বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলায় যেসব গুপ্ত সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো তার মধ্যে অন্যতম ছিলো "বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স" বা বি ভি দল। ১৯৩০ দশকে বাংলার বিপ্লবী যুগকে এই দল দুর্বার করে তুলেছিলো । এই দলের (১.) প্রধান প্রতিষ্ঠাতা ও পিতৃস্থানীয় নেতা ছিলেন বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ (২.) অন্যতম সংগঠক ও প্রশিক্ষক ছিলেন মেজর সত্য গুপ্ত, এবং (৩.) প্রধান নির্দেশক বা G. C. O (জেনারেল অফিসার ইন কম্যান্ড) ছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স সম্পর্কে আলোচনার সবচেয়ে বড়ো প্রতিবন্ধকতা হলো তথ্যের অপ্রতুলতা। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্যদের কঠোর মন্ত্রগুপ্তির কারনে এই দল সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায় না। দলীয় কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কাগজপত্র, প্রমান এই দলের সদস্যরা নষ্ট করে দিতো। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সঙ্গে যুক্ত সদস্যরা এই দল সম্পর্কে পরবর্তীকালে কোন বই লেখেন নি বা দল সম্পর্কে কোথাও কোন সাক্ষ্যও দেন নি। যে কারনে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স সম্পর্কে কোন পূর্নাঙ্গ ও সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায় নি। 

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স সম্পর্কে যেটুকু তথ্য, তা একমাত্র পুলিশের রেকর্ডে এবং মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার থেকেই পাওয়া গেছে। আন্দোলনের প্রথম পর্বে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের নাম পুলিশেরও অজানা ছিলো। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স সদস্যদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুগান্তর দলের সদস্য বলে পুলিশের রিপোর্টে উল্লেখ করা থাকতো। এ থেকেই অনুমান করে নেওয়া যায়, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সদস্যরা ঠিক কতটা কঠোর ভাবে মন্ত্রগুপ্তির শপথ পালন করে চলতেন। পুলিশের চোখে ধুলো দেবার ব্যাপারে এই দলের পারদর্শিতা ছিলো অসামান্য।

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স
বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স 

(১.) বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স গঠনের প্রেক্ষাপট :-

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের পিতৃস্থানীয় নেতা ছিলেন বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষ। তার দীর্ঘ বিপ্লবী প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতেই গড়ে উঠেছিলো "বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স"।

১৯০৫ খ্রিঃ হেমচন্দ্র ঘোষ ঢাকাতে "মুক্তিসংঘ" নামে একটি বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সময় স্বদেশী আন্দোলনে ঢাকাতে পিকেটিং করতে গিয়ে হেমচন্দ্র পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। ইতিমধ্যে ১৯০৮ খ্রিঃ যুগান্তর দলের বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকির কিংশফোর্ড হত্যাকান্ডের সূত্র ধরে পুলিশ সারা বাংলা জুড়ে বিপ্লবীদের ধরপাকড় শুরু করে।

এইসময় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সন্দেহ এড়াতে হেমচন্দ্র কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে পুরানো কর্মক্ষেত্র ঢাকা ছেড়ে কলকাতায় আসেন। পুনরায় মুক্তিসংঘকে সংগঠিত করার প্রচেষ্টায় তিনি কলকাতা থেকে পূর্ববঙ্গের সাংগঠনিক কাজকর্ম গোপনে পরিচালনা করতে থাকেন। ১৯০৯ খ্রিঃ বিপ্লবী হেমচন্দ্র গোপনে ত্রিপুরা ও আগরতলার বিপ্লবীদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। এর অল্প কয়েক বছর পরে ১৯১৪ খ্রিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধের অনুকূল পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে বাংলার বিপ্লবীদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়।

১৯১৪ খ্রিঃ কলকাতার রাজপথ থেকে বেশ কয়েকজন বিপ্লবী ব্রিটিশ অস্ত্র ব্যবসায়ী "রডা কোম্পানির" অস্ত্র লুন্ঠন করে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে পুলিশ হেমচন্দ্র ঘোষ সহ বেশ কয়েকজন বিপ্লবীকে গ্রেফতার করে। ১৯১৫ খ্রিঃ হেমচন্দ্র কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় হেমচন্দ্রের সহযোগী অন্যান্য বিপ্লবীরা গোপনে বিপ্লবীদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। তারা লোকসেবা, শরীরচর্চা, ব্যায়াম ইত্যাদি কাজকর্মের আড়ালে বিপ্লবী কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে থাকেন।

১৯২০ খিঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জের রাজানুগ্রহে আন্দামানে কারারুদ্ধ সহ অন্যান্য জায়গায় বন্দি বিপ্লবীদের মুক্তি দেওয়া হয়। এই সময় হেমচন্দ্র ঘোষও মুক্তি লাভ করেন

মুক্তি লাভের পর হেমচন্দ্র উপলব্ধি করতে পারেন, বিপ্লবী কাজকর্ম একবার ফাঁস হয়ে গেলে বৈপ্লবিক সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া কত কঠিন। তাই তিনি প্রকাশ্যে রাজনীতি ও  বিপ্লবী কাজ থেকে অব্যাহতির ঘোষনা করে দেন। পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য প্রায় ৩/৪ বছর তিনি কলকাতায় এসে সাধারন জীবন যাপন করতে থাকেন এবং বিভিন্ন জনসেবা মূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন

১৯২১ খ্রিঃ গান্ধীজির ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। গান্ধীজি দেশবাসীকে বলেছিলেন, একবছরের মধ্যে তিনি স্বরাজ এনে দেবেন। তার এই ঘোষনায় বিপ্লবীরাও আশস্ত হয়েছিলো। কিন্তু আন্দোলন শুরুর একবছরের মাথায় চৌরিচৌরা ঘটনার সূত্র ধরে গান্ধীর হঠাৎ করে আন্দোলন প্রত্যাহার সারা দেশবাসীর পাশাপাশি বিপ্লবীদেরও চরম হতাশ করে

খুব স্বাভাবিক ভাবেই অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করবার পর বাংলার বিভিন্ন স্থানের বিপ্লবীরা পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। ইতিমধ্যে হেমচন্দ্র ঘোষ ও তার অনুগামীদের সহায়তায় কলকাতা, ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, বরিশাল, উত্তরবঙ্গ, মেদিনীপুর ও পাটনাতে বিপ্লবীরা সংগঠিত হতে শুরু করেন।

১৯২২ - ২৩ খ্রিঃ হেমচন্দ্র ঘোষ সমাজ সেবার জন্য "শ্রী সংঘ" নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছাড়াও ঢাকা শহরে "শান্তি সংঘ", "ধ্রুব সংঘ", "social welfare League" নামে আরোও কতকগুলি সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এইসব সমিতির ছত্রছায়ায় আপাত সমাজ সেবা ও শরীরচর্চার আড়ালে তিনি বিপ্লবীদের সংগঠিত করতে থাকেন।

 ১৯২৩ খ্রিঃ ত্রিপুরা ব্রাহ্মনবেড়িয়ার বিপ্লবী নেতা ললিতা বর্মন সদলবলে হেমচন্দ্র ঘোষের বিপ্লবী গোষ্ঠীতে যোগদান করেন। ১৯২৪ খ্রিঃ ঢাকা বিপ্লবী সংঘের লীলা নাগ হেমচন্দ্রের বিপ্লবী গোষ্ঠীতে যোগদান করেন। বিপ্লবী আন্দোলনে মেয়েদের যুক্ত করার জন্য কলকাতায় একটি মহিলা বিভাগ খোলা হয় এবং তা পরিচালনার ভার দেওয়া হয় মীরা দত্ত গুপ্তার হাতে।

