যস্থান অনায়াসে ভরাট করে ফেলে শুল্ক হীন ইংল্যান্ডের সস্তা পন্য। 

(৯.) স্বার্থরক্ষা কারী সংগঠনের অভাব 

ইংল্যান্ডের বড়ো বড়ো কলকারখানার মালিকরা ছিলেন অনেক বেশি জোটবদ্ধ ও সংগঠিত। দেশের পার্লামেন্ট ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপরেও তাদের যথেষ্ট প্রভাব ছিলো। এর ফলে খুব সহজেই তারা সরকারকে চাপ দিয়ে শিল্পজাত বাজারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছিলেন। 

কিন্তু ইংল্যান্ডের তুলনায় ভারতীয় শিল্প গুলির অধিকাংশই ছিলো অসংগঠিত। এই সব শিল্প গুলির বেশির ভাগই ছিলো হস্তশিল্প ও কুটির শিল্প। অনেক ক্ষেত্রে দেশের রাজা মহারাজারা এইসব শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতেন। 

কিন্তু পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজদের একের পর দেশীয় রাজ্য দখল ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিজেদের নিয়ন্ত্রন স্থাপন, ভারতীয় শিল্পক্ষেত্রকে কার্যত অনাথ ও অভিভাবকহীন করে দেয়। ফলে ভারতের শিল্প বানিজ্যের স্বার্থ রক্ষাকারী কোনো শিল্প সংস্থা বা আর্থিক সংগঠন না থাকায় খুব সহজেই প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ে ভারতীয় শিল্প গুলি হারিয়ে যেতে থাকে। 

অবশিল্পায়নের ফলাফল

ভারতের অর্থনীতিতে "অবশিল্পায়নের" একাধিক কুফল লক্ষ্য করা যায় - 

  1. অবশিল্পায়নের ফলে ভারত একটি রপ্তানিকারক দেশ থেকে আমদানিকারক ও ইংল্যান্ডের কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশে পরিনত হয়। 
  2. ভারতের বস্ত্রশিল্প, তাঁত শিল্প, জাহাজ শিল্প, চিনি শিল্প, অস্ত্র শিল্প, ধাতব শিল্প, কাঁচ শিল্প ইত্যাদি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় 
  3. দেশে কর্মহীনতা ও বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।
  4. শিল্প ক্ষেত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ কৃষিক্ষেত্রে ভীড় করে। ফলে কৃষিতে মাথাপিছু জমির পরিমান ও আয় দুটোই কমে যায়। 
  5. একদা শিল্প সমৃদ্ধ শহর ঢাকা, মুর্শিদাবাদ, সুরাট, মসুলিপট্টম, তাঞ্জোর, মাদুরা, প্রভৃতি নগর গুলির পতন ঘটে। 
  6. বহু তাঁতি জীবিকার সন্ধানে দেশ ছেড়ে সিংহল, বর্মা, মরিসাস প্রভৃতি বিদেশে পাড়ি দিতে থাকে। 
  7. ভারতের স্বয়ং সম্পূর্ন গ্রামীন অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ে। আগে কৃষির পাশাপাশি কুটির শিল্প বা হস্তশিল্প থেকেও আয় হতো। অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্যরা ভাগাভাগি করে কৃষি ও শিল্প কর্মে অংশ নিতেন। ফলে গ্রামীন অর্থনীতির ভিত ছিলো যথেষ্ট মজবুত। 
  8. অবশিল্পায়ন বা শিল্প সংহারের ফলে কৃষিই হয়ে দাঁড়ায় একমাত্র পেশা ও আয়ের পথ। কৃষিকাজ প্রকৃতি নির্ভর হওয়ায় এবং কৃষির ওপর সরকার উচ্চ হারে ভূমি রাজস্ব বসানোয় গ্রামীন ভারতের অর্থনীতির কাঠামো ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ক্ষুধা, অভাব, দুর্ভিক্ষ, দারিদ্র্যতা গ্রামগুলিকে শ্রীহীন করে দেয়। 
  9. হস্তশিল্পে কর্মচ্যুত অনেক কর্মহীন যুবক একের পর এক বিদ্রোহী দলে যোগ দিতে থাকে। 
  10. সর্বোপরি, অবশিল্পায়নের ফলে ভারত একটি ধনী ও প্রথম শ্রেণীর অর্থনীতির দেশ থেকে "দরিদ্র" দেশে রূপান্তরিত হয়। দারিদ্রতা, দুর্ভিক্ষ ও মহামারী ভারতীয় জনজীবনের নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। 
সবশেষে বলা যায়, শিল্প বিপ্লবের ফলে ভারতের মতো ইংল্যান্ডেও কুটির শিল্প ধ্বংস হয়। কিন্তু কুটির শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সেখানকার শিল্পীরা ভারতের শিল্পীদের মতো ক্ষতির সম্মুখীন হয় নি। কেননা তাদের অনেকেই নতুন গড়ে ওঠা কলকারখানা গুলোতে কাজের সুযোগ লাভ করেছিলেন। ভারতের ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটা ঘটে নি।

 ভারতে বিকল্প কর্মসংস্থানের কোন সুযোগ না থাকায় অনেকেই জমিতে ভীড় করেন। কিন্তু ঔপনিবেশিক আমলে কৃষিক্ষেত্রের আয়োতন বা উৎপাদন কোন কিছুই সেভাবে বাড়ে নি। ফলে কৃষিতে আয় ও মাথা পিছু জমির পরিমান দুটোই যথেষ্ট কমে যায়। এর ফলে জমির অধিকারকে অবলম্বন করে গ্রামীন সামাজে নানা টানাপোড়েন ও পারিবারিক অশান্তি দেখা যায়। 

সবথেকে বড়ো কথা, "প্রকৃতি নির্ভর" কৃষিকাজের ক্ষতি বা ঘাটতির শূন্যস্থানকে আগে শিল্পক্ষেত্রের আয় থেকে পূরন করা সম্ভব হতো। কিন্তু অবশিল্পায়নের ফলে কৃষিই হয়ে দাড়ালো একমাত্র আয়ের পথ। ফলে ভারতের জাতীয় আয়ও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভারত ধীরে ধীরে দরিদ্র দেশে পরিনত হয়। 

উনিশ শতকে এইজন্য রমেশচন্দ্র দত্ত, দাদাভাই নৌরজী, মহাদেব গোবিন্দ রানাডের মতো নেতারা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কুখ্যাত ও ক্ষতিকারক  দিককে তুলে ধরতে "অবশিল্পায়ন"কে জাতীয়তাবাদী আক্রমণের হাতিয়ার করে তোলেন। 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post