(২.) বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের প্রতিষ্ঠা :-

সুভাষ চন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করলেও বাংলায় হেমচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্য বিপ্লবী গোষ্ঠী গুলির সঙ্গে তার গোপন যোগাযোগ ছিলো। এইজন্য তাকে কারাবাসও ভোগ করতে হয়েছিলো। ১৯২৮ খ্রিঃ ২৯ ডিসেম্বর, কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে পন্ডিত মতিলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন বসে। ঐ অধিবেশনে প্রথা মাফিক কংগ্রেস সভাপতিকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সুভাষচন্দ্র এক ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটান। 

তিনি "বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স" নামে এক স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠন করেন। সুভাষ পুরোপুরি সামরিক বাহিনীর কায়দায় তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। হেমচন্দ্র ঘোষের অনুগামী দলের অনেক যুবক এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীতে যোগদান করেনমোটর সাইকেল আরোহী বাহিনী, পদাতিক বাহিনী, অশ্বারোহী বাহিনী ইত্যাদি নানা দলে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সদের বিভক্ত করে কুচকাওয়াজ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় সকলের পরনেই ছিলো আধা সামরিক বাহিনীর পোশাক। 

মহিলাদের নিয়েও বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের একটি বাহিনী গঠন করা হয়, যার অধিনায়িকা ছিলেন লতিকা ঘোষসুভাষচন্দ্র বসু নিজে ছিলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের G. C. O অর্থাৎ বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের জেনারেল অফিসার ইন কম্যান্ডপ্রায় দু হাজার স্বেচ্ছাসেবক সামরিক পোশাকে পূর্ণ সামরিক কায়দায় সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে কংগ্রেস সভাপতি মতিলাল নেহেরুকে অভিবাদন জানায়। 

সেই সময়ে এই রাজকীয় অভিবাদনে সকলে অভিভূত হয়ে পড়লেও, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মহাত্মা গান্ধী সামরিক কায়দায় কংগ্রেস সভাপতিকে অভিবাদনের ঘটনায় যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছিলেন। গান্ধীজি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের কুচকাওয়াজকে "পার্ক সার্কাসের সার্কাস" বলে কটাক্ষ করেন। যদিও সুভাষচন্দ্র বসুর  নেতৃত্বে বাংলার বিপ্লবী যুবকদের "বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স" নামক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মাধ্যমে একত্রিতকরন ও সংগঠন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে এক সুদূরপ্রসারী ফলাফল বহন করে এনেছিলো। 

১৯২৮ খ্রিঃ জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। এই অধিবেশনে জাতীয় সংগ্রামের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসাবে গান্ধীজি ডোমিনিয়ান স্টেটাস বা স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে জওহরলাল নেহেরু সহ বামপন্থী তরুন কংগ্রেসীরা পূর্ন স্বরাজের দাবি উত্থাপন করেন। শেষপর্যন্ত ১৩৫০ - ৯৭৩ ভোটাভুটির অঙ্কে সুভাষ চন্দ্রের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। 

বাংলা সহ ভারতের বিপ্লবী দলের একটা বড়ো অংশ জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের মধ্যে একমাত্র সুভাষ চন্দ্রের ওপরেই আস্থাশীল ছিলেন। কিন্তু জাতীয় সংগ্রামের চরম লক্ষ্য রূপে কংগ্রেসের আপোষমুখী সংগ্রাম ও কর্মকুশলায় বিপ্লবীরা চরম হতাশ হয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় কংগ্রেস নেতৃত্বের ওপর ভরসা করতে না পেরে তরুন বিপ্লবীরা নিজেদের হাতে অস্ত্র তুলে নিলেন এবং চরমপন্থী মতাদর্শে বৈপ্লবিক সংগ্রাম শুরু করেন। ১৯২৮ সালের পরবর্তীকালে ভারতে বৈপ্লবিক আন্দোলন বৃদ্ধির এটি একটি অন্যতম প্রধান কারণ ছিলো। 
 
১৯২৮ খ্রিঃ শেষদিকে বিপ্লবী কর্মপন্থা নিয়ে হেমচন্দ্র ঘোষ ও তার অনুগামীদের সঙ্গে বিপ্লবী অনিল রায়, লীলা নাগ প্রমুখ বিপ্লবী গানের বিরোধ দেখা যায়। এইসময় অনিল রায়ের অনুগামীরা হেমচন্দ্র ঘোষের বিপ্লবী গোষ্ঠী থেকে পৃথক হয়ে যান এবং পূর্বে সমাজ সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত "শ্রী সংঘকে" তারা গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি হিসাবে গড়ে তোলেন। অন্যদিকে হেমচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী গোষ্ঠীটি "বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স" নামে পরিচিতি লাভ করে। এই দল সুভাষচন্দ্রের অনুগামী ছিলো। ১৯২৮ খ্রিঃ শেষদিকে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো বলে পুলিশি রিপোর্টে নথিভুক্ত হয়। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স বা বি ভি দলের প্রতিষ্ঠার পর বাংলার অন্যান্য সশস্ত্র বিপ্লবীদের সঙ্গে হেমচন্দ্রের মুক্তিসংঘের সদস্যরাও মিলিত হয়প্রকৃতপক্ষে বি ভি দলের অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন মুক্তিসংঘের। এইজন্য হেমচন্দ্র ঘোষকে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের পিতৃস্থানীয় নেতা বলা হয়। 

(৩.) বি ভি দলের সংগঠন ও কর্মপদ্ধতি :-

বি ভি দল প্রতিষ্ঠার পর হেমচন্দ্র ঘোষ এবং তার কয়েকজন সহকর্মী দলের রীতিনীতি, সংগঠন ও পরিকল্পনা স্থির করেন। হেমচন্দ্র ঘোষের ওপর বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সর্বময় কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকলেও, তিনি একক ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন না। তিনি থাকতেন সম্পূর্ন নেপথ্যে বা আড়ালে

দল পরিচালনার ভার অর্পন করা হয় মেজর সত্য গুপ্তের উপর। স্থির হয়, দল পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও বিষয়ে একক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। দলের অভিজ্ঞ ও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেই দলের যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের কাঠামো দুটি ভাগে বিভক্ত ছিলো। একটি ছিলো - "সাংগঠনিক শাখা", অপরটি ছিলো "অ্যাকশন স্কোয়াড"। সাংগঠনিক শাখার মূল দায়িত্ব ছিলো দুটি। এক, সংগঠনকে মজবুত করে তোলা, দুই, সারা বাংলায় দলের শাখা সংগঠনের বিস্তার করা। সাংগঠনিক শাখার ভার অর্পন করা হয় জ্যোতিষ জোয়ারদারের হাতে। তার সহযোগী কর্মীবৃন্দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন - মনীন্দ্র রায়, সুরেন নাগ, সুরেন দত্ত প্রমুখ। সাংগঠনিক কর্মীবৃন্দের তৎপরতায় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের শাখা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিলো। এর মধ্যে কলকাতা, ঢাকা, মেদিনীপুরে বি ভি দলের সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো। 

বি ভি দলের "অ্যাকশন স্কোয়াডের" কাজ ছিলো বিপ্লবী পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপায়ন করা বা কার্যকর করা। অ্যাকশন স্কোয়াডের পরিচালনার ভার অর্পন করা হয় রসময় শূরের হাতে। এই বিভাগের অন্যান্য সহযোগী বিপ্লবীদের মধ্যে ছিলেন হরিদাস দত্ত, প্রফুল্ল দত্ত, নিকুঞ্জ সেনগুপ্ত, সুপতি রায়চৌধুরী, সুরেশ মজুমদার প্রমুখ। 

বি ভি দলের মূল কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর ছিলো কলকাতায়। কলকাতা থেকে গোপনে বিভিন্ন জেলায় দলের নির্দেশ ও পরিকল্পনা পৌঁছে দেওয়া হতো। বি ভি দলের "অ্যাকশন" পরিচালনার জন্য ৭, ওয়ালিউল্লা লেনে মূল কার্যালয় স্থাপিত হয়। দলের প্রয়োজনে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে আরোও কয়েকটি গোপন আলোচনার আস্তানা ও বিপ্লবীদের আত্মগোপনের স্থান নির্বাচন করা হয়। দলের কাজকর্ম বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা গুলির সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। 

কলকাতায় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের গোপন আস্তানা গুলির মধ্যে অন্যতম ছিলো সুরেশ মজুমদারের বেলেঘাটার ভাড়া করা বাড়ি, নিউ পার্ক স্ট্রিটে অনিমেষ রায় ও হিমাংশু ব্যানার্জির বাড়ি, মেটিয়াবুরুজে রাজেন গুহের বাড়ি, যদুবাবুর বাজারের কাছে প্রফুল্ল দত্তের শ্বশুর জজসাহেবের বাড়ি। বি ভি দলের নেতাদের গোপন আলাপ আলোচনা চলতো এইসব গোপন আস্তানা গুলিতে। 

বি ভি দলের প্রধান কেন্দ্র কলকাতা থেকে নেতারা অ্যাকশনের মূল পরিকল্পনা রচনা করে তা জেলায় পাঠিয়ে দিতেন। মূল পরিকল্পনা সরবরাহের পাশাপাশি কলকাতা থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও প্রয়োজনীয় অর্থও জেলাগুলিতে পাঠানো হতো। 

বি ভি দলের বেশিরভাগ সদস্যই ছিলেন স্কুল কলেজের ছাত্র। ছাত্ররা অকুতভয়, সাহসী এবং তাদের কোন পিছুটানও নেই। নতুন কিছু করবার উদগ্র বাসনা তাদের মধ্যে থাকে। ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থে নিমজ্জিত নয় তাদের মন। জাতীয়তাবাদী চেতনাও সমাজের অন্যান্য শ্রেনি গুলি অপেক্ষা ছাত্রদের মধ্যে সর্বাধিক বেশি থাকে। এসব বৈশিষ্ট্যের কারনেই বি ভি দলের নেতারা দলীয় সংগঠনকে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। 

এইজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে বি ভি দলের কর্মীরা বিভিন্ন জেলায় শরীর গঠনের আখড়া, সেবাশ্রম, বিদ্যালয় ও কলেজ গুলির সঙ্গে গোপন যোগাযোগ স্থাপন করে। সেখানকার কিশোর ও যুবকদের স্বদেশী চেতনায় নানা ভাবে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। 

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বি ভি দলে অন্তর্ভুক্তির সময় সদস্যদের দুটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হতো। প্রথম ধাপটি ছিলো "মরাল স্টেজ" আর দ্বিতীয় ধাপটি ছিলো "পলিটিক্যাল স্টেজ"। মরাল স্টেজে কর্মীদের দেশাত্মবোধক সাহিত্য চর্চা, শরীরচর্চা, ব্রহ্মচর্য পালন, সাহসিকতা ও নিয়মানুবর্তিতার পাঠ দেওয়া হতো। এই শিক্ষা একসাথে ছোট বড়ো সব সদস্যকে নিয়ে দেওয়া হতো। মরাল স্টেজে উত্তীর্ণ হবার পর কর্মীবৃন্দ মূল বি ভি দলের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ লাভ করতেন। একেই বলা হতো "পলিটিক্যাল স্টেজ"। 

বি ভি দলের সদস্যদের অত্যন্ত কঠোর ভাবে মন্ত্রগুপ্তির শপথ নিতে হতো। দলীয় নির্দেশে সদস্যরা বিপ্লবী কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত তথ্য প্রমানই নষ্ট করে দিতোপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত হেমচন্দ্রের বি ভি গোষ্ঠী বিপিন বিহারী গঙ্গোপাধ্যায়ের "আত্মোন্নতি" দলের সঙ্গে কাজ করেছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে এই দল যুগান্তর দলের সঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করে। বিভিন্ন সহযোগী দলের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করার জন্য এবং কঠোর মন্ত্রগুপ্তির কারনে পুলিশ দীর্ঘদিন যাবৎ বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের নামই জানতে পারে নি। এই কারনে গ্রেফতার হওয়া ক্ষিতিপ্রসন্ন সেনগুপ্ত, নরেন দাস, ফনী কুন্ডু ইত্যাদি বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের কর্মীদের পুলিশি রেকর্ডে যুগান্তর দলের বিপ্লবী বলে উল্লেখ করা হয়েছিলো। পুলিশ অনেক পরে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের নাম জানতে পেরেছিলো। 

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের শাখা বাংলার বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে থাকলেও এর কার্যকলাপ সবচেয়ে বেশি তীব্র হয়ে উঠেছিলো কলকাতা, ঢাকা ও মেদিনীপুরেমেদিনীপুরে ১৯২৯ খ্রিঃ দীনেশ গুপ্তের উদ্যোগে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনিই ছিলেন মেদিনীপুর জোনের সর্বোচ্চ নেতা। বি ভি দলের মেদিনীপুর কেন্দ্রের দায়িত্ব দুটো গ্রুপের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। দলের "সংগঠনের" ভার দেওয়া হয় হরিপদ ভৌমিক, পরিমল রায়, অমর চ্যাটার্জি, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী এবং ক্ষিতিপ্রসন্ন সেনগুপ্তের হাতে। অন্যদিকে "অ্যাকশন স্কোয়াডের" দায়িত্ব দেওয়া হয় ফনী কুন্ডু, ফনী দাস, নরেন দাস প্রমুখ কর্মীদের ওপর। মেদিনীপুরে পর পর বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ হত্যাকান্ড থেকেই বুঝে নেওয়া যায়, মেদিনীপুরে বি ভি র সংগঠন কতটা শক্তিশালী ছিলো। 

কেন্দ্রীয় সংস্থা "কলকাতা" বা আঞ্চলিক সংস্থা" "মেদিনীপুরের" মতো সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মপদ্ধতি বাংলার অন্যান্য জেলা গুলির ক্ষেত্রেও অনুসরন করা হয়েছিলো। 
 

(৪.) বি ভি দলের মুখপত্র :- 

বিপ্লবী হেমচন্দ্র জানতেন শুধু গুপ্ত সংগঠনের মধ্য দিয়ে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের পরিধির বিস্তার ঘটানো সম্ভব নয়। এর জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিপ্লবী মানসিকতা ও ভাবধারার বিস্তার করা। এই উদ্দেশ্যে কলকাতা থেকে ১৯২৬ খ্রিঃ বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের মাসিক মুখপত্র "বেনু" প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকা সম্পাদনা করতেন ভূপেন রক্ষিত রায়। তরুন যুবকদের মধ্যে বৈপ্লবিক ও দেশাত্মবোধক বানী প্রচার করে বেনু। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এই পত্রিকা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এই পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস "বিপ্রদাস"।

"বেনু" পত্রিকাটি প্রায় ৬ বছর চলেছিলো। ১৯৩২ খ্রিঃ এই পত্রিকার প্রকাশনা সরকার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯২৯ খ্রিঃ ভূপেন রক্ষিত রায় "চলার পথে" নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এখানে গল্পের মাধ্যমে কিশোর কিশোরীদের বৈপ্লবিক সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই পুস্তকটি ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে এবং তার প্রকাশ বন্ধ করে দেয়। ১৯৩৯ খ্রিঃ পুনরায় "চলার পথে" নাম দিয়ে বি ভি দলের  একটি মাসিক মুখপত্র প্রকাশ করা হয়। কিন্তু মাত্র ৩ মাসের মাথায় সরকার সেটিরও প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়।

(৫.) বি ভি দলের বৈশিষ্ট্য :- 

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের দিক ছিলো। যেমন - 

(১.) এটি ছিলো মূলত একটি আঞ্চলিক গুপ্ত সমিতি। 

(২.) বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের কার্যকলাপ মূলত বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো।

(৩.) মন্ত্রগুপ্তি বা চরম গোপনীয়তা অবলম্বন বি ভি দলের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো। 

(৪.) এই দলের সদস্যদের সিংহভাগই ছিলেন স্কুল কলেজের ছাত্র। 

(৫.) বি ভি দলের কর্মীদের অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষিত, চাকুরিজীবী মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল পরিবারের। 

(৬.) এই দলের কর্মীদের বেশিরভাগই এসেছিলেন সমাজের উচ্চবর্নের থেকে। এদের মধ্যে ব্রাহ্মন, বৈদ্য ও কায়স্থ পরিবারের ছেলেদের সংখ্যাই ছিলো বেশি। 

(৭.) কৃষক, শ্রমিক, মুসলমান সমাজ ইত্যাদি সমাজের বৃহত্তর অংশের সঙ্গে এই দলের কোন যোগ ছিলো না। 

(৮.) বি ভি দলের শাখা সংগঠন সারা বাংলায় ছড়িয়ে থাকলেও কলকাতা থেকেই এই দল পরিচালিত হতো। 

(৯.) কোন একক সিদ্ধান্ত বা একক নেতৃত্বে এই দল পরিচালিত হতো না। কোন বিপ্লবী পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর বিপ্লবী নেতৃত্বে যাতে সঙ্কট নেমে না আসে, সেই জন্য সম্মিলিত আলোচনার ভিত্তিতেই দল পরিচালিত হতো এবং যাবতীয় দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। 

(১০) চরিত্রগত দিক থেকে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ছিলো একটি ধর্মনিরপেক্ষ বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান। হিন্দু ধর্মের ভাবাদর্শের দ্বারা দল কিছুটা প্রভাবিত হলেও, কোন ধর্মীয় সংকীর্ণতা বি ভি দলের মধ্যে ছিলো না। 

(১১.) বিভিন্ন গুপ্ত সমিতির সঙ্গে মিলে মিশে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স কাজ করতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত হেমচন্দ্রের এই দল বিপিনবিহারীর গাঙ্গুলির "আত্মোন্নতি" সমিতির সঙ্গে কাজ করেছিলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে এরা যুগান্তর দল, শ্রীসংঘ ইত্যাদি বিপ্লবী গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করতো। এই কারনে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলকে দীর্ঘকাল যাবৎ পুলিশ আইডেন্টিটিফাই করতেই পারে নি। 

(৬.) বি ভি দলের উদ্দেশ্য :-  

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের মূল উদ্দেশ্য গুলি ছিলো  - 

(১.) বাংলা সহ সারা ভারতে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ শাসনকে উচ্ছেদ করা, 

(২.) বিভিন্ন ইংরেজ আধিকারিকদের নাশকতার মাধ্যমে হত্যা করে ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনকে অচল ও অকার্যকর করে তোলা। 

(৩.) বিপ্লবী কার্যকলাপের প্রসার ঘটিয়ে স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী ব্রিটিশ আধিকারিকদের মনে ভয় ও ত্রাসের সঞ্চার করা। 

(৪.) ইংরেজ কর্মচারী ও আধিকারিকদের হত্যা করে এদেশে ইংরেজ শাসনের অবৈধ উপস্থিতির দিকটি ব্রিটিশ সরকার ও দেশবাসীর সামনে উন্মোচিত করে দেওয়া। 

(৫.) আত্মত্যাগ ও প্রান বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেশের যুব সম্প্রদায়কে প্রবল জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত করে তোলা। 
  

(৭.) বি ভি দলের বিপ্লবী অভ্যুত্থান ও কার্যকলাপ :-

বিভিন্ন জেলবন্দী বিপ্লবীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে বি ভি দল ১৯৩০ খ্রিঃ" অপারেশন ফ্রিডম" শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সময় একের পর এক ইংরেজ আধিকারিককে হত্যা করে বি ভি দল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করে। এই হত্যাকাণ্ড গুলি ছিলো এইরকম - 

(ক.) মিটফোর্ড হাসপাতালে লোম্যান হত্যা :- 

১৯৩০ খ্রিঃ ২৯ আগস্ট, বাংলা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল মি. লোম্যান ও মি. এরিক হাডসন ঢাকা শহরে এলে বিপ্লবী বিনয়কৃষ্ণ বসু গুলি করে লোম্যানকে হত্যা করেন। এই সময় অপর পুলিশ আধিকারিক মি. এরিক হাসডন অল্পের জন্য বেঁচে যান এবং গুরুতর ভাবে আহত হন। এটি ছিলো বি ভি দলের প্রথম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা

হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ছিলো এইরকম - ১৯৩০ খ্রিঃ ২৯ আগস্ট, ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ঢাকার সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ অসুস্থ বার্ট সাহেবকে সকাল সাড়ে নয়টার সময় দেখতে আসেন বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ মি.লোম্যান এবং মি. হাডসন। ইওরোপিয়ান ওয়ার্ডে বার্টকে দেখে ফেরার সময় হঠাৎকরেই বিদ্যুৎ বেগে ছুটে এসে একটি ছেলে প্রায় পঞ্চাশ ফুট দূর থেকে প্রথমে লোম্যান ও পরে হাডসনকে গুলি করে হত্যা করে। বলা বাহুল্য, এই ছেলেটিই ছিলো বি ভি দলের অ্যাকশন স্কোয়াডের সদস্য এবং ডাক্তারী ছাত্র বিনয়কৃষ্ণ বসু

(খ.) রাইটার্স বিল্ডিংসে সিম্পসন হত্যা :-

ঢাকায় লোম্যানকে হত্যার পর বিনয়কৃষ্ণ বসু কলকাতায় চলে আসেন। এইসময় বিনয় বসুর সঙ্গে অপর দুই বিপ্লবী বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তের সাক্ষাৎ হয়। বিনয় - বাদল ও দীনশ ইতিহাসে একত্রে "বি - বা - দি" নামেও পরিচিত।

বি ভি দলের গোপন পরিকল্পনা অনুযায়ী এই তিন বিপ্লবী ১৯৩০ খ্রিঃ ৮ ই ডিসেম্বর, ছদ্মবেশে কলকাতার ব্রিটিশ প্রশাসনের মূল কেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিং বা মহাকরনে দুপুরবেলা প্রবেশ করেন।

মহাকরনে সোজা দোতলায় উঠে বিনয়কৃষ্ণ বসু কারা বিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল সিম্পসনকে "38 bore rifle" দিয়ে পর পর ছয়টি গুলি করে হত্যা করেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর তারা ত্রিবর্ন রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করে বন্দেমাতারম ধ্বনি দিতে দিতে মহাকরণের পূর্বদিকের বারান্দায় ছুটে যান।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে লালবাজারের পুলিশ কমিশনার চালর্স টেগার্ট বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে রাইটার্স বিল্ডিং অবরোধ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিনয়, বাদল ও দীনেশ ১৯৩০ খ্রিঃ ২৫ আগস্ট লালবাজারের পুলিশ কমিশনার চালর্স টেগার্টকে হত্যার চেষ্টা করেও সফলতা লাভ করতে পারেন নি। সফল হলে এটিই বি ভি দলের সংগঠিত প্রথম হত্যাকাণ্ড হতো।

যাইহোক, রাইটার্স বিল্ডিংয়ের মধ্যে বিশাল পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে বিনয় বাদল ও দীনেশের অসম লড়াই চলে। যুদ্ধ চলাকালীন গুলি শেষ হয়ে গেলে বাদল পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বিনয় ও দীনেশ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হলে হাসপাতালেই বিনয় মারা যান। সুস্থ হয়ে উঠলে নির্মম শারীরিক নির্যাতনের পর ৭ ই জুলাই, ১৯৩১ খ্রিঃ দীনেশ গুপ্ত কে ফাঁসী দেওয়া হয়

রাইটার্স বিল্ডিংয়ে তিন বিপ্লবীর এই বীরত্মপূর্ন যুদ্ধকে আনন্দবাজার পত্রিকা "অলিন্দ যুদ্ধ" এবং দ্য স্টেটসম্যন পত্রিকা "Corridor warfare" বলে অভিহিত করে। সিম্পসন হত্যার জন্য যে পুলিশ কেস হয়েছিলো তা লালবাজারের File No ref 10/R, L/P J/6/2000 থেকে জানতে পারা যায়।

(গ. ) মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে পেডি হত্যা :-

১৯৩০ - ৩১ খ্রিঃ মেদিনীপুরে আইন অমান্য আন্দোলন ও বিপ্লবী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেলে কলকাতার বি ভি দলের প্রধান নেতারা মেদিনীপুরের অত্যাচারী অফিসারদের সমুচিত জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই পরিকল্পনারই অন্যতম অঙ্গ ছিলো মেদিনীপুরের জেলাশাসক জেমস পেডিকে হত্যা করা।

জেমস পেডিকে হত্যা করার ভার দেওয়া হয় বি ভি দলের দুই দক্ষ কর্মী বিমল দাশগুপ্ত ও যতিজীবন ঘোষের ওপর। সরকারি সহযোগিতায় মেদিনীপুর জেলার সমস্ত স্কুল গুলিকে নিয়ে মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে একটি শিক্ষা প্রদর্শনী ও প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। ১৯৩১ খ্রিঃ ৭ ই এপ্রিল, সন্ধ্যা প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ পেডি সাহেব সদলবলে কলেজিয়েট স্কুলে প্রবেশ করে। প্রদর্শনী পরিদর্শনের সময় বিমল দাশগুপ্ত এবং যতিজীবন ঘোষ পেডিকে গুলি করে হত্যা করে

(ঘ.) ২৪ পরগনার জর্জ কোর্টে গার্লিক হত্যা :- 

কলকাতা রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ ও সিম্পসন হত্যার অপরাধে বিচারক জর্জ গার্লিক দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসির সাজা দেয়। তাই বি ভি দলের কর্মীরা দীনেশের "হত্যাকারী" বিচারক গার্লিক সাহেবকে হত্যা করে দীনেশের ফাঁসির প্রতিশোধ গ্রহনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

রেলফ রেনল্ড গার্লিক ১৯০০ খ্রিঃ সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেছিলেন। বিভিন্ন জেলায় জর্জের পদে থাকার পর ২৪ পরগনার ডিস্ট্রিক্ট ও সেশন জর্জ রূপে আলিপুর কোর্টে নিযুক্ত হন। সিম্পসন হত্যা মামলার স্পেশাল ট্রাইবুনালের তিনি সভাপতি ছিলেন। ১৯৩১ খ্রিঃ ২৭ জুলাই সেশন জর্জ গার্লিক যখন আলিপুর কোর্টের মধ্যে বিচার কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখন এক যুবক কোর্টের মধ্যে প্রবেশ করে গার্লিকের মাথায় পর পর গুলি করে হত্যা করে। 

গার্লিককে হত্যা করার পর যুবকটিকে পুলিশ সার্জেন্ট আক্রমণ করলে সঙ্গে সঙ্গে যুকটি পটাশিয়াম সায়নাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। যুবকটির দেহ তল্লাশির পর পুলিশ এক টুকরো কাগজ পায়। তাতে লেখা ছিলো - "যে আদালতের অন্যায় বিচারে দীনেশ গুপ্তের ফাঁসি হয়েছে সেই আদালত নিপাত যাক"। 

পুলিশ মৃতদেহের পরিচয় জানতে না পেরে ১৯৩১ খ্রিঃ ১৮ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞাপন দেয় - "যে এই আততায়ীর ছবি শনাক্ত করতে পারবে তাকে নগদ ৫০০ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।" এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার দু চারদিন পর পুলিশ জানতে পারে মৃত বিপ্লবীর নাম ছিলো কানাই ভট্টাচার্যকানাই ২৪ পরগনা জেরার অন্যতম একজন বিপ্লবী ছিলেন। 

(ঙ.) গিলেন্ডার হাইসে ভিলিয়ার্সকে হত্যা :-

ক্রমাগত ইংরেজ হত্যার ঘটনায় কলকাতার ইংরেজ সাহেবগন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বিপ্লবীদের দমন করার জন্য আরোও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে কলকাতার "ইওরোপীয়ান অ্যাসোসিয়েশনের" সভাপতি মি. ই ভিলিয়ার্স বিপ্লবীদের কঠোর হাতে দমন করতে সরকারকে নানা ভাবে উস্কানি দিতে থাকেন। বি ভি দলের বিপ্লবীরা এইসময় ভিলিয়ার্সকে হত্যা করে ইংরেজদের মুখ বন্ধ করবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিপ্লবী বিনয়কৃষ্ণ দাশগুপ্তকে এই হত্যাকাণ্ডের ভার দেওয়া হয়।

১৯৩১ খ্রিঃ ২৯ অক্টোবর, গিলেন্ডার হাউস, ৮ নং, ক্লাইভ স্ট্রিটের অফিসে ভিলিয়ার্স যখন অন্যান্য ইংরেজ আধিকারিকদের সঙ্গে কাজে ব্যস্ত, তখন মুসলমান যুবকের ছদ্মবেশে বিনয়কৃষ্ণ দাশগুপ্ত পর পর গুলি করেন। ভিলিয়ার্সের পিঠে একটিমাত্র গুলি লাগলে তিনি টেবিলের তলায় আত্মগোপন করে অল্পের জন্য বেঁচে যান। এই ঘটনায় বিনয় ধরা পড়ে যান। তাকে লালবাজারে এনে চব্বিশ ঘন্টা ধরে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। অতঃপর তার বিচারের জন্য স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

প্রখ্যাত আইনজীবী শরৎচন্দ্র বসুর বুদ্ধিমত্তায় বিমলের সাজা বেশ কিছুটা লঘু হয়। বিচারে বিনয়কৃষ্ণের দশ বছর সশ্রম কারাদন্ডের সাজা হয়। 

(চ.) মেদিনীপুরে রক্সবার্গ, ডগলাস এবং বার্জ হত্যা :-

ভিলিয়ার্স হত্যাকাণ্ডের পর বি ভি দলের অন্যতম পরিকল্পনা ছিলো খড়গপুরের ইউরোপিয়ান ক্লাবে আক্রমণ এবং মেদিনীপুরের ডিস্ট্রিক্ট ও সেশন কোর্টের জর্জ রক্সবার্গকে হত্যা। এই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব দেওয়া হয় বি ভি দলের ক্ষিতিপ্রসন্ন সেনগুপ্তের হাতে।

১৯৩১ খ্রিঃ ১ নভেম্বর, ক্ষিতিপ্রসন্ন বিকেল চারটায় বিচার চলাকালীন জেলা কোর্টে রক্সবার্গকে হত্যা করতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। এর ফলে মেদিনীপুরে রক্সবার্গ হত্যা ও ইওরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ করার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ইংরেজরা আক্রান্ত হবার ভয়ে ইওরোপীয় ক্লাবে আসা যাওয়া প্রায় বন্ধই করে দেয়।

রক্সবার্গ হত্যার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার পর বি ভি দল মেদিনীপুরের অপর ম্যাজিস্ট্রেট মি. ডগলাসকে হত্যার পরিকল্পনা করে১৯৩২ খ্রিঃ ৩০ এপ্রিল, মেদিনীপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস সাহেব মেদিনীপুর শহরের "ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের" অফিসে জেলাবোর্ডের এক জনসভায় সভাপতিত্ব করতে উপস্থিত হন। বিপ্লবীরাও যথাসময়ে ঐ স্থানে উপস্থিত হয়। সভা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ এক যুবক ডগলাস সাহেবকে গুলি করে হত্যা করে। ডগলাস হত্যার অপরাধে বি ভি দলের কর্মী প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্যের ১৯৩৩ খ্রিঃ ১২ জানুয়ারি, ফাঁসি হয়।

১৯৩৩ খ্রিঃ ২রা সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুরের তৃতীয় ম্যাজিস্ট্রেট মি. বার্জকে হত্যা করেন বি ভি দলের বিপ্লবী অনাথ পাঞ্জা ও মৃগেন দত্ত।

১৯৩৩ খ্রিঃ ২ রা সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর পুলিশ গ্রাউন্ডে এক ফুটবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়মেদিনীপুরের টাউন ক্লাবের সঙ্গে সুদক্ষ মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবল খেলা হয়। জেলাশাসক বার্জ ছাড়াও অনেক ব্রিটিশ অফিসার এই খেলায় অংশগ্রহণ করবেন। বি ভি দলের মৃগেন দত্ত ও অনাথবন্ধু পাঁঞ্জা খেলার মাঠে প্রবেশ করেন। বিকেল ৫ টার সময় মি. বার্জ চারজন ইংরেজ সঙ্গী সহ যখন মোটর গাড়ি থেকে খেলার মাঠে নামেন  তখনই রিভলবার হাতে অনাথ পাঁঞ্জার গুলিতে মি. বার্জ নিহত হন। তার অপর সঙ্গীরা গুলিতে গুরুতর ভাবে আহত হন। অনাথ পাঁঞ্জা এবং মৃগেন দত্ত পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন

এই ঘটনার সময় আরোও বেশ কয়েকজন যুবক ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হন। ধৃত যুবকদের দুই দফায় বিচার হয়। বিচারে ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায় ও নির্মল ঘোষের ফাঁসি হয়। এছাড়া নবজীবন নামের জনৈক কিশোর পুলিশের নির্মম প্রহারের ফলে জেলেই মারা যান। এই যুবকদের সকলেই ছিলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সদস্য। 

(ছ.) কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেনস হত্যা :-

১৯৩১ খ্রিঃ ১৪ অক্টোবর, কুমিল্লার জেলার ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যা করেন ললিত বর্মনদের অনুগামিনী শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরী। বি ভি র কলকাতা কেন্দ্রের সঙ্গে ঐ অভিযানের নেতাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো।

ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যার জন্য সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ একটি আবেদনপত্র নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সের বাংলোতে হাজির হন। স্টিভেন্স সাহেব যখন আবেদনপত্রটি পাঠ করছিলেন, তখন বালিকা দুজনের মধ্যে একজন স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করেন। ঘটনাস্থলেই শান্তি ও সুনীতি গ্রেপ্তার হন। পরে স্পেশাল ট্রাইবুনালের বিচারে তাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়। 

(জ.) বাংলার গভর্নর জন আন্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা :-

১৯৩২ খ্রিঃ জন আন্ডারসন বাংলার গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন। তিনি বাংলায় বিপ্লববাদকে দমন করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করলেন। তার পরিচালনায় নির্মম হাতে একের পর এক বিপ্লবী কেন্দ্র ও গুপ্ত কর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়। বিপ্লবীদের দমন করার জন্য অ্যান্ডারসন ১৯৩২ খ্রিঃ ৬ টি দমনমূলক আইন প্রণয়ন করেন। এর মধ্যে ৩ টি আইন বিপ্লবী মহলে ত্রাসের সঞ্চার করে।

 প্রথম দুটি আইন ছিলো "দ্য বেঙ্গল সাপ্রোশান অফ টেরারিস্ট আউটরেজস অ্যাক্ট"। দ্বিতীয় আইনটির নাম ছিলো "দ্য এমার্জেন্সি পাওয়ারস অর্জন্যান্স"। এই আইন দুটির ফলে বাংলার তরুন কিশোরদের সর্বদা নিজেদের  পরিচয়পত্র বহন করতে হতো। তাদের পকেটে সবসময় সাদা, নীল ও লাল রঙের পরিচয়পত্র বহন করতে হতো। সাদা কার্ডধারীরা সন্দেহের আওতায় পড়ে না। নীল কার্ডধারীরা পুরোপুরি সন্দেহমুক্ত নয়। আর লাল কার্ডধারীরা পুরোপুরি সন্দেহভাজন।

বিপ্লবী আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য আন্ডারসন গ্রামে গ্রামে "ভিলেজ গার্ড" গঠন করেন। এই বাহিনীর কাজ ছিলো গ্রামের বিপ্লবীদের খুঁজে বের করা। এটি করতে গিয়ে ভিলেজ গার্ডরা গ্রামের নিরীহ মানুষের ওপর তীব্র অত্যাচার শুরু করে। 

আন্ডারসনের তৃতীয় কুখ্যাত আইনটির নাম ছিলো "দ্য বেঙ্গল ক্রিমিন্যাল ল" (আর্মস অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস) অ্যাক্ট। এই আইনে বলা হয়, কারো কাছে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেলে তার ফাঁসী অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। পলাতক বিপ্লবীকে কেউ আশ্রয় দিলে তাকে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।

আন্ডারসনের এই দমনমূলক নীতির কারনে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের অনেক নেতা গ্রেফতার হন। কয়েকজন নেতার বিশ্বাসঘাতকতায় আরোও কয়েকজন বিপ্লবী পুলিশের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েন। এমতাবস্থায়, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের কেন্দ্রীয় সংস্থা বাংলার গভর্নর জন অ্যান্ডারসনকে হত্যার পরিকল্পনা করে

১৯৩৪ খ্রিঃ ৮ ই মার্চ, দার্জিলিং শহরে লেবং এর ঘোড়দৌড়ের মাঠে বাংলার গভর্নর জন অ্যান্ডারসন সদলবলে ঘোড়দৌড় দেখতে আসেন। ঘোড়দৌড় সমাপ্তির পর গর্ভনর বিজয়ী দলকে একটি কাপ পুরস্কার দিতে যাবেন, এমন সময়ে একজন যুবক গভর্নরকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে। কিন্তু গুলিটি লক্ষ ভ্রষ্ট হয় এবং পুলিশ সুপারিনটেন্ডেন্ট ও গর্ভনরের দেহরক্ষীর গুলিতে যুবকটি মারাত্মক ভাবে আহত হন।

এমন সময় আরেক যুবতী, যার নাম ছিলো উজ্জ্বলা মজুমদার, ছুটে এসে গর্ভনর কে পুনরায় গুলি করেন। কিন্তু তার গুলিও লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয় এবং সেও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিপ্লবী গ্রেপ্তার হন। এদের মধ্যে ছিলেন ভবানী ভট্টাচার্য, উজ্জ্বলা মজুমদার, সুকুমার ঘোষ, মধু ব্যানার্জি, মনোরঞ্জন ব্যানার্জি, সুশীল চক্রবর্তী। এরা সকলেই বি ভি দলের সদস্য ছিলেন।

১৯৩৪ খ্রিঃ ১৪ আগস্ট, লেবং এ গর্ভনর হত্যার মামলা শুরু হয় স্পেশাল ট্রাইবুনালেট্রাইবুনালের সভাপতি ছিলেন মি. জে ইয়ুনি। অপর দুজন সদস্য ছিলেন মি. আর এইচ পার্কার মি. ফারুক। ছয়জন তরুন ও একজন তরুনীর বিরুদ্ধে গর্ভনরকে হত্যা ও হত্যাকান্ডে সহযোগিতার বিরুদ্ধে বিচার চলে। বিচারের রায়ে ভবানী ভট্টাচার্যের ফাঁসি, উজ্জ্বলা মজুমদারের ১৪ বছর দীপান্তর এবং সুকুমার ঘোষ, মধু ব্যানার্জি সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের ১০ বছর করে দীপান্তর দন্ড হয়১৯৩৫ খ্রিঃ ৩ রা ফেব্রুয়ারি, রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে ভবানী ভট্টাচার্যের ফাঁসি দেওয়া হয়।

বাংলার গভর্নর জন অ্যান্ডারসনকে হত্যার চেষ্টা ছিলো বি ভি দলের সর্বশেষ বিপ্লবী কর্ম, যা শেষপর্যন্ত সফলতা লাভ করতে পারে নি।

(৮.) বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের সীমাবদ্ধতা ও পতন :-

বাংলায় বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের আগমন ছিলো বিদ্যুৎ ঝলকানির মতো। বিদ্যুতের ছটার মতোই এই দল একদিকে যেমন ছিলো তীব্র, তেমনি আয়ুর দিক থেকেও ছিলো স্বপ্লায়ু। ১৯২৮ সালের শেষ দিকে এই দলের জন্ম হয়েছিলো। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৪ খ্রিঃ পর্যন্ত এদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিপ্লবের কর্মকান্ড জোর কদমে চলেছিলো। কিন্তু এরপর থেকেই বি ভি দল বিদ্যুতের আলোক ছটার মতোই মেঘের অন্তরালে হারিয়ে যায়।

বি ভি দলের ক্ষনস্থায়িত্ব বা পতনের পিছনে অনেক গুলি কারনকে দায়ি করা যেতে পারে -

প্রথমত, বি ভি ছিলো মূলত একটি গুপ্তদল বা গুপ্ত সমিতি। গুপ্ত বা গোপন সমিতির পক্ষে কখনই জনসাধারণের বৃহত্তর অংশের সমর্থন লাভ করা সম্ভব নয়। বি ভি দলের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছিলো। সীমিত লোকবল ও সংগঠনকে অবলম্বন করে কখনই বৃহত্তর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাঠামোকে ভেঙ্গে ফেলা সম্ভব ছিলো না। খুব স্বাভাবিক ভাবেই বি ভি দলের ব্যর্থতা ছিলো অবশ্যম্ভাবী।

দ্বিতীয়ত, বি ভি দলের ব্যর্থতার একটি বড়ো কারন ছিলো এদের সাংগঠনিক ক্রুটি। এই দলের অধিকাংশ কর্মী ছিলো শিক্ষিত, চাকুরিজীবী, মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল পরিবাবারের। নামী স্কুল কলেজের সেরা ছাত্রদের দলের কর্মী হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছিলো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারনে পিছিয়ে থাকা দরিদ্র, অশিক্ষিত, কৃষক প্রভৃতি সমাজের সিংহভাগ নিন্মবর্গের মানুষদের থেকে এরা বিচ্ছিন্ন ছিলেন। ফলতঃ সমাজের একটি বড়ো অংশের সঙ্গে কোন যোগাযোগ না থাকায় বি ভি দলের বৈপ্লবিক কাজকর্মকে মানুষ বিচ্ছিন্ন, নাশকতামূলক ঘটনা হিসাবেই দেখে। এর গভীর রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদী তাৎপর্য উপলব্ধি করতে তারা ব্যর্থ হয়।

তৃতীয়ত, বি ভি দল চরিত্রগত দিক থেকে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও এই দলের আদর্শবাদ ও জাতীয়তাবাদের বুনন হিন্দুধর্ম থেকেই উদ্ভুত ছিলো। বি ভি দলের পথপ্রদর্শক ছিলো অরবিন্দ ঘোষ, স্বামী বিবেকানন্দ এবং বঙ্কিমচন্দ্রের বানী ও আদর্শ। দলের ছেলেদের মনোবল বাড়ানোর জন্য বি ভি দল হিন্দু ধর্মগ্রন্থ গীতার নিষ্কাম কর্মের কথা প্রচার করে। বিপ্লবীদের অনেকে বিপ্লব কর্মে যাওয়ার আগে মা কালির পুজো করতেন। বন্দেমাতারম ছিলো বি ভি দলের বীজমন্ত্র। বি ভি দলের  এই সমস্ত কাজকর্ম অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মনে বিদ্রুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই কারনে বি ভি দলের  মুসলিম সদস্যের নাম তেমন একটা পাওয়া যায় না। 

চতুর্থত, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের পতন ও ব্যর্থতার আরেকটি বড়ো কারন ছিলো দেশের তৎকালীন রাজনৈতিক দল গুলির সাহায্য ও সমর্থনের অভাব। মুসলিম লিগ, কৃষক প্রজাতন্ত্রী দল গুলি এমনকি জাতীয় কংগ্রেসও বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের কাজকর্মকে সমর্থন করে নি

পঞ্চমত, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলটি কেন্দ্রীয় শাসিত হওয়ায় পরবর্তীকালে বাংলার বিভিন্ন জেলার একাধিক স্থানে বি ভি র শাখা প্রসারিত হয়। এর ফলে কেন্দ্রের বজ্রমুষ্ঠি ও নিয়ন্ত্রন অনেকটাই শিথিল হয়ে যায়। কলকাতা থেকে কেন্দ্রীয় ভাবে দল পরিচালিত হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় সমস্যা ও পরিস্থিতি নেতারা পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারেন নি। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সংগঠনের কার্যকারিতার মান হ্রাস পেতে শুরু করেছিলো।

ষষ্ঠত, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের ব্যর্থতা ও পতনের আরেকটি বড়ো কারন ছিলো ব্রিটিশ সরকারের তীব্র দমন নীতির প্রয়োগ১৯৩২ খ্রিঃ জন আন্ডারসন বাংলায় গভর্নর হয়ে আসার পর বিপ্লবীদের দমনে একের পর এক দমনমূলক আইন ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে থাকেন। এর ফলে বি ভি দলের অনেক বিপ্লবীই ধরা পড়ে যান।

সপ্তমত, বি ভি দলের প্রথম পর্বে দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা জহুরির অভিজ্ঞ চোখ নিয়ে দলের কর্মীদের নির্বাচন করতেন এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে অধিকাংশ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ায়, নেতৃত্বের অভাবে স্বপ্ল অভিজ্ঞ তরুনরা বি ভি দলে ঢুকে পড়েন। এদের সংখ্যা অল্প হলেও, পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর এদের বিশ্বাসঘাতকতা দলকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দেয়।

অষ্টমত, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স সুভাষচন্দ্র বসুর অনুপ্রেরণায় গড়ে উঠলেও, পরবর্তীকালে কংগ্রেসের নানা কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকায় সুভাষ চন্দ্র বি ভি দলে বিশেষ সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে নি। সুভাষের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়াও বি ভি দলের বিপর্যয়ের একটি বড়ো কারন ছিলো। 

নবমত, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ছিলো মূলত একটি আঞ্চলিক গুপ্তসমিতি। এর কার্যকলাপ মূলত বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সকে ভারতের অন্যান্য জায়গায় প্রশারিত করার বা ছড়িয়ে দেওয়ার কোন চেষ্টাই এই দলের নেতারা করেন নি। ফলে স্থানীয় সীমাবদ্ধতার জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সদের দমন করা অত্যন্ত সহজ হয়ে ছিলো। 

দশমত, ভগৎ সিং বা তার "হিন্দুস্থান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন" (১৯২৪ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত) রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে বন্দেমাতারম, আল্লা হো আকবর, বা সত শ্রী আকালের মতো ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শ্লোগানকে বর্জন করে "ইনকিলাব জিন্দাবাদ" ও "হিন্দুস্থান জিন্দাবাদের" মতো ধর্মনিরপেক্ষ শ্লোগানকে বিপ্লবী আন্দোলনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন। কিন্তু বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল এই সূক্ষ দিকটির গুরুত্বকে অনুধাবন করতে পারেন নি। এর ফলে ভিন্ন ধর্মের বিশেষত, মুসলমান তরুনদের মনে এই দলের কার্যকলাপ বেশ সাড়া জাগাতে এবং তাদের দলভুক্ত করতে পারে নি। বাংলার জনসংখ্যার যেখানে অর্ধেকই মুসলিম, সেখানে এই বৃহত্তর জনসংখ্যাকে উপেক্ষা করে অথবা আন্দোলনের মূল স্রোতে অঙ্গীভূত না করিয়ে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের নেতারা ভুল করেন। 

সবশেষে বলা যায়, বি ভি দলের ব্যর্থতা ও ক্ষনস্থায়িত্বের সবথেকে বড়ো কারন ছিলো তৎকালীন প্রতিকূল সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি। ১৯২৯ খ্রিঃ থেকে ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল গুলির কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। কংগ্রেস পূর্ন স্বরাজকে ভারতের জাতীয় সংগ্রামের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হিসাবে ঘোষনা করে। ১৯৩০ খ্রিঃ গান্ধীজির ডাকে শুরু হয় আইন অমান্য আন্দোলন। আপামোর ভারতবাসী বিপ্লবী আন্দোলনের ঝুঁকিপূর্ন পথের বদলে গান্ধীর অহিংস প্রতিরোধের নীতিকে অনেক বেশি নিরাপদ পথ হিসাবে গ্রহন করে।

১৯২৯ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত হয় কৃষক প্রজাদের মুখপাত্র প্রজাতন্ত্র দল "নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি"। কিছুদিনের মধ্যেই ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি চাষীদের দিন বদলের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। অন্যদিকে শহিদ সুরাবর্দির নেতৃত্বে তখন বাংলায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ যথেষ্ট জনপ্রিয় হতে শুরু করেছিলো।

বিভিন্ন দলীয় মত ও আদর্শে জনগন বিভাজিত হয়ে পড়লো। এসবের পরিনতিতে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের তরুন বিপ্লবীদের নিঃস্বার্থ সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের কথা ও তাদের কন্ঠের "বন্দেমাতারম" ধ্বনি চাপা পড়ে যায়

(৯.) বি ভি দলের অবদান :-

বাংলার ইতিহাসে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল ক্ষনস্থায়ী হলেও, এর অবদান কম গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না।

(১.) বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দলের আপোষহীন লড়াই দেশবাসীকে এই শিক্ষা দেয় যে, স্বাধীনতা কখনই ভিক্ষা করে পাওয়া যাবে না। এইজন্য দেশবাসীকে চরম মূল্য দিতে হবে এবং আত্মত্যাগ করতে হবে।

(২.) বি ভি দলের একাধিক নাশকতামূলক ঘটনা বাংলায় ব্রিটিশ আধিকারিকদের মনে বিরাট ত্রাসের সঞ্চার করে। মেদিনীপুরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ফলে কোন ইংরেজ অধিকারিকই সেখানে যেতে চাইতেন না।

(৩.) ১৯৩০ দশকে বাংলায় একের পর এক বিপ্লবী হত্যাকান্ড দেশের যুব তরুনদের মনে প্রবল জাতীয়তাবাদের সঞ্চার করে। প্রকৃতপক্ষে ১৯৩০ দশকে বি ভি দলের বিপ্লবী অভ্যুত্থান দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকের সহিংস ধারাকে তীব্র ও শক্তিশালী করে তুলেছিলো

(৪.) সুভাষ চন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনে বি ভি দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯২৮ খ্রিঃ শেষদিকে জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে বি ভি দলের ছেলেরা কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে। সুভাষচন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক পত্রিকা প্রকাশ ও পরিচালনায় এবং ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠনে হেমচন্দ্র ঘোষ ও বি ভি দলের ছেলেরা নানাভাবে সাহায্য করেছিলো। কলকাতার "হলওয়েল" স্মৃতিস্তম্ভ অপসারন আন্দোলনে হেমচন্দ্র ঘোষের বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলো। সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধানের সময় এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের সশস্ত্র অভিযানেও বি ভি দলের কর্মীরা সক্রিয় সহায়তা করেছিলেন

(১০.)  বি ভি দলের শেষ পরিনতি :- 

১৯৩১ খ্রিঃ ২৯ সেপ্টেম্বর হেমচন্দ্র ঘোষকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিলো "বেঙ্গল অর্ডিন্যান্সে"। সাত বছর দীর্ঘ কারাবাসের পর তিনি ১৯৩৮ খ্রিঃ মুক্তি লাভ করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হেমচন্দ্র ঘোষকে ব্রিটিশ পুলিশ পুনরায় গ্রেফতার করে এবং দীর্ঘ ছয় বছর কারাবাসের পর ১৯৪৬ খ্রিঃ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। যাইহোক, বিপ্লবী হেমচন্দ্রের নির্দেশেই শেষের দিকে বি ভি দলের অবশিষ্ট কর্মীগন সুভাষচন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন

গ্রন্থঋন :-

১. বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স, অগ্নিযুগের সশস্ত্র বিপ্লবীদল - মধুমন্তী সেনগুপ্ত ।
২. ভারতে সশস্ত্র বিপ্লব - ভূপেন্দ্রকিশোর রক্ষিত রায়।
৩. বাংলায় বিপ্লববাদ - নলিনীকিশোর গুহ।
৪. ভারতের জাতীয়তাবাদী বৈপ্লবিক সংগ্রাম (১৮৯৩ - ১৯৪৭) - সুপ্রকাশ রায়।
৫. ব্রিটিশ কারাগারে সুভাষচন্দ্র - প্রিয়ব্রত মুখোপাধ্যায়।
৬. জাগরন ও বিস্ফোরন, বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবের পূর্বাপর ইতিবৃত্ত (১৯০৮ - ১৯৪৭) দ্বিতীয় খণ্ড - কালীচরন ঘোষ। 
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post